চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ভূমিকা রাখবে ই-কমার্স

অনলাইন ডেস্ক

১০ আগস্ট, ২০২২ | ২:৫৫ অপরাহ্ণ

সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নারীরাও সমাজ ও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। জনশুমারির সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি নারী, তাই নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া দেশের উন্নয়নের কথা এখন আর কল্পনাও করা যায় না। কিন্তু ব্যবসা বা উদ্যোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা এখনও পিছিয়ে আছেন। আর এর প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর।

আর্থিক বিভিন্ন খাতে নারীদের অংশগ্রহণের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৬০ লাখ গ্রামীণ উদ্যোগের মধ্যে মাত্র ৭.৫ শতাংশ পরিচালনা করেন নারীরা। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ উদ্যোগে ওই নারী-উদ্যোক্তা ছাড়া আর কোনো কর্মী নেই। এসব উদ্যোগের বেশিরভাগই আবার কাপড়, সেলাই এবং বাঁশ-বেত শিল্প সংশ্লিষ্ট। দেশের সবচেয়ে বেশি নারী-মালিকানাধীন উদ্যোগ গড়ে উঠেছে বান্দরবানে – ২১ শতাংশ এবং এরপর খাগড়াছড়িতে – ১৭ শতাংশ। নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে একটি দেশের উন্নয়নে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের কথা। দেশগুলোতে ১৯৯০ সালের দিকেই ৫০ ভাগ উদ্যোগের মালিকানা ছিলো নারীদের হাতে।

দেশের অর্থনীতির চাকা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিকল্প নেই। বাংলাদেশের নারীরা কৃষি, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়া করা, তৈরি পোশাক শিল্প, সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে অনেকদূর এগিয়েছে। কিন্তু নিজস্ব ব্যবসা বা উদ্যোগের ক্ষেত্রে তাদের আরও অনেক পথ যাওয়া বাকি। বিশেষ করে, ব্যবসা ও উদ্যোগের মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন যেভাবে ঘটা সম্ভব, সেভাবে আর কোনো খাতেই সম্ভব নয়। তাই, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে নারীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

সম্প্রতি, বাংলাদেশের নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ই-কমার্স খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ই-কমার্স খাতের সুবিধা হচ্ছে- দেশের যে কোনো জায়গা থেকে, যে কোনো পণ্য বা সেবা নিয়ে, যে কোনো পরিমাণ মূলধন নিয়ে, ব্যবসা বা উদ্যোগ শুরু করা যায়। নানান প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ই-কমার্স খাতে বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে গেছে, এই অংশগ্রহণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, সংগঠনটির ২৭ শতাংশই নারী। এছাড়াও, মেটা’র দেয়া এক তথ্যে দেখা গেছে, ফেসবুক-ভিত্তিক ব্যবসার ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ এবং ইনস্টাগ্রাম-ভিত্তিক ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি প্রায় ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর।

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে পৃথিবী এবং বাংলাদেশ খুব দ্রুত ডিজিটাল হওয়ার দিকে এগিয়ে গেছে। কিন্তু ডিজিটাল হওয়ার সুফল ভোগ করতে হলে আমাদের অনলাইন-কেন্দ্রিক কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে। ডিজিটাল বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এখন সারা বিশ্বের ব্যবসা সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমাদেরও এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলে চলবে না।  

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নারীদের এসব ই-কমার্স উদ্যোগ মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানোর একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে দারাজের মতো অনলাইন মার্কেটপ্লসে। নারীর ক্ষমতায়ন, প্রশিক্ষণ-পুরস্কার, ব্যবসার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমতা বৃদ্ধি করা এবং ই-কমার্স খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তারা বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যেমন: নারী দিবস উপলক্ষে ১১ জন নারী উদ্যোক্তার পণ্য সবার সামনে তুলে ধরতে একটি আয়োজন সম্পন্ন করে দারাজ। আবার নারীর ক্ষমতায়নকে উদযাপন করতে এ বছর ৯ জন নারীকে সম্মাননা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এই অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোগকে আরও বেশি মানুষের কাছে নিয়ে যেতে পারবেন নারীরা।

ই-কমার্স খাত বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে একটি। আর এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি ও সমাজসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। ব্যবসা বা উদ্যোগে নারীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ঘটলে বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া আরও ত্বরাণ্বিত হবে, আমরাও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবো স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে। 

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট