চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

গ্যাসের সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড়

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৮ জানুয়ারি, ২০২২ | ১২:৩৯ অপরাহ্ণ

গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জমা দেয় পিডিবি। তবে পিডিবির প্রস্তাবে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় প্রস্তাব ফেরত পাঠিয়েছে বিইআরসি।

পিডিবির দাবি, দেশে চলমান গ্যাস সংকটে দীর্ঘদিন ধরে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে ব্যয়বহুল জ্বালানি তেলের পাশাপাশি কয়লার ব্যবহার। সবমিলিয়ে গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে রেকর্ড লোকসান হয়েছে। এ বছরও তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি স্থানীয় গ্যাসের সরবরাহ আরও কমার আশংকা অনেক বেশি।

সরকারের নির্দেশে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে হয়। ফলে প্রতিবছর একটা ঘাটতি থেকেই যায়। জ¦ালানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর ত্রিশ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি হবে- এমন হিসাব কষে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। না হয় ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারকে বড় অংকের ভর্তুকি বাড়াতে হবে।

তবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি-সংক্রান্ত বিষয়টি নিষ্পত্তির আগে এখনই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরুর কথা ভাবছে না বিইআরসি। গ্যাসের মূল্যহারের বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল্যহার নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিইআরসির কর্মকর্তারা। কারণ জ্বালানির মূল্যহারের ওপর নির্ভর করছে বিদ্যুতের মূল্যহার। ফলে একই সঙ্গে দুটি বিষয়ের কোনো প্রাসঙ্গিকতা দেখছে না কমিশন। বিইআরসিতে পিডিবির দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়, গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ফার্নেস অয়েল আমদানি বাড়াতে হয়েছে। অথচ গত জুনে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে শুল্ক কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বাবদ খরচ ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এতে গত অর্থবছর শুধু জ্বালানি বাবদ ব্যয় ৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩ টাকা ১৬ পয়সা জ¦ালানি খরচ হয়। আগের অর্থবছর ২০১৯-২০ এ ব্যয় ছিল প্রতি ইউনিটে ২ টাকা ১৩ পয়সা।

এদিকে গত জুলাইয়ে কয়লার ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কয়লার দাম বাড়ছে। সব ধরনের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং গ্যাস সরবরাহ আরও কমে যাওয়ায় চলতি ২০২২ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিট জ্বালানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৪ টাকা ২৪ পয়সা। জ¦ালানি বাবদ মোট ব্যয় বাড়বে ১২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালের তুলনায় তা তিন ভাগের এক ভাগের চেয়ে বেশি হবে।

চলতি বছর বিতরণকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলোর কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির সম্ভাব্য পরিমাণ দাঁড়াবে আট হাজার ৮৯৯ কোটি ৩০ লাখ কিলোওয়াট। গ্যাসের দাম না বাড়লে বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির ব্যয় হবে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। তবে বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির আয় হবে ৪৩ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৫৮ পয়সায় কিনে পাঁচ টাকা আট পয়সায় বিক্রি করবে পিডিবি।

বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির ফলে চলতি বছর পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে বিদ্যুতের পাইকারি দাম আট টাকা ৫৮ পয়সা নির্ধারণের আবেদন করেছে পিডিবি। অর্থাৎ বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রতি কিলোওয়াটে সাড়ে তিন টাকা বা ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। পাইকারি দাম বৃদ্ধির হারের অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়াতে হবে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিইআরসি, যা ওই বছর ১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর খুচরা বিদ্যুতের দাম ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হলেও পাইকারি মূল্য বাড়ানো হয়নি। বর্ধিত মূল্য ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট