চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

টিকায় অগ্রাধিকার পাচ্ছে ৪০ লাখ গার্মেন্টসকর্মী

অনলাইন ডেস্ক

৩ আগস্ট, ২০২১ | ২:২৮ অপরাহ্ণ

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক দশকে তৈরি পোশাক খাতের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৮০ শতাংশ। কিন্তু করোনা মহামারীর প্রথম থেকেই এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের টিকাদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয় নি।

অবশেষে দেশের অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে পোশাকখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ৪০ লাখ গার্মেন্টস কর্মীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ঈদের আগে গার্মেন্টস কর্মীদের টিকাদান শুরু হলেও বিধিনিষেধ ও কোরবানি ছুটির কারণে টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল এতদিন। অবশেষে গতকাল সোমবার (২ আগস্ট) থেকে বড় পরিসরে অন্যান্য পোশাক কারখানায় টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ নেতারা জানিয়েছেন, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৪০ লাখ শ্রমিকের জন্য সমপরিমাণ টিকা সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে। এক মাস পর এসব কর্মীকে দ্বিতীয় ডোজের জন্য টিকার প্রয়োজন হবে। তখনও তারা টিকা পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাককর্মীদের টিকাদানের লক্ষ্যে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর পক্ষ থেকে পৃথকভাবে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি পোশাক কারখানায় কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে সমন্বয় করে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সূর্যের হাসিসহ স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরাও পোশাককর্মীদের টিকাদানে সহায়তা দেবেন।

পোশাককর্মীদের মতো দেশের অন্যান্য রপ্তানি ও শিল্পকারখানার কর্মীদেরও জরুরি ভিত্তিতে টিকার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সংশ্নিষ্ট খাতগুলোর নেতারা। তাদের মতে, দেশে রপ্তানি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে লাখ লাখ কর্মী কাজ করছেন।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখতে রপ্তানি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সুরক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন। কর্মীরা সুরক্ষিত না থাকলে উৎপাদন কম হবে এবং অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। অর্থনীতির স্বার্থে প্রবাসী কর্মীদের মতো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও জরুরিভিত্তিতে টিকার আওতায় আনতে সরকারি পদক্ষেপ প্রয়োজন। অন্যথায় পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি সচল রাখার নেপথ্যে উৎপাদনমুখী শিল্প খাতের বড় জনগোষ্ঠীকে জরুরি ভিত্তিতে টিকার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদরা। তাদের অভিমত, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি লাখ লাখ কর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। অনেকে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করলেও শিল্পকারখানার উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে এ খাতের কর্মীদের সুরক্ষার অংশ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। সরকার দ্রুততম সময়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

অন্য শিল্পকারখানার শ্রমিকরা টিকার বাইরে :বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) তথ্যানুযায়ী, দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় মোট শ্রমিকের সংখ্যা ছয় কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে সরাসরি কর্মসংস্থানে যুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ছয় কোটি ৮০ হাজার। তাদের এক কোটি ২৫ লাখ শ্রমিক শিল্প খাতে কাজ করছেন। পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর নেতাদের দাবির মুখে এ খাতের ৪০ লাখ শ্রমিক টিকা পেলেও অন্যান্য রপ্তানি ও শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বিষয়ে নিশ্চয়তা মেলেনি। সব কর্মীর জন্য টিকা পেতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নেতারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। কিন্তু এখনও সাড়া মেলেনি।

এফবিসিসিআইর সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, পোশাককর্মীদের পাশাপাশি সব ধরনের শিল্পকারখানার শ্রমিকদেরই টিকা পাওয়া উচিত। কারণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সবার অবদান রয়েছে। সুতরাং তাদের সুরক্ষার অংশ হিসেবে টিকার আওতায় আনতে হবে।

শ্রমিকদের টিকার নিশ্চয়তা পেতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগের তথ্য জানিয়ে জসিম উদ্দিন আরও বলেন, গত সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে তারা বৈঠক করে শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার কথা জানিয়েছেন। তবে দু-এক দিনের মধ্যে শ্রমিকদের জন্য টিকা চেয়ে তারা সরকারের কাছে লিখিত অনুরোধ জানাবেন। সরকার দ্রুততম সময়ে শ্রমিকদের টিকার ব্যবস্থা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারা ৪০ লাখ টিকা পাচ্ছেন। এরই মধ্যে ২৯ হাজার প্রয়োগ করা হয়েছে। বাকিদের টিকা দেওয়া দু-এক দিনের মধ্যেই শুরু হবে।

তবে তৈরি পোশাক খাতের এক্সেসরিজ শিল্পের শ্রমিকদের টিকার আওতায় রাখা হয়নি। এ শিল্পে সাত লাখের মতো শ্রমিক কাজ করছেন।

এক্সেসরিজ শিল্প সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের খান বলেন, শ্রমিকদের জন্য টিকা বিষয়ে তারা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন; কিন্তু এখনও কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সরকার জনগণের টিকা নিশ্চিতকরণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২১ কোটি ডোজ টিকার নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠী টিকার আওতায় আসবে। সুতরাং টিকা নিয়ে সংকট হবে না। টিকাপ্রাপ্তির অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে ২৫ বছর ও তার ওপরের বয়সী সব নাগরিকের জন্য টিকার নিবন্ধন উন্মুক্ত করা হয়েছে। দেশের শিল্পকারখানার কর্মীদের সিংহভাগ এই বয়সসীমার আওতায় টিকা পাবেন। এর বাইরে যারা থাকবেন, তারাও ধাপে ধাপে টিকার আওতায় আসবেন বলে জানান তিনি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট