চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ছেলেধরা সন্দেহে ৫ জেলায় ১৫ জনকে গণপিটুনি

২৩ জুলাই, ২০১৯ | ২:০৭ পূর্বাহ্ণ

ছেলেধরা সন্দেহে অন্তত পাঁচ জেলায় ১৫ জন গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন, কথিত এনজিওকর্মী, অজ্ঞান পার্টির সদস্য ও সাধারণ লোকজন। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, ঢাকার সাভার, রাজশাহী ও নীলফামারীতে তারা এই হিংস্রতার শিকার হন। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ছেলেধরা সন্দেহে তিনজন গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। ওই তিনজন ছাগল কিনতে সোমবার দুপুরে উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। আহতরা হলেন- জনি, সোহেল ও হৃদয়। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। বাঁশখালী থানার রামদাস মুন্সীর হাট তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মামুন হাসান বলেন, “দুপুরে এ তিন যুবক ইলশা গ্রামে ছাগল কিনতে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনান্থলে গিয়ে তিনজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।” আহতরা ছাগল কিনতে ইলশা গ্রামে গিয়েছিল বলে পুলিশ জানালেও তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেনি।
পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলে সম্প্রতি ফেইসবুকে গুজব ছড়ানোর পর ছেলে ধরা সন্দেহে হয়, যাতে বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল সরকার। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার নেত্রকোণা শহরে এক যুবকের ব্যাগ তল্লাশি করে ‘শিশুর মাথা’ পাওয়ার পর তাকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। তারপর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে দলবেঁধে আক্রমণের ঘটনা ঘটতে থাকে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে পিটুনি দিয়েছে স্থানীয়রা।
দৌলতপুর থানার ওসি আজম খান জানান, উপজেলার শিতলাইপাড়া গ্রামে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহত হাসিনা খাতুন (৬০) বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। তাকে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ওই নারীর মেয়ের জামাই রনি বলেন, তার শাশুড়ি মানসিক ভারসাম্যহীন। গত রোজা ঈদের আগে শ্বাশুড়ি তার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। “তিনি বাড়ি থেকে বের হলে রাস্তা-ঘাট ঠিক চিনতে পারে না। আজ সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে এসে পথ ভুলে যায়। এরপর স্থানীয়রা ছেলে ধরা সন্দেহে তাকে মারধর করেছে।”
ওসি বলেন, স্থানীয়রা ছেলে ধরা সন্দেহে এক নারীকে পিটিয়ে আহত করেছে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকার সাভারে ছেলেধরা সন্দেহে ভাড়াটিয়া দম্পত্তিকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আটক করে। আটককৃতরা হলেন রনি মিয়া (২৩) ও তার স্ত্রী (২০)। তাদের বাড়ি রাজবাড়ি জেলার গোদাগাড়ী থানার সাহেব বাজার গ্রামে। তারা সাভার পৌর এলাকার রাজাবাড়ি মহল্লার আমিনুর রহমানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সাভার পৌর এলাকার রাজাবাড়ি মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে সাভার মডেল থানার এসআই নাজমুল হক বলেন, ছেলেধরা সন্দেহে রাজাবাড়ি মহল্লার বাসিন্দারা এক দম্পত্তিকে মারধর করে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে আহত অবস্থায় ওই দম্পত্তিকে উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আটক করা হয়। তিনি বলেন, আটক দম্পতি দুপুরে প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া রুমি খাতুনের ঘরে ঢুকে তার মুখ চেপে ধরে বলে অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ। তখন রুমি চিৎিকার দিলে ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। “জিজ্ঞাসাবাদে এই দম্পতি পুলিশকে জানিয়েছে, চলতি মাসেই আমিনুর রহমানের বাড়ির কক্ষটি ভাড়া নিয়েছেন তারা। কিছুদিন ভাড়া থেকে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে সুসর্ম্পক তৈরি করে তাদের অজ্ঞান করে ঘরের সব মালপত্র নিয়ে চম্পট দেওয়াই তাদের মূল কাজ।” এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।
রাজশাহীর চারঘাটে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে আহত হয়েছেন পাঁচ এনজিওকর্মী। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার রাওথা এলাকা থেকে পুলিশ ওই পাঁচজনকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেয়। আটককৃতরা নিজেদের আদ-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার নামের একটি এনজিওর কর্মী দাবি করেছেন বলে চারঘাট থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন। ওসি বলেন, চারঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাওথা এলাকায় অপরিচিত পাঁচ ব্যক্তি সমিতির নাম করে সদস্য সংগ্রহ করছিলেন। এ সময় সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজন তাদের সমিতির নাম জানতে চেয়ে কাগজপত্র ও পরিচয়পত্র দেখতে চায়। তবে তারা কোনো কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে ছেলেধরা সন্দেহ পাঁচজনকে ধরে পিটুনি দিয়ে আটকে রেখে থানায় খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আটককৃতরা হলেন গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর উপজেলার ঝাকরপুর গ্রামের মসলেম উদ্দিনের ছেলে হাফিজুর রহমান (৪২), একই এলাকার আখতারুজ্জামানের ছেলে আবুল হোসেন (৪০), একই এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে রেজাউল করিম (৩৮), ঢাকা দক্ষিণের লালবাগ থানার আব্দুল মজিদের ছেলে কাইয়ুম আলী (৩৯) ও একই এলাকার আবুল কালাম (৩৬)।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে ছেলেধরা সন্দেহে মানষিক ভারসাম্যহীন চারজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। রবিবার রাত ও সোমবার দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় এসব মানষিক ভারসাম্যহীন নারী-পুরুষ উদ্দেশ্যহীন ও সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফোরা করায় তাদেও আটক কওে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। আটকরা হলেন দিনাজপুরের আব্দুল মালেক (৫০), গাইবান্ধার আব্দুল গফুর (৫৬), নীলফামারীর হেলাল হোসেন (৪০) ও বরিশালের মেরিয়ান (৪০)।
সৈয়দপুর থানার ওসি মো. শাহজাহান পাশা বলেন, আটককৃতরা সবাই মানষিক ভারসাম্যহীন। তারা সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা সঠিক উত্তর দিতে না পারায় স্থানীয়রা তাদের পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে চিকিৎসা দেয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। ওসি বলেন, যারা এমন গুজবে সম্পৃক্ত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট