চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

রায়হান আজাদ

২০ অক্টোবর, ২০২১ | ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী তথা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র এ জগতে শুভাগমনের দিন। অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, এ ধরাধামে মহানবী (সা.) এর আবির্ভাব ঘটে আ‘মুল ফীলের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মোতাবেক ৫৭০ ঈসায়ী সনের ২৯ আগস্ট সোমবার। এ দিবস ছিল বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে সবচেয়ে সৌভাগ্যময় ও খুশীর দিন।
মহানবী সৌদি আরবের উম্মুল কোরা নামে খ্যাত প্রাচীন শহর মক্কা নগরীর প্রসিদ্ধ কুরাইশ বংশে আবদুল মোত্তালিবের গুণধর পুত্র আবদুল্লাহর ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের পর তাঁর দাদাজান নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’ তথা অত্যধিক প্রশংসিত আর আম্মাজান রাখেন ‘আহমদ’, তার অর্থও একই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতৃগর্ভে থাকাকালে পিতা আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। নবীজীর মায়ের নাম আমিনা। তিনি মদিনার প্রসিদ্ধ বনু যুহরা গোত্রের সর্দার ওয়াহ্ব-এর কন্যা। মহানবীর বংশ পরিক্রমা উর্দ্ধে মুসলিম মিল্লাতের পিতা সাইয়েদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। শৈশবে মহানবীকে তায়িফের বনী সা’দ গোত্রের হালিমা সা‘দিয়া দুগ্ধ পান করান। মহানবী জন্মের ৬ষ্ঠ বছরে আম্মা এবং ৮ম বছরে দাদাকে হারান। বস্তুতপক্ষে তিনি চাচা আবু তালিবের হাতেই প্রতিপালিত হন। মহানবী ২৫ বছর বয়সে মক্কার ধনাঢ্য মহিলা হযরত খাদীজাতুল কুবরার সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন এবং এ স্ত্রীর জীবদ্দশায় অন্য কোন স্ত্রী তিনি গ্রহণ করেননি। মূলত মহানবীর বংশধারা এ স্ত্রীর সন্তান মা ফাতিমার মধ্যদিয়েই অদ্যাবধি চলে এসেছে।
মহানবীর তাশরীফ কালে মক্কাসহ তামাম দুনিয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিভীষিকাময়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক দূরাবস্থা, সাংস্কৃতিক নৈরাজ্য, গোত্রীয় দাসত্ব, ধর্মীয়ভাবে পৌত্তলিকতার রাজত্ব-খোদ বায়তুল্লাহ শরীফে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন, কন্যা সন্তান জীবন্ত প্রোথিতকরণসহ যাবতীয় জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ডুবে গিয়েছিল তখনকার মনুষ্যজাতি। ৪০ বৎসর বয়সে নবীজী নবুয়্যত লাভ করে ১৩ বছর মক্কায় এবং ১০ বছর মদিনায় সর্বমোট ২৩ বৎসরের অক্লান্ত সাধনা ও সংগ্রামে তাওহীদ, রিসালত ও আখিরাতের মিশন বাস্তবায়ন করে পথহারা-বিভ্রান্ত মানুষদের হেরার আলোকরশ্মি দিয়ে সারা পৃথিবীতে অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধনে সক্ষম হন।
৬৩২ ঈসায়ী সালের ৮ জুন মোতাবেক ১১হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার দিন পেয়ারা নবী মুহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করেন। তিনি যে জায়গায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সেখানেই চিরতরে শায়িত হন। আর এটি ছিল উম্মুল মোমিনীন হযরত আয়িশা (রা.)’র হুজরা, যা বর্তমানে মসজিদে নববীর ভেতরে রওজাতুন্নবী তথা রওজা শরীফ নামে পরিচিত। যেদিন মহানবী পৃথিবীতে আগমন করেন এর ঠিক ৬৩ বৎসর পরে সেদিনই তিনি বিদায় নেন। তাই মিলাদুন্নবী তথা নবীর জন্মদিবস একই সাথে ওয়াফাতুন্নবী তথা মহাপ্রয়াণ দিবসও বটে।
আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার সাথে কেবলমাত্র ইসলামই সাজুয্যপূর্ণ। সাম্প্রতিককালে দেশে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়েছে অথচ মহানবী ছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত আদর্শ। পারস্পরিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা পোষন সকল ধর্মের সারকথা। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিক উপলদ্ধি দান করুন। আমিন।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট