চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

‘কারখানা খুলে দিয়ে শ্রমিকদের সংক্রমণ-চাকরি হারানোর ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে’

অনলাইন ডেস্ক

৩১ জুলাই, ২০২১ | ৩:৪৯ অপরাহ্ণ

কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালীন সরকার রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা চালু করার ঘোষণা দিয়ে পোশাক শ্রমিকদের দ্বিমুখী সংকটে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট। শনিবার (৩১ জুলাই) সংবাদ মাধ্যমে ফ্রন্টের সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদের পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ দাবি ও নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ১৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করে ঘোষণা করেছিল ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জরুরি সেবা ছাড়া সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ঈদের আগে এবং পরে সরকার একাধিকবার এই কথা উল্লেখ করেছে, বিশেষত শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছিল। কিন্ত শিল্প মালিকদের চাপে গতকাল রাতে আকস্মিকভাবে ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খোলা থাকবে বলে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনে শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার জন্য পরিবহন এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক আয়োজন সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ফলে চাকরি হারানোর ভয়ে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে আটকে থাকা লাখ-লাখ শ্রমিককে গণপরিবহন বন্ধ থাকা অবস্থায় দুর্ভোগ আর ঝুঁকিকে সঙ্গী করে একদিনের মধ্যে কর্মস্থলে ফিরতে হবে। পরিবহন ও আনুষঙ্গিক আয়োজন ছাড়া সরকারের এই ঘোষণা একদিকে লাখ-লাখ শ্রমিককে যাত্রাপথের ঝুঁকি এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়ের ক্ষতি, অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ আর চাকরি হারানোর ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের একতরফা অবস্থানের নিন্দা জানাচ্ছি এবং শিল্প-কারখানা চালুর আগে শ্রমিকদের জন্য পরিবহন ও টিকা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে গণপরিবহন বন্ধ রেখে শিল্প-কারখানা খুলে দেওয়া সরকারের হটকারী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি ও মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।

তারা বলেন, গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার পর আর লকডাউন জারি রাখার কোনো অর্থ নেই। সরকারের উচিত লকডাউন তুলে দিয়ে শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে প্রয়োজনে কঠোর হওয়া। ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। ছাত্র-ছাত্রীদের টিকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং সব গার্মেন্টস ও শিল্প-কারখানা কর্মীকেও টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা। 

গণটিকা কর্মসূচি আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে ন্যাপের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, এখন যেভাবে টিকা দেওয়া হচ্ছে তাতে আগামী দুই বছরেও শেষ করা সম্ভব হবে না। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ টিকা কেন্দ্র চালু করে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। নিবন্ধন পদ্ধতি আরও সহজ করতে হবে। কারণ নিবন্ধন জটিলতার কারণে নিরক্ষর ও স্বল্প শিক্ষিত মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী হচ্ছে না।

আরও বলা হয়, আমরা গতবছর দেখেছি শিল্প-কারখানা মালিকরা ঢাকায় অবস্থানরত শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু করার অনুমতি নিয়ে কীভাবে গ্রামে অবস্থান করা শ্রমিকদের ফোন করে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল। আগের এই অভিজ্ঞতার পরেও সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত, শ্রমিকদের স্বার্থ ও সুরক্ষা বিবেচনা না করার আরও একটি নজির। 

মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের একতরফা অবস্থানের নিন্দা জানাচ্ছি এবং শিল্প-কারখানা চালুর আগে শ্রমিকদের জন্য পরিবহন ও টিকা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঝুঁকি ভাতা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট