চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভয়েস অব আমেরিকায় একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী

গণতন্ত্র ছাড়া ক্ষমতায় আসার অন্যকোনো উপায় নেই: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ | ১২:০০ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েকবছর পর স্বৈরশাসকরা এসে ক্ষমতা দখল করে নেয়। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে যে গোষ্ঠী জড়িত ছিল তারা জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান বানিয়েছে। সেনাপ্রধানের পদে থেকে জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধানও ঘোষণা করেছে। এরপর এরশাদও সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতায় এসেছে। এখন আর সেই সুযোগ নেই। আমরা গণতন্ত্রের সুরক্ষায় কঠোর আইন করেছি।

 

তিনি বলেন, কেউ যদি হত্যাযজ্ঞ, ক্যু বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। প্রয়োজনে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হবে। গণতন্ত্র ব্যাতীত ক্ষমতায় আসার অন্যকোনো উপায় নেই।

 

জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকার ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়েছে।

 

ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এসময় বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, মিডিয়ার স্বাধীনতা, আগামী নির্বাচন ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন শতরূপা বড়ুয়া। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রশ্নের জবাব দেন ও নানা বিষয়ে কথা বলেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলের নানা অর্জনও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি। তবে স্বৈরাচারের পতনের পরও সেবার সুষ্ঠু নির্বাচন হলো না। প্রশাসন, সেনা, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সব দপ্তরে স্বৈরশাসকদের সময়কার লোকজন প্রভাব বিস্তার করে থাকায় নির্বাচনের ফলাফলে কোনো দলই মেজরিটি পায়নি। পরে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলো। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের যথেষ্ট সংগ্রাম করতে হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর স্বৈরশাসকরা এসে ক্ষমতা দখল করে নেয়। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে যে গোষ্ঠী জড়িত ছিল তারা জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান বানিয়েছে। সেনাপ্রধানের পদে থেকে জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধানও ঘোষণা করেছে। এরপর এরশাদও সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতায় এসেছে। এখন আর সেই সুযোগ নেই। আমরা গণতন্ত্রের সুরক্ষায় কঠোর আইন করেছি।

 

তিনি বলেন, কেউ যদি হত্যাযজ্ঞ, ক্যু বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। প্রয়োজনে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হবে। গণতন্ত্র ব্যতীত ক্ষমতায় আসার অন্য কোনো উপায় নেই।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনের পর থেকে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এ লেখা আছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। আমরা সেখানে আরেকটা ধারা যুক্ত করেছি। ক্ষমতায় থাকা নির্বাচিত কাউকে হটিয়ে যদি কেউ হত্যাযজ্ঞ, ক্যু বা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করতে চায়, তবে তার শাস্তি হবে।

 

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের হানাদাররা যেভাবে বাঙালিদের নির্যাতন করেছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, মেয়েদের ধর্ষণ করেছে, একইভাবে রোহিঙ্গারাও নির্যাতিত হয়েছে। একাত্তরে এক কোটি বাঙালি ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল শরণার্থী হয়ে। আমরা এই কষ্ট উপলব্ধি করি। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে আমরাও তাদের মানবিক কারণেই আশ্রয় দিয়েছি। আমার ছোটবোন আমাকে প্রশ্ন করেছে, তুমি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াও, কয়েক হাজার রোহিঙ্গার দায়িত্ব নিতে পারবে না? আমরা আমাদের সাধ্যমতো তাদের দায়িত্ব নিয়েছি। পরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনও এগিয়ে এসেছে।

 

তবে বাংলাদেশ কেন আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেবে না, এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। আমাদের নানা সংকট রয়েছে। রোহিঙ্গারা যখন এসেছে তখন তাদের ৪০ হাজার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ছিল। আমরা তাদের চিকিৎসা ও সন্তান জন্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এতে করে রোহিঙ্গাদের মাঝেই জনসংখ্যা আরও বেড়েছে। করোনার সময় আমরা রোহিঙ্গাদের ভ্যাকসিনও দিয়েছি। কিন্তু দিনশেষে আমাদেরও তো সীমাবদ্ধতা আছে। বনভূমি উজাড় করে তাদের বাসস্থান তৈরি করতে গিয়ে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই চাপ সামলানো আমাদের জন্য একপ্রকার বোঝা। তাই আমরা বলেছি এখন বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে এসে রোহিঙ্গাদের নিজের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। আমরা সবেমাত্র স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। করোনাকালীন সময়েও বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে। দেশেরও ধারণক্ষমতা আছে, যেটি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে যা সামলে ওঠা কঠিন। আমরা তো শুধু তাদের আশ্রয় দিইনি, বাসস্থান, খাবারসহ সকল প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করেছি। সার্বিক বিবেচনায় নতুন করে আরও রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

 

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে শতরূপা বড়ুয়া বলেন, ‘একটা অভিযোগ করা হয়ে থাকে যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর অপপ্রয়োগের ফলে বাংলাদেশে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি চালু হয়েছে যার ফলে মিডিয়াগুলো ব্যাপক সেলফ সেন্সরশিপ চর্চা করছে’- এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন আমি ক্ষমতায় আসি তখন দেশে একটিমাত্র টেলিভিশন, একটি রেডিও ও সামান্য কয়েকটি পত্রিকা ছিল। আমি সরকারে আসার পর গণমাধ্যমে বেসরকারি খাতের অন্তর্ভুক্তি উন্মুক্ত করে দিলাম। এখন দেশে ৪৪টি টেলিভিশনের অনুমোদন আছে এবং ৩২টি চালু আছে, এসব চ্যানেলে টক শো’তে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করছেন। সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে নানা কথা বলছেন তারা। সব কথা বলার পর কেউ যদি বলে যে আমাকে কথা বলতে দিলো না, তার কি জবাব আছে?’

 

শেখ হাসিনা বলেন, একসময় দেশে প্রতি রাতে কারফিউ জারি করা হতো, মানুষ রাস্তায় বের হতে পারতো না। বাংলাদেশে ১৯ বার ক্যু হয়েছে, আরও কয়েকবার ক্যু-এর চেষ্টা করা হয়েছে। সে সময় মানুষ কথা বলতে পারতো না। মত প্রকাশের অধিকার ছিল না। এখন মানুষ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে।

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট