চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মহামারি রূপে আবির্ভূত দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

২৬ জুলাই, ২০১৯ | ২:১৩ পূর্বাহ্ণ

ঢাকায় মহামরি আকারে দেখা দিয়েছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। এবারের ডেঙ্গু অন্যবারের তুলনায় ভয়ঙ্কর। গতকাল হাইকোর্টে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে শুনানীতে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে এমন শব্দও উল্লেখ করেন এক বিচারপতি। গত কয়েকদিনে হবিগঞ্জের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ অন্তত ৩৫ জন মারা গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসেবে সাড়ে আট হাজার বলা হলেও বেসরকারি সংস্থার মতে দশ হাজার ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কেননা, যে হারে রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে পর্যাপ্ত শয্যা হাসপাতালগুলোতে না থাকায় এই দুরাবস্থা দেখা দিয়েছে।
গতকাল বৃস্পতিবার সকালে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৈনিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৫৩৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন আরও ১১ জন। এতে গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টার হিসেব তুলে ধরা হয়। তাছাড়া, তার আগের দিন বুধবার পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে আট হাজার ৫৬৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় আট হাজার ৩৮৬ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের মত। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে দুই হাজার ১৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে সরকারের বিবরণীতে স্বীকার করা হয়। এরমধ্যে, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ছয় হাজার ৪৯৯ জন।
ঢাকার বাইরেও রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত মঙ্গলবার ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৭ জন। বুধবার তা বেড়ে ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামে ছিল আটজন। তা বেড়ে ৭১ জনে দাঁড়িয়েছে। খুলনায় ৪১ থেকে বেড়ে ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
জ্বর হলেই মানুষ ছুটছেন হাসপাতালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বেশির ভাগ রোগীরই ধরা পড়ছে ডেঙ্গু। যাদের অবস্থা মারাত্মক নয়, তাদের চিকিৎসাপত্র দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়িতে। আর যাদের অবস্থা জটিল, তাদের ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে, হাসাপাতালে ভর্তি বা শয্যার অভাব নিয়ে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা মেডিসিন বিভাগের আওতায় থাকায় দেখা দিয়েছে শয্যা/বেডের সঙ্কট। কারণ, হাসপাতালগুলোতে ওই বিভাগের নির্ধারিত বেড ভরে গেছে আগেই। এর মধ্যেই প্রতিদিন প্রতি ঘণ্টায় বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। বেডে জায়গা না হলেও চিকিৎসার স্বার্থে রাখা হচ্ছে মেঝেতে। আবার কোনও কোনও হাসপাতাল থেকে রোগীরা ছুটছেন অন্য হাসপাতালে বেডের খোঁজে। বেসরকারি হাসপাতালেও বেড বা শয্যার সঙ্কটে ত্রাহি অবস্থা চলছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি আসলেই সামাল দেওয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। হাসপাতালে রোগী রাখার জায়গা নেই। বেড বাড়ালেই তো আর হয় না। চিকিৎসাও তো দিতে হবে। আমরা এখন সচেতনতায় জোর দিচ্ছি। মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আর সব হাসপাতালের পরিচালকদের বলা হয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতার সঙ্গে রোগীর অবস্থা যাচাই করতে। যেসব রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার উপযোগী তাদের যেন হাসপাতালে না রাখা হয়’। তিনি বলেন, ‘সামনে ডেঙ্গুর আরও প্রকোপের ঝুঁকি রয়েছে। এখনই যদি এ অবস্থা হয় তবে তখন পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে উঠবে’।
এদিকে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি এ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু চেঞ্জিং ট্রেন্ডস এন্ড ম্যানেজমেন্ট’ আপডেট শীর্ষক এক সেমিনারে এডিস মশার প্রজনন ক্ষমতাকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করেন- ‘বর্তমানে ডেঙ্গু (এডিস) মশা অনেক হেলদি। তাদের প্রজনন ক্ষমতাও বেশি। রোহিঙ্গাদের মতই তাদের প্রজনন ক্ষমতা। যেভাবে রোহিঙ্গা পপুলেশন আমাদের দেশে এসে বেড়ে চলেছে, সেভাবেই এই মসকিউটো পপুলেশনও বেড়ে চলেছে। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি’। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু জরে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অনেক উন্নত দেশও ডেঙ্গু হ্যান্ডেল করতে পারছে না। যা বাংলাদেশের চিকিৎসকরা পারছে। যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তারা যেন ভাল চিকিৎসা পায়। মৃত্যুর কোলে ঢলে না পরে সেজন্য এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট