চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আমেরিকায় বাড়ি গাড়ি বিক্রি কানাডায় পাড়ি সিনহার!

রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

২৭ জুলাই, ২০১৯ | ২:১১ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন দীর্ঘদিন ঝুলে থাকায় সেখানকার বাড়ি, গাড়ি ও অন্যান্য সম্পত্তি বিক্রি করে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন আলোচিত সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। কানাডাতেও তার দুটি বাড়ি রয়েছে। সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন তার স্ত্রী সুষমা সিনহাও। গত ৪ জুলাই ফোর্ট এরি সীমান্ত হয়ে সিনহা কানাডায় প্রবেশ করেন এবং সেখানে তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জমা দেন বলে কানাডার ‘দি স্টার’ জানিয়েছে। এস কে সিনহার সঙ্গে তার স্ত্রী সুষমা সিনহাও কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এর আগে গতবছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছিলেন এস কে সিনহা। নিউ জার্সিতে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে কেনা একটি বাড়িতে তিনি থাকছিলেন।
কানাডায় করা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনে বাংলাদেশে এই সাবেক প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের প্রসঙ্গ টেনেছেন বলে জানিয়েছে দি স্টার। সিনহা সেখানে দাবি করেছেন, ২০১৭ সালের ২ জুলাই এক বৈঠকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে মামলায় ‘সরকারের পক্ষে’ রায় দিতে বলা হয়েছিল তাকে। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। এ বিষয়ে দি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসকে সিনহা বলেন, আমাকে টার্গেট করা হয়েছে কারণ বিচারক হিসেবে আমি ছিলাম একজন অ্যাকটিভিস্ট। আমি যেসব রায় দিয়েছি তাতে আমলাতন্ত্র, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, এমনকি সন্ত্রাসীরাও ক্ষিপ্ত হয়েছে। আমি এখন নিজের দেশেই অবাঞ্ছিত। এস কে সিনহার অভিযোগের বিষয়ে কানাডায় বাংলাদেশ হাই কমিশনারের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল দি স্টার। হাইকমিশনার মিজানুর রহমান তাদের বলেছেন, দেশ ছাড়ার পর থেকেই তিনি (সিনহা) সরকারের সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন, যেগুলো সঠিক নয়। তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা বা হুমকি নেই। এসব কথা তিনি বলছেন শুধু তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের দাবি পোক্ত করার জন্য।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বিচারপতি সিনহা তেমন একটা ইতিবাচক সাড়া পাননি। তরুণ এক ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং বিচারপতি সিনহার বক্তব্য ‘সন্তোষজনক নয়’ জানিয়ে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য রিফিউজিবিষয়ক আদালতে পাঠিয়ে দেন। এর পর আর তার আবেদনের কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরই মধ্যে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি কানাডাকে পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যুক্তরাষ্ট্রে শুধু এসকে সিনহা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। কানাডায় তার সঙ্গে তারও স্ত্রীও আবেদন করেছেন।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি হিসেবে এবং তাকে ঘিরে ঘটনা প্রবাহের কারণে কানাডায় আবেদন করার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যাপারে ‘টেবল ডিসিশন’ হয়ে যাবে, অনেকে এমন ধারণা করলেও বিচারপতি সিনহার ক্ষেত্রে সেটি ঘটেনি। এক মাস পর শুনানির তারিখ দেওয়া হয়েছে তাকে। কানাডার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তৃতীয় নিরাপদ কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করা হলে তিনি কানাডায় প্রবেশের অনুপযুক্ত হবেন মর্মে কানাডায় একটি নতুন আইন হয়েছে। সেই আইনের বিধিতে বিচারপতি সিনহা রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য নন। এরপরও তার আবেদনপত্র গ্রহণ করে শুনানির সুযোগ দেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিচারপতির সিনহার ঘনিষ্ঠজনরা। টরেন্টোয় বসবাস শুরু করলেও বিচারপতি সিনহা খানিকটা নিরিবিলিই থাকছেন। এর মধ্যে তিনি স্থানীয় একটি মন্দিরে গেছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন চলাকালে বিশেষভাবে আলোচনায় আসা একজন ব্যবসায়ী আত্মীয়ের বাসায় দাওয়াতেও গেছেন। ওই দাওয়াতে নিউইয়র্ক থেকে তার কয়েকজন বন্ধুও যোগ দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
বাংলাদেশের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এসকে সিনহার সঙ্গে শাসক দলের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। ওই রায়ে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি অপসারণে জাতীয় সংসদের ক্ষমতা বাতিল করা হয়। পরে, চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গিয়ে ২০১৭ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি সেখান থেকে পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। এরপর তিনি অস্ট্রেলিয়া হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পারি জমান।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট