চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আত্মস্বীকৃত ‘আলবদর কমান্ডার’ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আমিনুল গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক

৩ জুলাই, ২০২২ | ৬:০৯ অপরাহ্ণ

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। শনিবার (২ জুলাই) রাতে রাজধানীর কলাবাগান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৭টি অভিযোগ করা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ মে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।

তিনি আরও বলেন, মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর আমিনুল হক রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর গতকাল রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, আমিনুল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। তিনি ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নকালে পাকিস্তান ইসলামি ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকায় ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন করেন। কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হবিগঞ্জের লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চণ্ডীপুর গ্রামে এবং কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট ও নির্যাতন করেন। এ ছাড়া স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমিনুল ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে তিনটি মামলা হয়। ওইসব মামলায় তার ৪০ বছর সাজা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে ১৯৮১ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৯৭ সালে তিনি এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন।

র‍্যাবের মুখপাত্র বলেন, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হলে আমিনুল আত্মগোপনে চলে যান। তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেন। তিনি সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার পরিচয় প্রকাশ পেতে পারে, এমন জনসমাগম এড়িয়ে চলতেন।

তিনি আরও বলেন, আমিনুল ‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ নামের দুটি বই প্রকাশ করে। এসব বইয়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের দিনসহ বিভিন্ন বিষয় নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেন। বইয়ে নিজেকে তিনি ‘আলবদর কমান্ডার’ হিসেবে দাবি করেন। ২০১৪ সালে তার প্রকাশিত ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ বইয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশ করায় সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে। এ ঘটনায় রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

কমান্ডার আল মঈন বলেন, আমিনুলের দুই মেয়ে। তারা সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তাদের ছাড়া তিনি সচরাচর কারও সঙ্গে কথাও বলতেন না। এ ছাড়া বাংলাদেশে পাকিস্তানি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণকালে পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করতে একাধিকবার পাকিস্তানে গেছেন।

 

পূর্বকোণ/এস/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট