চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

৩শ বার কান ধরে উঠবস, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ছাত্রের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, খাগড়াছড়ি

১৭ জুন, ২০১৯ | ১০:১৮ অপরাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে প্রধান শিক্ষকের হাতে নির্যাতিত সেই স্কুল ছাত্র হোসেন আলীকে (১২) আর বাঁচানো গেলো না। দীর্ঘ এক মাস ভারতের চেন্নায়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলো ছোট্ট আলী।
গত শুক্রবার (১৪জুন) রাতে ভারত থেকে লাশ আসার পর মহালছড়ির গ্রামের বাড়ি সিলেটি পাড়ায় তাকে দাফন করা হয়।
ছেলেকে হারিয়ে শোকাহত মা ইয়াসমিন আক্তার বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। পুরো গ্রাম জুড়ে চলছে শোকের মাতম ।
ক্ষুব্দ পিতা মো. শফিউল আলম ও নানা সুলতান আহমেদ পূর্বকোণকে জানান, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র হোসেন আলীকে প্রধান শিক্ষক তার বাসায় প্রাইভেট পড়াত । দুই দিন ধরে পড়তে না যাওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাকে ৩১০ বার কান ধরে উঠ-বস করান ও ২০ মিনিট ধরে তাকে হাঁটুর নিচে মাথা রেখে শাস্তি প্রদান করেন। এ সময় তার মুখ দিয়ে লালা বের হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে প্রথমে খাগড়াছড়ি ও পরে চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে ভারতের চেন্নাইয়ে পাঠানো হয় গত মে মাসে । সেখানে এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে হোসেন আলী মৃত্যুর মুখে ঢলে পরে ।
তারা আরো জানান, ইউপি চেয়ারম্যান রতন শীলসহ ভারতের চেন্নায়ে যাওয়ার আগে শিক্ষা অফিসে এক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষক মহিন ছাত্র হোসেন আলীর চিকিৎসার জন্য এক লক্ষ টাকা প্রদান করেন ।
তার নানা ও পিতা অভিযুক্ত শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।
মহালছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার দিপিকা খীসা জানান, অভিভাবকরা আমাকে একটা লিখিত অভিযোগ করেছেন । সে অনুযায়ী আমরা প্রাথমিকভাবে ছাত্রকে শাস্তি দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তবে ইউপি চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর ও ছাত্রের চিকিৎসার জন্য এক লক্ষ টাকা অভিভাবকের কাছ দেয়ায় তদন্ত কাজ স্থগিত হয়ে যায় ।
তবে অভিভাবকরা চাইলে নতুন করে তদন্ত শুরু করবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো.মহিন উদ্দিন খন্দকারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, মানবিক কারণে আমি চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছি। তবে তিনি কত টাকা দিয়েছেন তা এড়িয়ে যান।
নিহত ছাত্র আলীর বাবা পেশায় একজন চা বিক্রেতা। তার ৪ সন্তানের সকলেই অধ্যয়নরত। তাদের পড়ালেখার জন্য রাতদিন পরিশ্রম করতেন তিনি । ছেলেকে হারিয়ে শফি এখন প্রলাপ বকছেন ।
অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচারের দাবিতে ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে মহালছড়িবাসি।

পূর্বকোণ/ময়মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট