চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ফিরে দেখা: বিশ্ব কাঁপল করোনায়, দাগ কেটেছেন ট্রাম্প

পূর্বকোণ ডেস্ক 

২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ | ২:৩৬ অপরাহ্ণ

আক্ষরিক অর্থেই করোনার কাছে এক অসহায় আত্মসমর্পণের ছবি অঙ্কিত হয়েছে ২০২০ সাল জুড়ে। মূলত ২০২০ সাল চিরকালই বিশ্বে করোনার বছর হিসাবে পরিগণিত হবে। এই অভিশপ্ত বছরে করোনার জেরে যেমন একের পর এক প্রাণহানি হয়েছে, তেমনই বহু মানুষের আর্থিক কষ্ট থেকে জীবনধারণ সংকটে পড়ে যায়। একনজরে দেখা যাক ২০২০ সালের করোনার টাইমলাইন।

করোনার প্রথম খবর!

২০২০ সালের মার্চ মাসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনার প্রথম খবর চিনের হুবেই প্রদেশে আসে। তারিখ ছিল ১৭ নভেম্বর ২০১৯। যদিও করোনা নিয়ে চিনের উহান শহরের নামই প্রথমে শোনা যায়, তবে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ বলছে করোনার প্রথম খবর আসে হুবেই প্রভিন্স থেকে। যদিও পেশেন্ট জিরো নিয়ে এখনও জল্পনা থেকে যাচ্ছে। ছড়াতে থাকে রোগ! চিনের হুবেইতে ১৭ নভেম্বর এক বর্ষীয়ান দম্পতি ভর্তি হন। অদ্ভুত ধরনের এক নিউমোনিয়া নিয়ে তাঁরা ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসকরা কিছুতেই পরীক্ষা নীরিক্ষা করে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারছিলেন না। এরপর ২০০৩ সালের সার্সের লক্ষণ কিছুটা উঠে আসতে থাকে রোগীদের শরীর থেকে। ফোকাসে উহান ও চিনের বার্তা এরপর উহান সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল বিষয়টিকে হাতে নেয়। এরপর উহানেও এমনই ঘটনার কথা জানা যায়। রোগীদের নিউমোনিয়া ধরে চিকিৎসা শুরু করেও হাল ছাড়তে থাকেন একের পর এক চিকিৎসক। ডিসেম্বরে রোগের খবর প্রকাশ্যে ২০১৯-এর শেষ দিনে চিন জানাতে বাধ্য হয় যে উহানে কয়েকটি ভাইরাল নিউমোনিয়ার ঘটনা ঘটেছে। যার নেপথ্যের রহস্য ধরা যাচ্ছে না। উহানের সামুদ্রিক প্রাণী বিক্রির বাজার ফোকাসে আসে। একদিকে ততদিনে মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে করোনা ছড়ায়। উহানের ভাইরোলজি সেন্টার বিশ্বের নজরে আসতে থাকে। ততদিনে দেশ থেকে দেশান্তরে করোনার প্রকোপের খবর ছড়াতে শুরু করে।

বিশ্বে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি

এরপর চিনে ক্রমাগত দাবানলের মতো বাড়তে থাকে করোনার প্রভাব। সেই বার্তা যায় বিভিন্ন দেশে। একাধিক ইউরোপীয় দেশ যখন ভাবছে , এই রোগ নিয়ে তারা কোনপথে হাঁটবে, তখন থেকেই ইউরোপে ঢুকতে শুরু করে করোনা। ফেব্রুয়ারি নাগাদ, ইরান থেকে ইতালি, স্পেন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় করোনার জেরে। এরপর করোনার ভারত প্রবেশ। ভারতে প্রথম করোনায় মৃত্যু মার্চের ১৪ তারিখের মধ্যে ভারতে পর পর ২ জনের করোনায় মৃত্যুর কথা জানা যায়। এঁদের মধ্যে একজন দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকে, অন্যজন দিল্লিতে। ভারতের প্রথম করোনায় মৃত ব্যক্তি কর্ণাটকের। তারপর থেকেই দেশে দেশে আতঙ্ক বাড়তে থাকে। প্রতিদিন একজন, দুজন করে মানুষের মৃত্যু সংবাদ আসে। ভয় ধরে গোষ্ঠী সংক্রমণের। শুরু হয় লকডাউন পর্ব। মুদি দোকানগুলিতে লম্বা লাইন পড়ে যায়। সবেচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকা, চিন-মার্কিন সংঘাত করোনার জেরে অন্য মোড় নেয়। একটা সময় প্রায় ১ লাখের কাছাকাছি মানুষ দৈনিক আক্রান্ত হন আমেরিকায়। এমন পরিস্থিতিতে তখনএ লকডাউন না ঘোষণা করে চিনের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তায় হাঁটেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

২৮ এপ্রিল হু’র বড় ঘোষণা

হুয়ের কর্তা টেড্রস গ্যাব্রিয়েসস দাবি করেছেন, এখনই বিশ্ব ছেড়ে যাবে না করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসের দংশন শেষ হতে এখনও অনেক বছর সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন অনেক লম্বা রাস্তা রয়েছে এই বিষয়ে কাজ করার জন্য।’ আতঙ্কে চলতে থাকেন মানুষ। অপেক্ষা শুরু হয় ভ্যাকসিনের। এদিকে, ততদিনে ভারত বিশ্বের করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে।

করোনার জন্মদিন ও ভ্যাকসিনের প্রতীক্ষার অবসান

২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের জন্মদিন হিসাবে ১৭ নভেম্বরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেদিনই প্রথম চিনে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয় বলে খবর। এরপর ডিসেম্বরের প্রথমেই ভ্যাকসিন আসার সুসংবাদ আসে। কাদের আগে দেওয়া হবে তাও জানান দিয়ে দিয়েছে সরকারগুলো।

মহামারীর এই তান্ডবে বসে থাকেননি বিজ্ঞানীরা। আবিষ্কার হয়ে গেছে একাধিক টিকা। প্রথম সফল উদ্ভাবক হিসেবে অনুমোদন পেয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো বেশকটি দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকাদান কর্মসূচি। ৮ ডিসেম্বর ব্রিটেনের ৯০ বছর বয়স্কা মার্গারেট কিনান ১ম ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে ইতিহাসের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। আরও রয়েছে মার্কিন কোম্পানি মডার্না, রাশিয়ার স্পুটনিক ফাইভ, চীনের সিনোভ্যাক ও যুক্তরাজ্যের অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো কার্যকরী টিকা। যার সিংহভাগই করোনা দমনে ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হচ্ছে।

তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলেও, বিশ্বজুড়ে থামেনি সংক্রমণ। ডিসেম্বরেই একদিনে করোনায় রেকর্ড সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখেছে বিশ্ব। বহু দেশই পুনরায় হাঁটা শুরু করেছে লকডাউনের পথে। ভবিষ্যত নিশ্চিন্ত নয় এখনো।

বিশ্ব রাজনীতিতে বড়সড় দাগ কেটেছে ট্রাম্পের পরাজয়

শুধু করোনা মহামারীর জন্য নয়, ২০২০ সাল মনে দাগ কাটবে মার্কিন রাজনীতিতে বড়সড় রদবদলের জন্যও। সদ্য সমাপ্ত মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জো বাইডেনের কাছে কার্যত নাস্তানাবুদ হয়েছেন ট্রাম্প। হেরেছেন বড় ব্যবধানে। তবে ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে সরব ছিলেন ট্রাম্প। যদিও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বিশেষ থই পায়নি ট্রাম্পের ভিত্তিহীন দাবি।

রেকর্ড ভেঙে পরাজয়

এ বছর বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে ঘটেছে একাধিক পট পরিবর্তন। তারমধ্যে বড়সড় স্মৃতি চিহ্ন হয়ে থেকে যাবে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এদিকে ভোটে হারলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সাত কোটি ভোট পেয়েছেন, যা আমেরিকার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট। পাশাপাশি গোটা আমেরিকায় মোট ভোটের ৪৭ শতাংশের বেশি পেয়েছেন খোদ ট্রাম্প। হেরে গিয়েও গড়লেন নয়া রেকর্ড পাশাপাশি পরাজিত হয়েও নতুন ইতিহাস গড়লেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর হাতেই ভাঙতে চলেছে গত ৩ দশকের পুরনো রেকর্ডও। ১৯৯২ সালে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী বিল ক্লিন্টনের কাছে পরাজয়ের পর আর কোনও মার্কিন রাষ্ট্রপতিই দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে পরাজিত হননি। এবার সেই রেকর্ডই ভেঙে ফেললেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের খামখেয়ালীপনা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা

জনস্বার্থবিরোধী কর্মকা-ের শিখড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ট্রাম্প জনমনে বিদ্বেষকে খুঁচিয়ে তুলে তাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা, একাধিক জনস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ চড়া জাতীয়তাবাদের মোড়কে পুরে বাজারে খাইয়ে দেওয়ায় ট্রাম্পের জুড়ি মেলা ভাড়। জাতীয়বাদে সুড়সুড়ি দিয়ে কড়া ভিসা আইন প্রবর্তন হয়েছে। বর্ণবৈষম্যে বারবার কলুষিত হয়েছে আমেরিকা। আজও স্মৃতির পাতায় দগদগে হয়ে রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের মার্কিন পুলিশের হাতে সেই নির্মম হত্যাকা-। আর এসবই কিন্তু ট্রাম্পের আমলেই।

জোর করে একাধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা

পাশাপাশি এর আগে বাড়তি খরচের দোহাই দিয়ে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকার নাম প্রত্যাহার করে নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতেও গোটা বিশ্বের কাছে রীতিমতো মুখ পুড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এরকম একাধিক কারণেই দীর্ঘ দিন থেকে আমেরিকার আম-আদমির মনে ধীরে ধীরে জনরোষ পুঞ্জিভূত হচ্ছিল বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

মুসলিম বিশ্বের রোষানলে ট্রাম্প

অন্যদিকে ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিককে আমেরিকায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ট্রাম্প। যার ফলে আরব দুনিয়া সহ গোটা মুসলিম বিশ্বের রোষানলে পড়েন ট্রাম্প। যার ছাপ পড়ে মার্কিন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট