চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এতিমের হক নিয়ে কেন এই কারসাজি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ আগস্ট, ২০১৯ | ৫:২৬ অপরাহ্ণ

কোরবানীর চামড়া বরাবরই গরীব-মিসকিন ও এতিমের হক। যারা আল্লাহর হুকুম পালনে গরু,মহিষ, ছাগল বা হালাল পশু কোরবানী করেন, সেই পশুর চামড়া বিক্রির টাকা স্থানীয় মাদরাসার গরীব ছাত্র, এতিম-মিসকিন বা গরীব মানুষের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে থাকেন। কিন্তু কয়েক বছর হলো সেই চামড়ার দাম পাচ্ছেন না পশু কোরবানী দাতারা। এবার কোরবানীর পশুর চামড়ার দাম এমন কমা কমেছে যে, বিক্রির জন্য ক্রেতাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। লাখ টাকার কোরবানীর গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০-৪০০ টাকায়। চামড়ার দাম না পাওয়ায় কোরবানী দাতাদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে মাটিতেই পুঁতে দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত: এ বছর গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সারা দেশে খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

জানা যায়, ঢাকা এবং এর আশপাশ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে পুরান ঢাকায় বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসছেন। তাদের মধ্যে যমন ব্যবসায়ীরা রয়েছেন, তেমনি মাদরাসা-মক্তবের লোকজনও রয়েছেন। কিন্তু, ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন তারা। সাধারণত কোরবানীর ঈদের দিন সকাল থেকেই কোরবানীর পশুর চামড়া কিনতে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা শহরের অলিগলি এবং গ্রাম গঞ্জের পাড়া-মহল্লায় চামড়া কেনার জন্য অপেক্ষা করেন। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে হুজুরদেরও দেখা যেত। পশু কোরবানীর পর সেই চামড়া কেনার জন্য টানাটানিও করেন। কিন্তু এবার সে দৃশ্য দেখা যায়নি। হাতেগোনা কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী এক থেকে দেড় লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া ৫শ’টাকার বেশি দাম বলেননি। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় চামড়া পড়ে থাকতেও দেখা গেছে।

এক্ষেত্রে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা দোষারোপ করছেন রাজধানীর পোস্তার ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে পোস্তার ব্যবসায়ীরা দোষ দিচ্ছেন ট্যানারি মালিকদের। তারা বলেন, সরকার প্রতি ফুট চামড়ার দাম ৫০ টাকা বেঁধে দিলেও তারা নানা অজুহাতে ওই দামে চামড়া কিনছেন না। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাঁচ বছর পর চামড়ার বাজার বলে আর কিছু থাকবে না। তবে পোস্তার ব্যবসায়ীরা বলছেন, হিসাব করে যারা চামড়া কিনেছেন তাদের লোকসান হবে না।

কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদশে হাইড এন্ড স্কিন মার্চেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাজী দেলোয়ার হোসনে সাংবাদিকদের জানান, এবার মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সব চামড়া কেনা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া চামড়া কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকাও ব্যবসায়ীদের কাছে নেই। এ কারণে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের লবণ দিয়ে চামড়া রাখার মতো ক্যাপাসিটি থাকলেই তাদের চামড়া কেনার পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে এবছর চামড়াখাতে ভয়াবহ পরিস্থিতি চলছে। ট্যানারি মালিকরা সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রেখেছেন। অন্যান্য ঈদের সময় ১০ থেকে ২০ শতাংশ নগদ টাকা দিলেও এবার সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন টাকা পেয়েছেন। ব্যবসায়ীরা টাকা না পেলে চামড়া কিনবেন কিভাবে। ফলে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে। যারা টাকা পেয়েছেন তারা চামড়া কিনছেন। তাই এবছর আমাদের ২৪৫ জন আড়তদারের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ৩০ জন আড়তদার চামড়া কিনতে পারছেন। তিনি আরো বলেন, এ খাত দিনদিন নিন্মমুখী হচ্ছে। এজন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালাসহ ট্যানারি মালিকদের জমি দ্রুত রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা আগে থেকেই এবারের চামড়ার বাজার খারাপ যাওয়ার কথা বলেছি। আমরা সাধারণত মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরাসরি চামড়া কিনি না। লবণ দেওয়ার পর কিনে থাকি। তিনি বলেন, চামড়ার পুরো বাজার নির্ভর করছে রপ্তানির ওপর। আগের চেয়ে রপ্তানি কমে গেছে। ফলে চামড়া সংগ্রহও আমাদের কমাতে হয়েছে। এছাড়া এবার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের অনেকেই আগের বছরের চামড়া বিক্রি করে শেষ করতে পারেনি। আর অর্থের সংকট তো আছেই। পোস্তার আড়তদার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করি। এবারের মতো দরপতন কোনোদিন দেখিনি। এবার চামড়া কম দামে কিনেও ঝুঁকিতে আছি। এখনো কোনো ট্যানারি যোগাযোগ করেনি। আশা করছি, আগামী রবিবার (১৮ আগস্ট) থেকে চামড়া নেওয়া শুরু করবেন ট্যানারি মালিকরা।

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট