চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ভাগ্নেকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান সোহেল তাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

১৮ জুন, ২০১৯ | ২:২৬ পূর্বাহ্ণ

এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ভাগ্নে সৈয়দ ইফতেখার আলম সৌরভের সন্ধান পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। গতকাল ঢাকার সেগুনবাগিচায় ডিআরইউ’র সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
সোহেল তাজ বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা আশা করব না অন্য কোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে এমন কিছু হোক। আজকে আমার ভাগ্নে, কালকে হয় তো আপনার ভাই হতে পারে। আরেক দিন হয়তো আপনার সন্তান হতে পারে। এটা আমাদের কারও কাম্য নয়। কার কী পরিচয় সেটা মুখ্য বিষয় নয়, আমার কী পরিচয় তাও মুখ্য বিষয় নয়। এখানে আইনের শাসনে রাষ্ট্র চলবে। ন্যায়বিচার সুবিচারের রাষ্ট্রে এ রকমটা হওয়া বা এমন পরিণতির শিকার হওয়া কাম্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ সৌরভের মা অভিযোগ করেন, বেঙ্গল বিউটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করে তার ছেলে সৌরভ। এই চলচ্চিত্রের পরিচালকও ছিল সে। সেই সময় একটি মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ও তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সৌরভ তখন চট্টগ্রামে থাকতো। পরবর্তীতে মেয়েটি তাকে বিয়ে করার চাপ দেয়। বিষয়টি মেয়ের বাবা জানতে পেরে তাকে অন্যখানে বিয়ে দেয়। তবে কয়েক মাসের মধ্যে ২০১৮ এর এপ্রিল বা মে মাসে সে বিয়ে ভেঙে যায়। এ বিয়ে ভাঙার জন্য আবারও সৌরভকে দায়ী করে মেয়ের বাবা। এজন্য তিনি সৌরভসহ আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। তিনি আরো জানান, এরই জের হিসেবে ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আমার ছেলেকে উত্তরার র‌্যাব হেড কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে গিয়ে এবং প্রথমে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার কথা বলে এবং তার মোবাইল পরীক্ষা করে। তবে সৌরভের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনও প্রমাণ তারা পাননি বলে দাবি করেন তিনি। তবে মেয়েটির সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ না রাখার নির্দেশ দেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি বনানী থানার ওসি সৌরভকে ফোন করে আসতে বলেন। পরের দিন (১২ ফেব্রুয়ারি) সে থানায় গেলে ওসি তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং তাকে বিভিন্ন অশ্লীলতায় জড়িয়ে থানায় মামলা করে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন না করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এর এক সপ্তাহ না যেতেই সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সৌরভের কর্মস্থল ব্র্যাক সেন্টারে উপস্থিত হয়। সে সময় আমার ছেলে সেখানে উপস্থিত না থাকায় তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তাদের মোবাইল নম্বর দিয়ে দ্রুত যোগাযোগ করতে বলে। পরে সৌরভের বাবা এবং সৌরভ ওই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বনানী স্টার কাবাবে দেখা করে। ওই দুই কর্মকর্তা জানান, তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে তারা একটি অভিযোগ তদন্ত করছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমার ছেলে কোন কোন দেশে ভ্রমণ করেছে, কবে গিয়েছে এসব নানা বিষয়ে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর উত্তরে সৌরভ জানায়, সে মাত্র দুইবার কলকাতায় গিয়েছে এবং তারা বিস্মিত হয়ে প্রমাণ হিসেবে পাসপোর্ট এর ফটোকপি সংগ্রহ করে। যাওয়ার সময় তারা বলে যায়, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি এটা একটা সাজানো নাটক। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টা জানাবো।’ তিনি আরো বলেন, এরপর ১৬ মে আমাদের পারিবারিক বন্ধুর বাসা থেকে সৌরভকে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয় দিয়ে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার সময় সিসিটিভির ফুটেজসহ হার্ডডিস্ক নিয়ে যায় তারা। তবে একইদিন গভীর রাতে আবার ফেরত দিয়ে যায়। সৌরভের কাছে জানতে চাইলে সে বলে একটি অজ্ঞাত স্থানে চোখ বাঁধা অবস্থায় হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দীর্ঘ ১৫-১৬ ঘণ্টা বন্দি করে রাখার পর সম্ভবত দুপুর দুইটার দিকে ৮-১০ জন লোক তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়বস্তুর একাংশ ছিল সেই মেয়ে সংক্রান্ত। সৌরভ তাকে জানিয়েছে, সেসময় তারাই উল্লেখ করে যে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে যুক্ত হওয়ার অভিযোগ আনা হলেও অনুসন্ধানে এর সত্যতা পায়নি তারা।
তিনি দাবি করেন, এরপর সৌরভকে বাসায় ফেরত দিয়ে একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে অক্ষত অবস্থায় ফেরত পাওয়ার স্বীকারোক্তি নিয়ে যায় র‌্যাব। এরপর গত ৮ জুন দুপুর বেলা সৌরভের কাছে র‌্যাবের একটি ফোন আসে এবং সৌরভকে বলে চাকরি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট, সার্টিফিকেট ও জীবনবৃত্তান্ত রেডি রাখতে, তারা আবার সৌরভকে সময়মতো ফোন দিয়ে কাগজ সংগ্রহ করে নেবে। ৯ জুন দুপুর তিনটার সময় র‌্যাব সদস্যরা সৌরভের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করে এবং প্রয়োজনীয় কাগজ ও পাসপোর্টসহ চট্টগ্রাম মিমি সুপার মার্কেটে সন্ধ্যা ৭ টায় উপস্থিত হতে বলেন। চাকরির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে গিয়ে আমার ছেলে আমার কাছে আর ফিরে আসেনি আর তার মোবাইল বন্ধ। আমরা মনে করছি, আমাদের ছেলে রাতের মধ্যে ফিরে আসবে কিন্তু বাসায় না আসলে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ছেলের খোঁজ করি এবং না পেয়ে পরের দিন সকালবেলা থানায় একটি জিডি করি। এ ঘটনার সমাধানে কান্না ভেজা কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এসময় সোহেল তাজ বলেন, আমাদের আজকের সংবাদ সম্মেলনের মূল বিষয় হলো সৌরভকে জীবিত অক্ষত অবস্থায় ফেরত পাওয়া। আমি এই বিষয়টি নিয়ে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপি সঙ্গে কথা বলেছি। আমি আশা করবো আইন বহির্ভূত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার যদি কেউ করে থাকে এতে আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট