চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২২ | ১১:২৬ অপরাহ্ণ

মাইলেজ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ৩০ জানুয়ারির মধ্যে নিরসনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এরমধ্যে মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল না করলে ৩১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।  দাবি আদায়ে আজ (মঙ্গলবার) থেকে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বেশি ডিউটি না করার কথাও জানিয়েছেন তারা।

ট্রেন পরিচালনায় মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বে নিয়োজিত রানিং স্টাফরা অতিরিক্ত ডিউটি পালন না করলে ট্রেনের শিডিউলে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে। সংশ্লিষ্টরা জানান- প্রতিষ্ঠার পর থেকেই রেলওয়ের বেতন-ভাতা প্রদান ছিল স্বতন্ত্র। সেই সময় থেকেই রানিং স্টাফদের মধ্যে লোকোমাস্টারদের (ট্রেন চালক) নির্ধারিত বেতন-ভাতার বাইরে প্রতি ১০০ মাইল ট্রেনযাত্রায় একদিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ মাইলেজ দেয়া হতো। স্বাধীনতার পর আদালতের আদেশে লোকোমাস্টারদের বাইরে অন্য রানিং স্টাফরাও মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ মাইলেজ হিসেবে পেয়ে আসছেন। তবে সম্প্রতি সরকারি

আইবাস প্লাস প্লাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে রেলওয়ের বেতন ভাতা দেওয়া শুরু হলে সেখানে মাইলেজ (বিশেষ ভাতা) অন্তর্ভুক্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। জটিলতা নিরসনে রেলওয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিলেই বাধে বিপত্তি। এ সংক্রান্ত রেলওয়ের চিঠির বিপরীতে গত নভেম্বরে ফিরতি চিঠি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। সেই চিঠিতে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা সীমিত করার কথা বলা হয়।

সূত্র জানায়, রেলে এখন লোকোমাস্টার (ট্রেন চালক) ও গার্ড সংকট চরমে। ১ হাজার ৯৬২ জন ট্রেন চালকের স্থলে বর্তমানে রয়েছেন ১ হাজার ১৮ জন। ৯৮৮ চালকের অভাব রয়েছে। আর ট্রেনে অর্ধেকেরও কম গার্ড রয়েছেন। এছাড়া এক যুগে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ৩ হাজার ৫০০ চালক এবং ২ হাজার ৫০০ গার্ড প্রয়োজন। জনবল সংকট থাকায় একজন চালক ও গার্ড ১৭ থেকে ১৯ ঘণ্টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

রানিং স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- একজন রানিং স্টাফের তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় দিনে ১২ ঘণ্টা এবং নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকার বাইরে সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজ করার নিয়ম রয়েছে। তবে রেলওয়ের স্বার্থে এ নিয়মের রাইরে কোনো রানিং স্টাফকে কাজে যুক্ত করা হলে মাইলেজ সুবিধা দেওয়ার নিয়ম আছে। জনবল সংকট থাকায় অতিরিক্ত কাজ করে রানিং স্টাফরা বিপুল পরিমাণ মাইলেজ সুবিধা নেন।

তবে গত ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া চিঠিতে অনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধাকে সীমিত করা হয়। সেখানে রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রেলওয়ে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক হিসাবের ক্ষেত্রে মূল বেতনের সঙ্গে কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে নাকচ করে দেওয়া হয়।

এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব লোকোমাস্টার বা শান্টিং লোকোমাস্টার (এসএলএম), ক্যারেজ এটেনডেন্ট, গার্ড, টিকিট ট্রেকার (টিটি) হিসেবে কাজ করা রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এর প্রতিবাদে আজ (মঙ্গলবার) থেকে অতিরিক্ত ডিউটি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্ষুব্ধ রানিং স্টাফরা।

রেলওয়ের রানিং স্টাফ (চালক-গার্ড) ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, মাইলেজ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন না করায় আজ (মঙ্গলবার) থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন না রানিং স্টাফরা। ৩০ জানুয়ারির মধ্যে জটিলতা নিরসন না করলে ৩১ জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতিতে যাবো আমরা।

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট