চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৯৯ শতাংশই ঢাকা ফেরত

ইমাম হোসাইন রাজু

২৪ জুলাই, ২০১৯ | ২:১৪ পূর্বাহ্ণ

নতুন করে শনাক্ত আরও ৮
জনসহ আক্রান্ত ৩২
চলতি মাসে আক্রান্ত ২৯

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৯৯ শতাংশই ঢাকা থেকে ফিরে এসে আক্রান্ত হয়েছে। আর বাকী এক শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে নিজ এলাকা থেকে। সে তুলনায় চট্টগ্রামের এখনো পুরোপুরো ভাবে ডেঙ্গুর জায়গায় ক্রমেই দুর্বল। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাঁর বেশিরভাগই সুস্থ রয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ঢাকার মতো এখনো মরণব্যাধী হয়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রমণ করতে পরেনি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, সবাই নরমাল ডেঙ্গু। এরপরও সকলকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামে নতুন করে আরও আটজন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান মেলেছে। এর মধ্যে বেসরকারি মেট্টোপলিটন হাসপাতালে তিনজন, পার্কভিউ হাসপাতালে তিনজন, ন্যাশনাল হাসপাতালে একজন ও ইউএসটিসিতে একজন ভর্তি রয়েছে। চলতি মাসে আরও ২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এর আগে ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র তিনজন। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৩২জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নিশ্চিত করেছে। এর বাইরেও নগরীর বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক এবং ডাক্তারের চেম্বারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। চলতি মাসেই চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে এসব রোগীদের মধ্যে মাত্র একজন রোগীই শুধুমাত্র চট্টগ্রামের নিজ এলাকায় থেকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে যতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল তারমধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন এখনো চিকিৎসাধীন থাকলেও বাকী সবাই সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এসব রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোন ঝুঁকিপূর্ণ রোগী পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। তাদের সবাই কোন না কোন কাজে ৫ থেকে দশদিন পর্যন্ত ঢাকায় ছিলেন। এর পর ফিরে এসে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালের ১৩ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া কর্ণফুলী এলাকার মো. সাগর অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় ছিলেন প্রায় পাঁচদিন। ফিরে আসার দ্বিতীয় দিনেই হঠাৎ শরীরে জ¦র আসে তার। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে সোমবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। একই ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া নগরীর চকবাজার এলাকার সুরেশকুরী। তিনি ঢাকায় গিয়েছিলেন বেড়াতে। ফিরে এসে শরীরে জ¦র এবং তার সাথে সারা শরীরে ব্যাথা অনুভব করায় চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তবে তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার পূর্বকোণকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ওয়ার্ডে যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের সবাই শঙ্কামুক্ত। এর আগেও অনেকেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন। এখানে যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের সবাই ঢাকা থেকে ফিরে এসে আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার মতো রোগী পাওয়া যায়নি’।
এদিকে, মরণব্যাধী এ রোগের প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতা ও সচেতনতামূলক ব্যানার টাঙানোর জন্য সকল চিকিৎসাকেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। পাশাপাশি সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সচেতনমূলক লিফলেট বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী পূর্বকোণকে বলেন, ‘আমাদের হাতে আসে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই হচ্ছে ঢাকা থেকে ফিরে আসা। তারা কোন না কোন কাজে ঢাকায় অবস্থানের পর ফিরে এসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। শুধুমাত্র একজনকে আমরা পেয়েছি, যিনি নিজ এলাকা থেকেই আক্রান্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তাঁর পরিবারের অন্য কেউ ঢাকায় গিয়েছে, আর তার সাথেই এ রোগ ছড়িয়েছে’।
তাই এ মুহূর্তে পরামর্শ থাকবে, যেহেতু ঢাকায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, তাই প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন সেখানে বেড়াতে না যায়। গেলেও সর্বাত্মক সর্তক থাকতে হবে। যারা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, সবাই নরমাল ডেঙ্গু। এখন পর্যন্ত গতবারের তুলনায় অনেকটা কন্ট্রোলে রয়েছে বলেও জানান তিনি’।
এদিকে ডেঙ্গু বিষয়ে কাউকে আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম পূর্বকোণকে বলেন, ‘কারও যদি সাধারণ জ¦র হয়, সঙ্গে সঙ্গে যেন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়। জ¦র হলে আতংকিত হওয়া কিছুই নেই। যদি শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গ ব্যাথা অনুভব করলে সাথে সাথে রক্ত পরীক্ষা করানো পরামর্শ এ চিকিৎসকের।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট