চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

রেকর্ড রেমিটেন্সের আশাবাদ

কামরুল ইসলাম

২২ জুন, ২০১৯ | ২:২৪ পূর্বাহ্ণ

সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নানা উদ্যোগের সুফল হিসেবে বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানো বেড়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে গত ১৪ জুন পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ১৫৭০ কোটি মার্কিন ডলার। রেকর্ড পরিমানে রেমিটেন্স আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে বিদায়ী অর্থবছরে।
প্রবাসীরা বরাবরই হুন্ডিতে রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহ বোধ করেন। এভাবে পাঠানো অবৈধ জানা সত্ত্বেও প্রধানত আত্মীয়-স্বজনদের কাছে দ্রুত ও নিশ্চিত অর্থ পৌঁছানো এবং ব্যাংকের তুলনায় অধিক হারে টাকা পাওয়ার কারণে পাঠিয়ে থাকেন। বিদেশে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে গিয়ে হুন্ডি কারবারিদের প্রতিনিধিরা অর্থ সংগ্রহ করেন। সেখানে সংগ্রহের সাথে সাথে এখানে পৌঁছে দেন। ব্যাংকের চেয়ে অবৈধ চ্যানেলে বিনিময় হার কিছুটা বেশি থাকে। প্রবাসীরা চোরাপথে অর্থ পাঠান এই বাড়তি লাভের জন্য । এভাবে প্রবাসী আয় পাঠানোর ফলে আত্মীয়-স্বজনরা অর্থ পেলেও দেশ বঞ্চিত হচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে। প্রবাসীরা যাতে বৈধপথে তাদের আয়ের টাকা পাঠান তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে প্রায় প্রতিটি শাখায় রেমিটেন্স হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেমিটেন্স তথ্য বেনিফিসিয়ারিকে দেয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। গ্রাহকরা যাতে কোনরূপ হয়রানি না হয় সেজন্য বিভিন্ন নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। এতে শতভাগ সাফল্য না এলেও ক্রমশ বাড়ছে বৈধপথে প্রবাসী আয় বাড়ানোর পরিমান। এবারের বাজেটেও প্রণোদনা দেয়া হয়েছে রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের। তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করেন, এসব উদ্যোগের কারণে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন প্রবাসীরা। তারা বর্তমানে আগের তুলনায় অধিক পরিমাণে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন বৈধ পথে। রেমিটেন্স প্রবাহের দিকে তাকালে তা বেশ বুঝা
যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স বিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে ( ২০১৮-২০১৯ ) গত ১৪ জুন পর্যন্ত ১৫৭০ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। আর গত অর্থবছরে মোট রেমিটেন্স এসেছিল ১৪৯৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, মোবাইলে হুন্ডি প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়িসহ আরও বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে। ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে গেছে গ্রামে-গঞ্জে, মানুষের দোরগোড়ায়। তাছাড়া, ডলারের বিপরীতে আগের তুলনায় বেশি টাকা পাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে অধিক রেমিটেন্স পাঠানোর দিকে ঝুঁকেছেন প্রবাসীরা। চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রধানত ১০টি দেশ থেকে অধিক পরিমানে রেমিটেন্স এসেছে বৈধপথে। দেশগুলো হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউএসএ, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, ওমান, কাতার, ইতালি এবং বাহরাইন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরু থেকেই বাড়ছে রেমিটেনস্ প্রবাহ। গত মে মাসে রেকর্ড পরিমাণ ১৭৫ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্সএসেছে। বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স জিডিপিতে অবদান রেখেছে ১২ শতাংশের বেশি। সরকারি, বেসরকারি এবং বিদেশি ৫৭ টি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স আসে। এগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এরপরের অবস্থান অগ্রণী ব্যাংকের। শীর্ষদশে অপর ৮টি ব্যাংক হলো-ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক এবং ব্যাংক এশিয়া।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট