চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

মায়ের কিডনিতেই প্রাণ ফিরে পেল ছেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ১:২৭ অপরাহ্ণ

ইউনুস আলী রিপন। বয়স ছাব্বিশ বছর। সবসময় হাসিমাখা মুখ। সবার সাথে তার অন্যরকম সম্পর্ক। বিপদে-আপদে তিনি যেন সবার সঙ্গী। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সেই প্রাণবন্ত রিপন। অসুখের যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন দিনের পর দিন। এভাবে কেটে যায় সাত মাস। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানালেন তার দুটি কিডনি বিকল। এ অবস্থায় যেন মাথায় ভেঙে পড়ে আকাশ। কে দেবে আশা, কে দেবে ভরসা? দিশেহারা হয়ে পড়ে রিপনের অসহায় পরিবার।
একমাত্র ছেলের এ অবস্থায় কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হন পুরো পরিবার। রিপনের জন্য বোন, স্ত্রী, এমনকি আত্মীয়-স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশী কারও কাছ থেকে কিডনি পাওয়া যায় না। অবশেষে সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের শেষ সম্বল ভিটেবাড়িটুকু বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন তার বাবা আব্দুর রশিদ। জমিজমা কিনতে আগ্রহী কয়েকজনের সঙ্গে কথাবার্তাও হয়। ভিটেবাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে সন্তানকে বাঁচাতে কিডনি কেনার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাধ সাধেন রিপনের গর্ভধারিনী মা রীনা বেগম।
মায়ের ব্যাকুল মন যেন কিছুতেই ভরসা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাই গর্ভধারিণী মা ছেলেকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে সেই মায়ের কিডনি মৃত্যুশয্যায় থাকা ছেলের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এখন চোখ মেলে ছেলে দেখছেন মা তার পাশে। আর মা দেখছেন তার ছেলে এখন হাসে। ছেলের হাসিমাখা মুখের জন্য মায়ের অগাধ এ ভালোবাসার কথা এখন নেটদুনিয়ায় ভাসছে।
এ ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের উত্তর তাম্বুলপুর গ্রামে। সেখানকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদ ও রীনা বেগম দম্পতির ছেলে ইউনুস আলী রিপন। তিনি পেশায় পুলিশ সদস্য। সম্প্রতি দুই কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুশয্যায় থাকা অসুস্থ ছেলেকে বাঁচাতে কিডনি দিয়েছেন তার মা।
১০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ঢাকার সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে মায়ের কিডনি ছেলের শরীর প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। বর্তমানে মা ও ছেলে সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছে তাদের স্বজনেরা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রসংশায় ভাসতে থাকেন মা রীনা বেগম। এমন মাকে নিয়ে গর্ভবোধ করছেন সবাই। গ্রাম থেকে শহরে সবার মুখে মুখে ছেলের জন্য মায়ের এ অগাধ ভালোবাসার কথা।
রিপনের চাচা আহসান হাবিব জানান, ছয় সাত মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন রিপন। পরে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জানা যায় তার দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করে কোথাও কিডনি পাওয়া যায়নি। পরে রিপনের মা নিজেই ছেলেকে কিডনি দিয়ে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। বর্তমানে মা ও ছেলে দুজনই ঢাকায় হাসপাতালে আছে। পুরোপুরি সুস্থ হলে তারা গ্রামে ফিরবেন।
উত্তর তাম্বুলপুর গ্রামের যুবক আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশ সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগদানের আগে থেকেই সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল রিপনের। পীরগাছা সরকারি কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন ছাত্র রাজনীতি করেন। তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতিও ছিলেন রিপন।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট