চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

এরশাদকে রংপুরে সমাহিত না করলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

অনলাইন ডেস্ক

১৫ জুলাই, ২০১৯ | ৫:৪৫ অপরাহ্ণ

উত্তরাঞ্চলের মানুষের শরীরে একফোঁটা রক্ত থাকতেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সমাধি কোনো সংরক্ষিত এলাকায় হতে দেবে না। তার ওছিয়কৃত স্থান রংপুরের পল্লী নিবাসেই এরশাদকে সমাহিত করতে হবে। মঙ্গলবার এরশাদের লাশ রংপুরে আসার পর সেটি যদি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করা হয়, তবে রংপুরের লাখ লাখ মানুষের লাশের ওপর দিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

আজ (১৫ জুলাই) সোমবার রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় জাতীয় পার্টির যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য, মহানগর সভাপতি ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।



সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, উন্নয়ন অগ্রগতি ও পরমত সহিষ্ণু রাজনীতির চেতনার বাতিঘর এরশাদকে মৃত্যুর আগেও শৃঙ্খলিত করে রাখা হয়েছিল। সে কারণে মৃত্যুর সময়েও তার নামে ঝুলেছে দুটি মিথ্যা মামলা। তার মৃত্যুর পরেও তাকে সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে জাতীয় পার্টিকে ধংসের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করার অপচেষ্টা চলছে। রংপুর তথা উত্তরাঞ্চলের মানুষ এই ষড়যন্ত্রকে কোনভাবেই মানবো না।

প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা বলেন, আমরা ঢাকায় খোলা স্পেসে তাকে সমাহিত করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আমরা এরশাদের দেয়া জাতীয় তিন নেতার মাজারের পাশে অথবা সংসদ ভবনের পাশে আসাদ গেট এলাকায় মশিউর রহমান যাদু মিয়ার কবরের পাশে জায়গার জন্য সরকারকে বলেছিলাম। কিন্তু সেটা সরকার দেয়নি। বরং তাকে সেনানিয়ন্ত্রিত বনানী কবরস্থানে কবরস্থ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

মেয়র মোস্তফা বলেন, বনানী কবরস্থানে সমাধি দেয়ার মাধ্যমে এরশাদকে সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। তাকে যদি জাতীয় নেতার মর্যাদা দিয়ে ঢাকায় আমাদের প্রস্তাবিত খোলা স্পেসে সমাধি দেয়া হতো, তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু যেহেতু তা করা হচ্ছে না, সে কারণে রংপুরেই এরশাদকে সমাহিত করতে হবে। এটা আমাদের একদফা দাবি।

মেয়র বলেন, এরশাদ বেঁচে থাকতে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সব সময় তাকে শৃঙ্খলিত করে রেখেছে। মুক্তভাবে তাকে রাজনীতি করতে দেয়া হয়নি। বিভিন্ন সভা সমাবেশে এরশাদ সেটি বলে গেছেন। বাংলাদেশের মানুষ তার প্রমাণ। মৃত্যুর পরেও এরশাদকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এরশাদের সুসময় ও দুঃসময়ে রংপুরের মানুষ ঢাল হয়ে তার পাশে থেকেছে। তাকে ভালোবেসেছে। এরশাদকে ৫ বার এমপি নির্বাচিত করে সম্মানিত করেছে। এরশাদের জীবদ্দশায় তার বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র হয়েছে, রংপুরের মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করছে। তার লাশ রংপুরের পল্লী নিবাসে সমাহিত করার ব্যপারে যদি কোন ষড়যন্ত্র কিংবা বাঁধা দেয়া হয়, তাহলে আগের মতোই কঠোর প্রতিরোধ আন্দোলনের মাধ্যমে সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আমাদের প্রিয় নেতাকে তার পল্লী নিবাসে সমাহিত করা হবে।



মোস্তফা বলেন, তিনি পল্লী নিবাস থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিলেন। একটি নতুন বাড়িও নির্মাণ করছিলেন তিনি। কিন্তু সেই বাড়িতে উঠতে পারেননি। পল্লী নিবাসে সমাহিত করে আমরা একটি স্মৃতি কমপ্লেক্স তৈরি করবো। সেখানে এরশাদের জীবন দর্শন নিয়ে একটি মিউজিয়াম করা হবে। মসজিদ মাদরাসা কমপ্লেক্স থাকবে। তার সমাধিকে ঘিরে তার জীবন ও কর্মের চেতনার বাতি আমরা দেশে-বিদেশে জ্বালিয়ে দিতে চাই। তার অবর্তমানে তার ভাই জিএম কাদেরের নির্দেশনার আলোকে আমরা জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনের আগে রংপুর সেন্ট্রাল রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের একটি যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলা ও দুই মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে ও মহানগর সভাপতি এসএম ইয়াসিরের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য গাইবান্ধা জেলা সভাপতি আব্দুর রশিদ সরকার, দিনাজপুর জেলা সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ও সাধারণ সম্পাদ শরীফ আহমেদ, ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি আলী রাজু স্বপন প্রমুখ।

 

পূর্বকোণ/ময়মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট