চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ঐক্যফ্রন্ট ছাড়তে চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

২৩ জুলাই, ২০১৯ | ২:০৮ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে সরে যেতে চায় বিএনপি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নয়, কৌশলে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে দলের লাভ-ক্ষতি নিয়ে সম্প্রতি বিএনপির নেতারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। বিশ্লেষণের পর বিএনপির সিদ্ধান্ত হল, বিএনপির তৈরি করা মঞ্চে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ডেকে এনে বক্তব্যের সুযোগ দিয়ে পক্ষান্তরে তাদের কোন লাভ হচ্ছে না। বরং ঐক্যফ্রন্টের শরীক দলের নেতাদেরই বেশি লাভ হচ্ছে। তাই দলটি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে একসাথে নিয়ে আর পথ চলতে চায় না। তবে ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির ঘোষণা করবে না দলটি। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ১০ জুন আ স ম আবদুর রবের উত্তরার বাসায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে অসুস্থতার কারণে উপস্থিত ছিলেন না ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন। সূত্রমতে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বর্তমানে অসুস্থ। এই অসুস্থতাকে রাজনৈতিক কৌশল মনে করছে বিএনপি। এই দুই নেতার অসুস্থতা ঐক্যফ্রন্টকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্তির ঘোষণা না দিলেও বিএনপি কৌশলগতভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে এড়িয়ে চলবে। এর অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানায়নি বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, একাদশ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সমর্থন পেতে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবীদের নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনের পরে বুঝতে পেরেছে যে, ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে কোন লাভ হয়নি। বরং দলের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের পরে বিএনপির তৈরী করা মঞ্চে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা তাদের বিপক্ষে বক্তব্যে দিচ্ছেন। এসব কথা মাথায় নিয়ে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে তারা আর সামনে এগুবে না। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্তিও করবে না। কারণ বিএনপি যদি এক্যফ্রন্টের কর্মসূচিগুলোতে না যায় তাহলে এমনিই ফ্রন্ট থাকবে না। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দির সরকার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তো এখনো ভাঙ্গেনি। আর কৌশলগতও কিছু নাই। কারণ বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আর আমরা কিছু না করলে তো ওদের দিয়ে কিছু সম্ভব না। সুতরাং এর একটি অন্যরকম রোল হবে। এবিষয়ে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এবিষয়ে আমি কিছু জানি না। সুব্রত চৌধুরীকে জিজ্ঞাস করুন। উনি বলতে পারবেন।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর কথায়, ঐক্যফ্রন্ট আছে। আর আমরা সবাই আমাদের দল গোছাতে ব্যস্ত আছি। এছাড়া ড. কামাল হোসেনও অসুস্থ্ ছিলেন এবং দেশের পরিস্থিতি ভালো না থাকার কারণে কোন কার্যছক্রম নেই। তবে কামাল হোসেন একটু সুস্থ্ হয়ে উঠলেই আমার কার্যরক্রম শুরু হবে। তবে, ড. কামাল হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে করা হয়েছিলো। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি সামনে রেখে সারাদেশে জনগণের ঐক্য দরকার। এখন এটাকে আমি বেশী গুরুত্ব দিতে চাই। আর ঐক্যফ্রন্ট তো একটা মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়। সেই লক্ষ্য তো আমাদের থাকবে। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও তো থাকবে। তবে মূল চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আরো গুরুত্বভাবে আমাদের ঐক্য করতে হবে। এছাড়া নির্বাচনের জন্য তো কিছু দলকে নিয়ে ঐক্য করা হয়। আর আমি বলেছি, জাতীয় ঐক্য- সেটা সবাইকে নিয়ে করতে হবে।
এদিকে গত ৮ জুলাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন কর্মকা- নেই বলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ঐক্যফ্রন্ট থেকে বের হয়ে গিয়েছে। এবিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন কর্মকা- নেই, সেজন্য সেখান থেকে আমরা চলে এসেছি। আর আমরা ঐক্যফ্রন্টকে মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দিয়েছি।
বলা বাহুল্য, ২০১৮ সালে ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এই ফ্রন্টের ঘোষণায় ছিল, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্য সরকার গঠন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়েছে। নির্বাচনে মাত্র ৮টি আসনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জয়ী হয়।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট