চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

শকুনের বিলুপ্তির প্রভাব পড়েছে পশু-মানবদেহে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪ অক্টোবর, ২০২২ | ১২:২০ অপরাহ্ণ

দীর্ঘ দুই দশক ধরে ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথেই যাচ্ছে শকুন। বহু উপকারী এই প্রাণীটির মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ার প্রভাব বেশ ভালভাবেই পড়েছে প্রকৃতিতে। অজ্ঞতা, অবহেলা এবং শকুনের আবাসস্থল ধ্বংসের ফলে বহু উপকারী বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটির প্রভাব ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মানবদেহ ও গবাদিপশুর মধ্যে।

প্রাণীবিদগণ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, বিলুপ্তির চলমান ধারা চলতে থাকলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে শকুন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ অবস্থায় শকুন সংরক্ষণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শকুন সংরক্ষণকারীদের সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ারও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।
প্রাণীবিদদের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, শকুন কমছে বলেই পশুর এনথ্রাক্স, যক্ষ্মা, জলাতঙ্ক, খুরা রোগসহ বিভিন্ন রোগ বালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছে মানুষও।

 

শকুন বিলুপ্তির কারণ : ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারবেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন)’র তথ্য মতে, পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রফেন জাতীয় ওষুধ শকুন ধ্বংসের মূল কারণ। এ জাতীয় ওষুধ প্রয়োগকৃত পশু মারা গেলে তার মাংস খেলে সাথে সাথেই শকুন মারা যায়। তাই সরকার শকুন রক্ষার তাগিদে ইতোমধ্যেই ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রফেন জাতীয় ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া, খাদ্য সংকট, বনাঞ্চল উজাড়, শতবর্ষী বড় গাছপালা কমে যাওয়ার ফলে নিরাপদ আবাসস্থল ও প্রজনন ব্যাঘাত ঘটার ফলে শকুন কমে গেছে। উপমহাদেশের প্রায় ৭০ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ শকুন ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পূর্বে দেশে যেখানে প্রায় ৫০ হাজার শকুন ছিল। বর্তমানে এদের সংখ্যা ৩শ’র নিচে।

পশু পাখির মৃতদেহ স্বল্প সময়ে খেয়ে প্রকৃতিকে পরিষ্কার ও রোগমুক্ত রাখার জন্য শকুনের চেয়ে উপযুক্ত দ্বিতীয় কোন প্রাণী পৃথিবীতে নেই। গরু মহিষ প্রভৃতি শক্ত ও মোটা চামড়ার প্রাণী মারা গেলে সাথে সাথে চামড়া ছিড়ে লোকালয়ের কোন প্রাণী তা খেতে পারে না। একটু পঁচন ধরলেই কুকুর, ইঁদুর বা অন্য প্রাণী তা ভক্ষণ করে। কিন্তু মৃত দেহ পঁচে যাওয়ায় অনেক ধরণের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের উৎপত্তি হয়। কুকুর, ইঁদুর ও অন্য প্রাণী এসব খেয়ে বিভিন্ন ব্যকটেরিয়া ও ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং মানুষ ও প্রকৃতিকে আক্রান্ত করে।

 

জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি গঠন: ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় শকুন সংরক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৪ সালে দেশের দুটি অঞ্চলকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ১০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০২৫) বাংলাদেশ শকুন সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। যা দেশের শকুন রক্ষা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। এ কর্মপরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দিয়েই শকুন সংরক্ষণে বর্তমানে সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এক সভায় বলেন, ২০১৫ সালে শকুনের প্রজননকালে বাড়তি খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও সুন্দরবনে দুটি ফিডিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৬ সালে অসুস্থ ও আহত শকুনদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দিনাজপুরের সিংড়ায় একটি শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। শকুনের আবাসস্থলের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ ও শকুনের নিরাপদ এলাকার ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে শকুন সংরক্ষণ দল গঠন করা হয়েছে। সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ দলগুলোর সহায়তায় মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সরকারের বহুমুখী পদক্ষেপের ফলে হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গায় ২০১৪ সালে শকুনের প্রজনন সফলতা ছিল ৪৪ শতাংশ, যা ২০২০ সালে বেড়ে ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

 

উৎসাহ দিতে অর্থ সহায়তা : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন শকুন সংরক্ষণ সংক্রান্ত একাধিক সভায় বলেছেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পরিবেশ সংরক্ষণে প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী শকুনের বিকল্প নেই। তাই শকুন সংরক্ষণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শকুন সংরক্ষণকারীদের সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট