চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কোভিডের অতিচর্চায় ভুল বার্তা পাচ্ছে জনগণ

ওয়াহিদ জামান

৩ আগস্ট, ২০২১ | ৩:০৮ পূর্বাহ্ণ

আমরা এখন কোভিড-ঝুঁকির ‘চিরস্থায়ী’ বন্ধনে আবদ্ধ। দারুণ সংক্রমণশীল ‘ডেল্টা’র এ সময়ে এমনকি ব্যাপকভাবে টিকা নেয়া দেশগুলোতেও আমরা ভবিষ্যতে কোভিড সংক্রমণের বাস্তবতার মুখোমুখি হব। একটু অন্যভাবে বলা যায়, আমরা এমন একটি রোগ নিয়ে বাঁচতে শিখছি যা কিছুতেই আমাদের ছেড়ে যাচ্ছে না। আমাদের ঘরে ও জনাকীর্ণ পরিবেশে অথবা বাইরে মাস্ক পরেই থাকতে হবে।
কে টিকা দিয়েছে, আর কে দেয়নি- আমরা যেহেতু জানি না তাই আমাদের নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। সবসময় অন্যদের কাছ থেকে সামাজিকভাবে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এটিই এখন বাস্তবতা। যেভাবেই হোক আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গত এপ্রিল- মে’র ভয়ংকর দিনগুলো যেমন আমরা মনে রাখব, তেমনি সংক্রমণ আর টিকাকরণের ‘আশাপ্রদ গাণিতিক সুবিধা’র কথাটিও আমাদের মনে রাখতে হবে। যদি আমরা টিকা নিয়ে থাকি, তবে আমরা অবশ্যই গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। আমাদের কোভিডের মারাত্মক প্রভাবে (হাসপাতালে ভর্তি, মৃত্যু) আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে হ্যাঁ সে সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে শূন্যে নেমে আসেনি!
টিভি কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোয় ব্যাপকভাবে বলা হয়, “সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া মানুষও সংক্রামিত হচ্ছে, হাসপাতালে যাচ্ছে।” এহেন প্রচারণাগুলো এই ধারণা সৃষ্টি করে যে, টিকা কার্যকর নয়; যা সতর্কতার পরিবর্তে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রকৃত সত্যটি হল- সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনগুলি প্রায় ৯০% কার্যকর এবং এমনকি রোগীকে হাসপাতালে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি থেকেও রক্ষা করে।
লোকেরা যতই বেশি বেশি টিকা নিক না কেন, এক্ষেত্রে গণিতের হিসাবটা হবে- সম্পূর্ণভাবে টিকা দেওয়া ব্যক্তিরাও সংক্রমিত হচ্ছেন এবং এমনকি তাদের অনেককে হাসপাতালেও যেতে হচ্ছে। ১০ কোটিরও বেশি টিকাযুক্ত মানুষের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (সংক্রমণের বিরুদ্ধে ৯০% কার্যকারিতা এবং তাদের মাত্র ৫% হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকিতে) এখনও বলা হয় যে, শত শত সম্পূর্ণ টিকা নেয়া লোক কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন।
আলোচ্য বিষয়টিকে একটু অন্যভাবেও দেখা যায়। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৯.৯% চালক সিটবেল্ট পরেন। তাই বলা চলে, গাড়ি দুর্ঘটনায় যারা হাসপাতালে আছেন তাদের প্রায় সবাই সিটবেল্ট পরেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি দুর্ঘটনায় বছরে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায় এবং ২০ লাখেরও বেশি লোক আহত হয়। তাহলে কী আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারি যে গাড়ি চালানোর সময় সিটবেল্ট পরা তেমন কার্যকর নয়, তাই এর প্রয়োজন নেই? আমরা কি তাহলে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিব? এর অবশ্যম্ভাবী উত্তরটি হল ‘না’! আমরা সাবধানে গাড়ি চালাব, ওভারস্পিড নেব না, স্পিডি আর মাতাল ড্রাইভারদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করব এবং অবশ্যই ‘নিরাপদ গাড়ি’ কিনব। আমরা অবশ্যই ড্রাইভিংয়ের বিপদগুলি সম্বন্ধে জেনে নিব, সেসব অনুধাবন করেই সেগুলোর মোকাবেলা করব।
আমরা শীঘ্রই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কিংবা কানাডার মতো ব্যাপকভাবে টিকা নেয়া দেশগুলোর বর্তমান একই কোভিড-পরিস্থিতিতে পড়ব। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব, সম্ভব হলে ভিড় এড়ানো, স্বাস্থ্যবিধি ইত্যাদি মেনে চলতে হবে। হ্যাঁ, অবশ্যই ভবিষ্যতের কোভিড- মিউটেশনের সংক্রমিত করার বিপদ মোকাবিলা করার ঝুঁকিটা থেকেই যাচ্ছে।
এর একটা মনস্তাত্ত্বিক ‘শিক্ষা’ রয়েছে। আমাদের প্রতিদিনকার আক্রান্ত কিংবা মৃতের সংখ্যা অথবা এতদ্বিষয়ক উদ্ধৃতিগুলো সতর্কতার সাথে ব্যাখ্যা করতে হবে। নিরাপদ এবং ভাল থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বাস্তবভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণের সাথে সাথে আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে- কোভিড একটি বাস্তবতা যা খুব শীঘ্রই চলে যাবে না; হয়তো একে নিয়েই আমাদের থাকতে হবে।
লেখক : সিইও, ডব্লিউএন্ডএ কনসাল্টিং; প্রাক্তন প্রধান কৌশলী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হারশে (ঐবৎংযবু)। তিনি ‘ফরচুন ফাইভ হানড্রেড’ কেম্পানির বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে। এখন উদ্যোক্তাদের পরামর্শ আর সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট