চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

এসপিএম প্রকল্পের কমিশনিং নভেম্বরে

মিজানুর রহমান

২০ আগস্ট, ২০২২ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের জ্বালানি খাত যখন কঠিন সময় পার করছে- সুখবরটি এলো তখনই। আগামী নভেম্বরেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাচ্ছে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্প। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বাস্তবায়নাধীন বড় এই প্রকল্পটি চালু হলে বিদেশ থেকে আমদানি করা তেলবাহী জাহাজ থেকে জ্বালানি খালাসে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।

ফলে গভীর সাগরে নোঙর করা ১ লাখ মেট্রিক টন তেলবাহী বড় জাহাজ থেকে জ্বালানি তেল খালাসে সময় লাগবে মাত্র ২-৩ দিন। দেশে জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা বাড়বে ১০-১৫ দিন। কমে আসবে তেল চুরি ও সিস্টেম লস, জ্বালানি তেল পরিবহনে নৈরাজ্য এবং সাগরের পানি দূষণের হার। বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সাশ্রয় হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, বন্দরের অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্যতা কম হওয়ায় এখন তেলবাহী বড় জাহাজগুলো সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে ছোট লাইটারেজের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ খালাসে ১০-১১ দিন এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেলবাহী জাহাজ খালাসে ৪-৫ দিন সময় লাগে।

গতানুগতিক এই পদ্ধতি সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় বড় জাহাজ থেকে সরাসরি তেল খালাসের জন্য ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরে নেওয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাইপলাইনে করে জ্বালানি তেল পরিবহনে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে নগরীর পতেঙ্গার মধ্যে সংযোগ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।

মহেশখালীর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসপিএম থেকে অফশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথমে মাতারবাড়ি এলটিই পর্যন্ত এবং পরে সেখান থেকে অনশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে তেল জমা হবে। পরে ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল নগরীর ইস্টার্ন রিফাইনারিতে অবস্থিত স্টোরেজ ট্যাংকে আনা হবে।

এসপিএম প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৪ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীন সরকার। এছাড়া বিপিসি ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার ৬০১ কোটি টাকা দিচ্ছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে। প্রকল্পের অধীনে ১ সেট এসপিএম-পিএলইএম, ১টি ভাসমান ভয়া, ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন, ২ লাখ ৮৮ হাজার ঘনমিটারের ৬টি স্টোরেজ ট্যাংক, ৩টি ব্লক ভালব স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

চীনের রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কারিগরি তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে এসপিএম প্রকল্প। এতে পরামর্শক হিসেবে সহায়তা দিচ্ছে জার্মান প্রতিষ্ঠান আইএলএফ। এসপিএম চালু হলে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি জ্বালানি খাতে নৈরাজ্য কমবে বলে আশা বিপিসি’র। এখন ৪০ দিনের জ্বালানি তেল মজুতের সক্ষমতা থাকলেও এসপিএম চালুর পর তা আরো ১০-১৫ দিন বাড়বে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাগরে ভাসমান ভয়া, ১ সেট এসপিএম-পিএলইএম, ৬০ হাজার ঘনমিটারের ৩টি পরিশোধিত ও ৩৫ হাজার ঘনমিটারের ৩টি অপরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংক এবং ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ এই প্রকল্পের মূল কাজ। এরমধ্যে ৬ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ ছাড়া বাকি প্রায় সব কাজই ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সব কাজ শেষ করে আগামী নভেম্বরের দিকে প্রকল্পের কমিশনিং শুরু হবে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শরীফ হাসনাত পূর্বকোণকে বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত এসপিএম প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। ৬ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো আর কারিগরি কিছু কাজ বাকি আছে। আমরা আশা করছি- এসব কাজ শেষ করে আগামী নভেম্বরের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি চালু করতে পারবো। এসপিএম প্রকল্প চালু হলে দেশে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

 

পূর্বকোণ/আর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট