চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বজ্রপাতের ৪০ মিনিট আগেই মিলবে সংকেত, বাঁচবে প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ অক্টোবর, ২০২১ | ৯:৫৫ অপরাহ্ণ

বজ্রপাতে মৃত্যুরোধে ‘আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ নামে একটি যন্ত্র বসানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। প্রাথমিকভাবে দেশের বজ্রপাত-প্রবণ এলাকায় ৭২৩টি যন্ত্র বসানো হবে। তবে প্রকল্পটির ব্যয় ও বাস্তবায়ন মেয়াদ এখনও নির্ধারণ হয়নি। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বজ্রপাতের ৪০ মিনিট আগেই সংকেত পাওয়া যাবে। ফলে যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন তারা সহজেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারবেন। এতে অনেক প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হবে।

গবেষকরা বলছেন, বজ্রপাতের অন্যতম হটস্পট বাংলাদেশ। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন-জঙ্গল উজাড়, বঙ্গোপসাগর থেকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রবাহ, উত্তরের হিমালয়ের পাদদেশে পুঞ্জীভূত মেঘ, মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কিউমোলোনিম্বাস (পুঞ্জমেঘ), মোবাইল টাওয়ার থেকে উৎপন্ন অতি মাত্রার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও ওয়েবকে বজ্রপাতের জন্য দায়ী করা হয়।

ফিনল্যান্ডের বজ্রপাত-বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার হিসাবে, বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৪০ লাখ বা তার বেশি-সংখ্যক বজ্রপাত মেঘ থেকে ভূমিতে নেমে আসে। ২০২০ সালে এর সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ লাখ। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ বছরে বজ্রপাতে দেশে কম-বেশি আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে ১৭৯ জন, ২০১২ সালে ২০১, ২০১৩ সালে ১৮৫, ২০১৪ সালে ১৭০, ২০১৫ সালে ১৬০, ২০১৬ সালে ২০৫, ২০১৭ সালে ৩০১, ২০১৮ সালে ৩৫৯, ২০১৯ সালে ১৯৮, ২০২০ সালে ২১১ জন মানুষ বজ্রপাতে মারা যান। 

এদিকে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩৫১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বজ্রপাতে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাত ১টায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দুজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন- ফনিন্দ্র বিশ্বাস (৩০) ও নিরঞ্জন বিশ্বাস (২৫)।

জানা যায়, প্রতিদিনের মতো ওই দিন রাতে মাছ ধরতে হাওরে যান তারা। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর স্বজনরা রাত ১টায় মাছ ধরার নৌকার ওপর দুজনের মরদেহ দেখতে পান। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের কয়েকটি জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শেরপুর ও  জামালপুর উল্লেখযোগ্য।

স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএএফ) প্রেসিডেন্ট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, বজ্রপাতে মৃতদের বেশির ভাগই কৃষক। কারণ তারা মাঠে কাজ করতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভেজেন। কাছাকাছি বড় গাছ না থাকায় বজ্রপাতে তাদের মৃত্যু হয় বেশি। দেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে বেশি বজ্রপাত হওয়ায় দ্রুত ওই সব অঞ্চলে আগাম বার্তা ও বজ্র-নিরোধক টাওয়ার নির্মাণে গুরুত্বারোপ করা উচিত। 

বজ্রপাতে কৃষকদের মৃত্যু কমাতে তিনটি উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর একটি হলো- ‘আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম’। দ্বিতীয়টি হলো- ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ সংবলিত বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের শেল্টার নির্মাণ এবং তৃতীয়টি হচ্ছে- জনসচেতনতা বাড়ানো।

সাধারণত দেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও পাহাড়ধসের মতো ঘটনাকে ‘দুর্যোগ’ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু পর্যায়ক্রমে দেশে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় ২০১৫ সালে বজ্রপাতকেও দুর্যোগের তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন  বলেন, বজ্রপাতে মৃত্যু কমিয়ে আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এজন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মৃত্যুর হার কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি। সূত্র: ঢাকা পোস্ট

পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট