চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয় সীমাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ জুন, ২০২২ | ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ

মাহবুবুল আলম
সভাপতি, দি চিটাগাং চেম্বার
অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি

 

জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) বাজেট উপস্থাপনের পর দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাজেটে কর্পোরেট করহার হ্রাস করায় বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে; কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং রপ্তানি সম্প্রসারিত হবে। তবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সেই অনুপাতে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়-সীমাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
চেম্বার সভাপতি বলেন, বাজেটে মোট ব্যয় ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, মোট আয় ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয় ৪ লক্ষ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে যা সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ঘাটতি মোকাবেলায় ক্রমবর্ধমান ঋণের ক্ষেত্রে সরকারের সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করি।
তিনি আরো বলেন, বাজেটে পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার, পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এমন কোম্পানির কর এবং এক ব্যক্তি কোম্পনির কর কমানো হয়েছে যা বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। ট্রেডিং পণ্য সরবরাহের উপর উৎসে কর কমানো ইতিবাচক। ম্যানুফ্যাকচারারদের নিকট কাঁচামাল সরবরাহে উৎস কর কমানোর কারণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। মোট কর্মচারীর ১০% বা ২৫ জনের অধিক প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হলে প্রদেয় করের ৫% রেয়াত দেয়া হবে যা প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।
দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ চলাচল উৎসাহিত করতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত করমুক্ত করা হয়েছে যা এই সেক্টরে নতুন বিনিয়োগে আশা যোগাবে। এছাড়া নির্ধারিত তারিখে মূসক বা টার্নওভার কর দাখিলপত্র পেশ করতে না পারার জরিমানা ১০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা এবং ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে রাজস্বের সমপরিমাণের অর্ধেক জরিমানা প্রস্তাব করা হয়েছে যা ব্যবসাবান্ধব। আইসিটি খাতে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের টার্নওভার করহার কমানোয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে।
স্টিলজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত এইচ আর কয়েল এবং অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে করহার কমানোয় এবং স্বর্ণ আমদানিতে অগ্রিম কর বিলোপ এসব পণ্যের মূল্য হ্রাস করবে। তবে ব্যাংক সুদের উৎসে করহার কোম্পানি করদাতার জন্য ১০% থেকে ২০% করা এবং রপ্তানিকৃত পণ্যদ্রব্যের উৎসে কর ০.৫% এর পরিবর্তে ১% করা হয়েছে যা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। তৈরিপোশাক শিল্পের মত অন্যান্য সকল রপ্তানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রেও একই হারে কর ধার্য্য করার ফলে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরবরাহের বিপরীতে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা এবং মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন করলেও রেয়াত প্রদান ব্যবসায়িক কর্মকান্ড সহজ করবে। ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার আমদানিতে ১০% এবং ল্যাপটপ ও কম্পিউটারে ব্যবহৃত টোনার, প্রিন্টার ইত্যাদি আমদানিতে ১৫% শুল্ক প্রত্যাহার করার প্রস্তাব করছি। দেশে ২৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটর গাড়ি উৎপাদনে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেশীয় শিল্পকে উৎসাহিত করবে। পাইকারি ব্যবসায় কতিপয় ক্ষেত্রে ভ্যাট কমানোয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। এসব উদ্যোগে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে উল্লেখিত পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করি। আশা করি, এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হলে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

পূর্বকোণ/এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট