চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছুটি দেয়নি কর্তৃপক্ষ, পোশাক কারখানাতেই শ্রমিকের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক

১১ জুলাই, ২০১৯ | ২:০৯ অপরাহ্ণ

গাজীপুরের বাঘের বাজারে পলমল গ্রুপের কর্টজ এপারেলস পোশাক কারখানায় অসুস্থ হয়ে পড়ে আবদুর রব মিয়া (২৬) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কারখানাটির একজন প্রোডাকশন ম্যানেজার অসুস্থ ওই শ্রমিকের ছুটির দরখাস্ত ছিঁড়ে ফেলে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আধাঘণ্টা পর তার মৃত্যু হয়। বুধবারের (১০ জুলাই) এ ঘটনায় শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত আবদুর রব মিয়া ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া গ্রামের মৃত নবী হোসেনের ছেলে।
কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, আবদুর রব বাঘের বাজার এলাকায় থেকে কর্টজ এপারেলস কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে সুয়িং আয়রনম্যান পদে চাকরি করে আসছেন। বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে কারখানায় কাজ করার সময় হঠাৎ তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। এ সময় সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কারখানার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আবদুর রব উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার আবেদন করেন। ছুটির আবেদন পেয়ে কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার শফিউল আলম আমান ক্ষেপে যান। ওই কর্মকর্তা ছুটি না দিয়ে আবেদন ফরম ছিঁড়ে ফেলে অসুস্থ আবদুর রবকে পুনরায় কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। আবদুর রব কাজে যোগ দেওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পর প্রোডাকশন ফ্লোরের মেঝেতে ঢলে পড়েন। পরে সহকর্মীরা তাকে স্থানীয় মাওনা চৌরাস্তা এলাকার আলহেরা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কারখানাটির সুয়িং অপারেটর শাহজাদী আক্তার ও আয়রনম্যান ইমরান হোসেন জানান, আবদুর রব অসুস্থ হয়ে পড়লে লাইন সুপারভাইজারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কারখানার মেডিক্যালে যান। মেডিক্যাল থেকে ডাক্তার ছুটি নিয়ে রেস্ট করতে বলেন। পরে ছুটির ফরম নিয়ে প্রোডাকশন ম্যানেজার শফিউল আলম আমানের কাছে যান রব। এ সময় প্রোডাকশন ম্যানেজার ছুটির ফরম নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেন এবং ছুটি নিতে এজিএম মুরাদ হোসেনের কাছে যেতে বলেন। পরে তিনি বিরক্ত হয়ে সরাসরি জিএমের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে সিঁড়িতে পড়ে যান। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারখানাতেই রবের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি শ্রমিকদের।
এদিকে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও চিকিৎসার অভাবে আবদুর রবের মৃত্যুর সংবাদ কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষ বুধবার কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।


ছুটির ফরম ছিঁড়ে ফেলার বিষয়ে জানতে কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার শফিউল আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে গাজীপুর শিল্প পুলিশের শ্রীপুর জোনের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর হাবিব ইস্কান্দার জানান, কারখানার শ্রমিক আবদুর রব হৃদরোগী ছিলেন। বুধবার পৌনে ১২টার দিকে কারখানায় কাজ করার সময় তিনি বুকে ব্যথা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবদুর রবকে প্রথমে কারখানার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে কর্তৃপক্ষ তাকে স্থানীয় আলহেরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুকে ঘিরে নানা গুজব কারখানায় ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পূর্বকোণ/মিজান

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট