চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কাল শুরু হচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ডোজ

স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হলে টিকা নিতেই হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৭ এপ্রিল, ২০২১ | ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

করোনার মহামারী নিয়ন্ত্রণে আনার অংশ হিসেবে বিশ^জুড়েই চলছে টিকাদান কর্মযজ্ঞ। ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই একযোগে এ কার্যক্রম শুরু হয় যা অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তথা দুই মাসে চট্টগ্রামে টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৫ লাখ ১৯ হাজার ১৮৩ জন। যাদের মধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৫ জন। ইতোমধ্যে আগামীকাল ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ কার্যক্রম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সংক্রমণ ছড়ানোকে বাধাগ্রস্ত করতে হলে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ মানুষের টিকা নিতে হবে। এ কাজটি যত দ্রুত অর্জন করা যাবে, তত দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে মানুষ। কিন্তু টিকা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় আগ্রাহ হারিয়ে ফেলছেন অনেকেই। আবার গ্রাম পর্যায়ের বেশি অংশই এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কু-সংস্কারে বিশ^াসী হওয়ায় টিকা গ্রহণের ব্যাপারে মোটেও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার এ মহামারি থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। তা না হলে এ পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এদিকে, গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে নিম্মশ্রেণীর মানুষদের মধ্যে সিংহভাগই এখন পর্যন্ত টিকা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে অবগত নয়। টিকা পেতে কী করতে হবে, কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করবে, কোথায় যেতে হবে, কার সহযোগিতা নিতে হবে তাও জানা নেই অনেকের।

টিকা পেতে কী করতে হবে
বর্তমানে ৪০ বছরের উর্ধ্ব বয়সীদের টিকা দেয়া হচ্ছে। এ বয়সীরা যে কোন সরকারি হাসপাতালে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। তবে টিকা নিতে হলে প্রথমেই করতে হবে নিবন্ধন। যার জন্য শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি নম্বর জানা থাকলেই যথেষ্ট। নিবন্ধন করতে কোন প্রকার খরচ বা ফি’র প্রয়োজন হবে না। যা যেকোনো ব্যক্তি তার কম্পিউটার বা মুঠোফোন ব্যবহার করে এই নিবন্ধন করতে পারবেন। মনে রাখতে হবে একটি এনআইডি নম্বর থেকে একবারই নিবন্ধন করা যাবে।

যেভাবে নিবন্ধন করবেন
নিবন্ধন করতে প্রথমে অনলাইনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ‘সুরক্ষা ডট গভ ডট বিডি’তে প্রবেশ করতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি, উভয় ভাষায় এই ওয়েবসাইটে তথ্য পূরণ করা যাবে। সেখানে থাকা ‘ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করুন’ অপশনে গিয়ে প্রথমে নিজের পেশার ধরন, পেশা বাছাই করার পরে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিতে হবে এবং স্কিনে থাকা নম্বরটি দিয়ে ‘যাচাই করুন’ অপশনে ক্লিক করলেই আপনার নাম-বয়সসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য নিজে নিজেই চলে আসবে। সেখানে পুণরায় পেশা, ঠিকানা (সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার ওয়ার্ড), এবং যে কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহী- সেই কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিতে হবে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বা হৃদরোগের মতো অন্য কোন শারীরিক জটিলতা আছে কিনা, সেটা জানানোর একটি অপশন আসবে। যেখানে হ্যাঁ অথবা না চিহ্নিত করে দিতে হবে। একইসাথে একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে। যাতে সাবমিট করার সাথে সাথে প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে একটি ‘ওটিপি’ কোড পাঠানো হবে। কোডটি ওয়েবসাইটে দেয়ার পর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড
টিকা পেতে নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর সুরক্ষা ওয়েবসাইটে থাকা ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ অপশনে প্রবেশ করতে হবে। যেখানে পূর্বের ন্যায় জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে সাবমিট করলেই প্রদত্ত মোবাইল নম্বর আরেকটি ওটিপি কোড পাঠানো হবে। কোডটি পুনরায় ওয়েবসাইটে দিয়ে সাবমিট করলেই ভ্যাকসিন কার্ডটি চলে আসবে। সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। টিকা নেয়ার সময় এই কার্ডটি অবশ্যই সঙ্গে করে নিতে হবে। টিকাদান কেন্দ্রে কার্ডটি ছাড়া টিকা দেয়া যাবে না। একই সাথে এই কার্ডটি সংরক্ষণেও রাখতে হবে।

মোবাইল নম্বরে যাবে এসএমএস
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কোভিড ভ্যাকসিন নামে নিবন্ধনের সময় দেয়া মোবাইল নম্বরে এসএসম পাঠানো হবে। যেখানে টিকা দেয়ার সময় ও স্থান জানিয়ে দেয়া হবে। সেই নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে টিকা নিতে হবে। সে সময়ে অবশ্যই নিবন্ধন কার্ডটি দরকার হবে। তা সঙ্গে করেই নিতে হবে। প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রেও মোবাইল নম্বরে এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে।

টিকা নেয়ার সার্টিফিকেট
সুরক্ষা এপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রত্যেকে টিকা সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে টিকার দুটি ডোজ নেয়ার পর তিনি টিকা নেয়ার একটি সনদ এই ওয়েবসাইট থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন। যা পরবর্তী ভ্রমণসহ সংশ্লিষ্ট কাজে প্রযোজ্য হবে। সংশ্লিষ্টদের মতে, অনলাইনে নিবন্ধন করার মাধ্যমে বাংলাদেশে কতোজন মানুষ টিকা পেয়েছেন, কোন শ্রেণী-পেশার মানুষ পাচ্ছেন, সকল তথ্যই একসাথে পাওয়া যাবে। একই সাথে টিকার টিকার সনদটিও ভবিষ্যতে বিদেশ ভ্রমণসহ বহু কাজেই প্রয়োজন হতে পারে।

সহায়তা নিন ওয়ার্ড অফিস কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের
অনেকেই নিজের কম্পিউটারে বা মুঠোফোনের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারলেও অধিকাংশই জানেন না কীভাবে কাজটি সম্পন্ন করবেন। তারমধ্যে পিছিয়ে গ্রাম পর্যায়ের মানুষগুলো। তবে ইতোমধ্যে সকলকে টিকার আওতায় আনতে নিবন্ধনের জন্য সহযোগিতায় সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদে থাকা ডিজিটাল সেবা থেকে সহজেই নিবন্ধন করা যাবে। যেখানে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে গেলেই নিবন্ধন কাজটি করে দিবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।

যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাদের করণীয়
এই মুহূর্তে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি কার্ড রয়েছে এবং বয়সসীমা ৪০ বছরের উর্ধ্বে শুধুমাত্র তাদের ক্ষেত্রেই নিবন্ধন করা যাচ্ছে। যাদের এনআইডি কার্ড নেই তাদের নিবন্ধনও করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে সকলকেই টিকার আওতায় আনা হবে। একই সাথে যাদের এনআইডি কার্ড নেই, তাদের বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আপাতত তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা ও সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট