চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে কৃষকরা কেন এত বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ৮:৫৫ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের করা এক জরিপে দেখা যাচ্ছে তাদের হাসপাতালে ক্যান্সারে আক্রান্ত যত পুরুষ রোগী ভর্তি হন – তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পেশায় কৃষক। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সংস্থাটির হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছেন তাদের ওপরে একটি জরিপ করেছে।

গত ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ২০১৭ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সংস্থাটির হাসপাতালে যত পুরুষ রোগী ভর্তি হয়েছেন – তাদের মধ্যে ৬৪ শতাংশই নানা ভাবে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। আর নারী-পুরুষ মিলিয়ে যত ক্যান্সার রোগী ভর্তি হয়েছেন – তাদের ৩৪ শতাংশই পেশায় কৃষির সাথে জড়িত। হাসপাতালটিতে ২০১৫ সালে ভর্তি পুরুষ ক্যান্সার রোগীর মধ্যে কৃষকদের সংখ্যা ছিল ৬০ শতাংশ। এরপর থেকে প্রতি বছর কৃষকদের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা উর্ধমুখী হতে দেখা যাচ্ছে জরিপে।

কৃষকরা কেন এত বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন?

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের এপিডেমোলজি বিভাগের ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার ছিলেন এই জরিপের প্রধান। তিনি বলছেন, “বাংলাদেশে সরাসরি এই বিষয়ে কোন গবেষণা নেই। কিন্তু কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে খুব দেরিতে তাদের ক্যান্সার শনাক্ত হয়। আর তারা খালি পায়ে, খালি গায়ে, হাত লাগিয়ে মাটি ও পানির মধ্যে কাজ করে। জমিতে যে কীটনাশক তারা দেয় – সেটির নিয়মিত সংস্পর্শে আসা একটি কারণ হতে পারে।”

তিনি আরো বলছেন, “পানিতে কারখানার রাসায়নিক দূষণ এখন অনেক বেশি। তার সাথে যখন কীট ও আগাছানাশক মিশে যাচ্ছে তখন তা আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। তার সংস্পর্শেও অনেক বেশি আসছেন কৃষকরা।”

কীটনাশকের সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক কতটা?

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের তথ্যমতে কৃষিতে ব্যবহৃত কিছু কীট ও আগাছানাশকের সাথে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্পর্কে রয়েছে। ৯০ এর দশক থেকে কৃষিতে আগাছানাশক ও কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা উবিনীগ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার বলছেন, “জাতিসংঘের স্টকহোম কনভেনশনে কৃষিতে ব্যবহৃত ১২ টি রাসায়নিককে তালিকাভুক্ত করে তাকে ডার্টি ডজন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যান্ড করেছে – কারণ সেগুলোর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, এমন বেশ কিছু কীট ও আগাছানাশক এখনো বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়। এরকম কয়েকটির নাম উল্লেখ করছিলেন তিনি। যেমন ‘এলড্রিন’, ‘ডাইএলড্রিন’, ‘ডিডিটি’, ‘এনড্রিন’, ইত্যাদি।

কিডনি, লিভার ও স্তনের ক্যান্সার, বন্ধ্যাত্ব, চোখ ও ত্বকের সমস্যা -এগুলো এসব রাসায়নিকের প্রভাবের মধ্যে অন্যতম। ফরিদা আক্তার আরো বলছেন, “বিশেষ করে ক্ষেত-মজুরের খরচ কমাতে আগাছানাশকের ব্যবহার বাংলাদেশে এখন অনেক বেশি হচ্ছে। যে কাজটা আগে মজুররা করতেন – সেটা এখন রাসায়নিক ছিটিয়ে করা হচ্ছে।” উবিনীগের তথ্য মতে, খাদ্য পণ্য উৎপাদন করে না এমন কৃষিতে – যেমন তামাক ও চা উৎপাদনে – অনেক বেশি রাসায়নিক ব্যবহার হচ্ছে। ফরিদা আক্তার বলছেন, বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি প্রবর্তন করার সাথেও কীটনাশক ব্যবহারের সম্পর্ক রয়েছে। তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট