চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

রিফাত হত্যা মামলা মিন্নির জামিন নামঞ্জুর

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

২২ জুলাই, ২০১৯ | ১:৫১ পূর্বাহ্ণ

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রবিবার উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ আদেশ দেন। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে মিন্নির শ্বশুর হালিম শরীফ গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে মিন্নি বাবা – মাকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
আদালতে মিন্নির পক্ষে জামিন আবেদন করেন এডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম। শুনানিতে তিনি উল্লেখ করেন, মিন্নি শারীরিকভাবে অসুস্থ, তার কাছ থেকে জোর করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এ সময় আসলামের সঙ্গে আদালতে ছিল আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধিদল ও ব্লাস্টের একটি প্রতিনিধিদল। আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্যের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি সঞ্জিত দাস।
মিন্নির শ্বশুরের সংবাদ সম্মেলন
এবার মিন্নির বাবা-মাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে ফের সংবাদ সম্মেলন করলেন রিফাতের বাবা হালিম শরীফ। এ ছাড়া রিফাত হত্যা মামালার পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল রোববার দুপুরে বরগুনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছেন হালিম শরীফ। এ সময় রিফাতের মা, বোন, চাচা-চাচি ও স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত রিফাতের বাবা বলেন, ‘বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দিনে-দুপুরে আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে “০০৭” গ্রুপের সদস্যরা। এ ঘটনায় আমি একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। প্রাথমিকভাবে যে ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে সেখানে মিন্নির ভূমিকায় সবাই প্রশংসা করে। তাই আমি প্রাথমিকভাবে মিন্নিকে মামলার ১ নম্বর সাক্ষী করি। পরবর্তীতে এ ঘটনার আরও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ায় মিন্নির ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া নয়ন বন্ডের মায়ের কথায় আরও প্রকাশ্যে আসে মিন্নির আসল চেহারা। এরপর আমি বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে এই হত্যাকা-ে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাই। পুলিশও তাদের তদন্তে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছে। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতেই প্রতিয়মান হয় যে, মিন্নিই এই খুনের প্রধান পরিকল্পনাকারী।’
এ সময় রিফাতের বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিছু কিছু গণমাধ্যম আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি ছেলে হারিয়েছি, আমার পাশে না দাঁড়িয়ে তারা খুনিদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মিন্নির মা-বাবা আমার কাছে তাদের মেয়ের বিয়ের বিষয়টি গোপন করে রিফাতের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। এই বিয়েই আমার ছেলের জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি মিন্নির মা-বাবাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে গত ১৩ জুলাই রাত ৮টার দিকে মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ। পরে ১৬ জুলাই রাতে তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি। গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয় জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। পরে মুন্নিকেও রিফাত হত্যা মামলার আসামি করে গ্রেফতার দেখানো হয়। মুন্নিসহ এ পর্যন্ত ১৩ আসামি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট