চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এলপি গ্যাসের বড় লাফ

সিলিন্ডারপ্রতি দুইশ’ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি

আল-আমিন সিকদার

৬ জানুয়ারি, ২০২১ | ১২:০৭ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে আবারও বাড়লো বোতলজাত এলপি গ্যাসের (লিক্যুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) দাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কোম্পানিভেদে প্রতি সিলিন্ডার (১২ কেজি) ডিলারদের কাছে বিক্রি করছে গত মাসের (ডিসেম্বর, ২০২০) তুলনায় একশ’ থেকে ১২০ টাকা বেশিতে। জানুয়ারির এক তারিখ থেকে হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধির এ প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। গ্রাহকরা এক মাসের ব্যবধানে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেশি দিয়ে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও সরকারি এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। দাম বাড়ানোর পর সরকারি এলপি গ্যাসের সাথে এখন বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সিলিন্ডারপ্রতি ব্যবধান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ শ’ টাকা।

একাধিক সরবরাহকারী, পরিবেশক ও ক্রেতা সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারির এক তারিখ থেকে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত সাড়ে ১২ কেজি ওজনের প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ছাড়িয়েছে হাজারের অংক। গেল বছরের ডিসেম্বরে যে সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে ৮২০ থেকে ৮৫০ টাকায়, চলতি মাসের শুরু থেকে সেই সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০ টাকায়। একইভাবে হোটেলে বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত ৩৫ কেজির গ্যাস দুই হাজার ৬০০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায় এবং তিন হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ৪৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়।

যদিও বিপিসি’র এলপি গ্যাসের প্রতিটি সিলিন্ডার (১২ কেজি) বিক্রি হচ্ছে পূর্বের দামে অর্থাৎ ৬৫০ টাকায় বলে জানিয়েছেন এলপি গ্যাস কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. আনোয়ার হোসেন।

চট্টগ্রামের বোতলজাত এলপি গ্যাসের ডিলার সমিতির সভাপতি সাইফুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, ‘জানুয়ারির প্রথম দিন থেকেই বোতল প্রতি (১২ কেজি) একশ’ থেকে ১২০ টাকা করে দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। গ্রাহকরা এক মাসের ব্যবধানে এখন ৯৫০ টাকায় কিনছেন বোতলজাত গ্যাস সিলিন্ডার যেটি আগের মাসেও ছিল ৮২০-৮৫০ টাকা।’

 

খুচরা বাজারের কোথাও হাজার টাকার নিচে সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিছু দোকানদার হয়ত দাম বাড়ার এ সুযোগ নিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে অধিক আদায় করছেন। তবে ৯৫০ টাকায় বিক্রি করেও লাভ করা সম্ভব।’ দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়ার কথা জানান।

লিক্যুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস তৈরির কাঁচামাল বিক্রেতা দেশ সৌদি আরবের ‘সৌদি আরামকো’র ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর মাসের তুলনায় প্রতি মেট্রিক টন কাঁচামালে দাম বেড়েছে গড়ে ৮৫ মার্কিন ডলার। গত মাস অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতি মেট্রিক টন প্রোপেইনের মূল্য উল্লেখ রয়েছে ৪৫০ মার্কিন ডলার। চলতি মাসের (জানুয়ারি) এক তারিখ থেকে এর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ মার্কিন ডলার। পাশাপাশি বিউটেন এর মূল্য ছিল প্রতি মেট্রিক টন ৪৬০ মার্কিন ডলার। যেটি এখন দাঁড়িয়েছে ৫৩০ মার্কিন ডলারে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সাথে সাথে দেশীয় বাজারে এর প্রভাব পড়তে কমপক্ষে ২০ দিন থেকে একমাস পর্যন্ত সময় লাগার কথা। কারণ ডিসেম্বর মাসের আর্ন্তজাতিক রেটে কেনা কাঁচামাল দেশে আসতে যে সময় লাগে, সেই সময়টুকুও এখানকার ব্যবসায়ীরা দেননি। তারা পুরনো সিলিন্ডারই এখন বর্ধিত দরে বিক্রি করছেন।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন বলেছেন, গ্যাস সিলিন্ডারের বাজারে প্রশাসনের কোনো তদারকি কিংবা খবরদারি না থাকায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। লাভের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা কোম্পানিগুলোতে তদারকি বাড়িয়ে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতের আহবান জানান তিনি।

বিপিসির এলপিজির সাথে কেন বোতলপ্রতি ৪শ’ টাকা ব্যবধান এবং আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব কীভাবে সাথে সাথে দেশের বাজারে পড়ে জানতে চাইলে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের এক কর্মকর্তা পূর্বকোণকে বলেন, ‘এলপিজি ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে কাঁচামাল তৈরি করে গ্যাস উৎপাদন করে। এতে করে তাদের সিলিন্ডার প্রতি খরচ পড়ে অনেক কম। আমাদের আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভ্যাট দিয়ে কাঁচামাল ক্রয় করে এনে বোতলজাত পর্যন্ত অনেক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এতে করে দামের অনেক তারতম্য থাকে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট