চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনা ভ্যাকসিননামা

২১ ডিসেম্বর, ২০২০ | ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ভ্রান্ত ধারণা থেকে দূরে থাকুন
একশ বছর আগে ১৯১৮ সালে আমেরিকার যখন মহামারি স্পেনিশ ফ্লু দেখা দেয় তখন এ রোগের কোন ভ্যাকসিনই বের হয়নি। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ বিনা চিকিৎসায় এ রোগে মারা গিয়েছিল তখন। শত বছর পর আরেকটি মহামারি করোনার (কোভিড- ১৯) প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও সৌভাগ্যক্রমে এক বছরের মধ্যে এ রোগের টিকা আবিষ্কার হয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির কল্যাণেই ত্বরিত টিকা আবিষ্কার এমনকি ইতোমধ্যে টিকার প্রয়োগও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও এই টিকা আসছে আগামী জানুয়ারি মাসে। কিন্তু এ সুখবরের পাশাপাশি সমাজে এ নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ভ্রান্ত ধারণার কারণে মানুষের মনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন, সন্দেহ ও সংশয়। যার বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএন’র বিশেষজ্ঞগণ। পূর্বকোণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে সেসব প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরা হল পৃষ্ঠা জুড়ে এ আয়োজনে। – সম্পাদক

সাধারণত একটি নিরাপদ ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হতে কয়েক বছর সময় নেয়. কিন্তু সম্মুখসারির এ দুটি ভ্যাকসিন কীভাবে মাত্র ১০ মাসে উন্মুক্ত হলো?
এটা ঠিক বেশিরভাগ ভ্যাকসিনই আবিষ্কৃত হতে কয়েক বছর এবং কিছু ক্ষেত্রে কয়েক দশকও লেগেছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপারেশন ওয়ার্প স্পিড এবং যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিন টাস্কফোর্সের মতো উদ্যোগ নিয়ে সরকারগুলি ভ্যাকসিন তৈরিকারক সংস্থাগুলিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এ মহামারীটি সারা বিশ্ব জুড়ে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়কে এমনভাবে উজ্জীবিত করেছিল যে, ভাইরাস কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য কয়েক ডজন দেশের গবেষকরা প্রায় একযোগেই কাজে নেমে পড়েছিল। ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হবার পর পরই সেগুলো ঠিকঠাকভাবে কার্যকর হবে কিনা তা জানার আগেই বিশে^র নানা জায়গায় পরবর্তী ধাপগুলোর কাজ এগিয়ে নেয়া হয়েছিল। দ্রুত ভ্যাকসিন উৎপাদনের ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়ে রাখা হয়েছিল। সোজা কথায় এর অর্থ দাড়িয়েছে আমাদের ব্যবহারের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডোজ প্রস্তুত।

এই ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর?
ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার- দুটি ভ্যাকসিনই ৯০%-এরও বেশি কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, অন্যান্য ভ্যাকসিনের চেয়ে এ হার অনেকটাই বেশি। তবে ফলাফলগুলি ছিল ভ্যাকসিনগুলোর প্রাথমিক ট্রায়ালের ওপর ভিত্তি করে। বলাবহুল্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলোও এ অবস্থায় ভ্যাকসিন অনুমোদন দেবেনা জেনেই কোম্পানিগুলো তাদেও ২য় ও ৩য় পর্যায়ের ট্রায়ালও চালিয়ে গেছে। ফলাফল হয়েছে দারুণ ইতিবাচক। মডার্না তাদের পরীক্ষায়, ১৫ হাজার অংশগ্রহণকারীকে একটি প্লাসিবো (স্যালাইনের শট) দেয়- যা কোনও প্রভাব ফেলেনি। বেশ কয়েক মাস পরে, এই লোকগুলির মধ্যে ৯০ জন কোভিড -১৯-এ আক্রান্ত হয়। আরও ১৫ হাজার জন অংশগ্রহণকারীকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল, এবং তাদের মধ্যে পাঁচ জন কোভিড -১৯-এ আক্রান্ত হয়েছিল। প্লাসিবো প্রাপ্তদের মধ্যে ১১ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তবে যারা এই ভ্যাকসিন পেয়েছিলেন তাদের কেউই গুরুতর অসুস্থ হননি। আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউটের প্রধান বায়োটেক সংস্থা মোদার্নার কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন পরীক্ষার্থীর প্রাথমিক তথ্যকে প্রশংসা করে বলেছে যে এটি “ধারণার প্রমাণ”, তবে সতর্ক করা হয়েছে যে ফলো-আপ কার্যকারিতার দিক থেকে এটি এখনও প্রথম দিন। এটা ঠিক নতুন করোনভাইরাস ভ্যাকসিনগুলি বাস্তবে কীভাবে কার্যকর হবে সে সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই অজানা রয়েছে। তারা পুরোপুরি সংক্রমণ রোধ করবে বা গুরুতর অসুস্থতার সম্ভাবনা কম করবে কিনা তাও পরিষ্কার নয়। এমনকি চিকিৎসকরা জানেন না তাদের সুরক্ষা কত দিন স্থায়ী হবে। যাইহোক, ফৌসি এটিকে ‘এটি যতটা পারা যায় তত ভাল’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি আগে বলেছিলেন যে তিনি ৭০% থেকে ৭৫% কার্যকর একটি ভ্যাকসিন স্থির করবেন। ভ্যাকসিনগুলির বিভিন্ন কার্যকারিতা হার রয়েছে। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য মার্কিন কেন্দ্রগুলির মতে, পোলিও ভ্যাকসিনগুলির একটি পূর্ণ ডোজ ৯৯% থেকে ১০০% কার্যকর; ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং পের্টুসিসের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ টিকা ৮০% থেকে ৯০% কার্যকর, তবে ফ্লু ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বছরের পর বছর পরিবর্তিত হয়।

ভ্যাকসিনগুলি কতটা নিরাপদ এবং এর কীরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে?
মডার্না বলেছে, তাদের ভ্যাকসিনের কোনও উল্লেখযোগ্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। যারা এটি নিয়েছেন তাদের অল্প শতাংশই শরীরে ব্যথা এবং মাথাব্যথার মতো লক্ষণ অনুভব করেছেন। একটি ফ্লু শটের পরে লোকেরা যেভাবে অনুভব করতে পারে তার অনুরূপ এবং এটি একটি লক্ষণ যা প্রতিরোধ প্রতিরোধ তৈরির জন্য ভ্যাকসিন কাজ করছে। সুরক্ষার বিষয়ে তেমন উদ্বেগের কথা জানা যায়নি। এর প্রধান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি হল- ইনজেকশনস্থসে ব্যথা, ক্লান্তি, পেশী বা জয়েন্টে ব্যথা এবং মাথাব্যথা যা দ্বিতীয় ইনজেকশনের পরে আরও ঘন ঘন ঘটে বলে মনে হয়। এখন পর্যন্ত যেহেতু , ভ্যাকসিনগুলো জরুরীভাবে ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে তাই সিডিসি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করবে এবং সুরক্ষাবিষয়ক কোনোও ঘাটতি রয়ে গেছে কী না তা মনিটর কওে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।

এই ভ্যাকসিনগুলি কীভাবে কাজ করে? অনেকেইএদের এখনো ‘পরীক্ষামূলক ব্যবহার’ হচ্ছে বলে মনে করছেন?
ভ্যাকসিনগুলি সাধারণত ভাইরাস থেকে রক্ষা করে এমন একটি অংশের নকল কওে তৈরি যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। মডর্না এবং ফাইজার উভয়ের ভ্যাকসিনগুলি একটি নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে তৈরি- যা এর আগে অনুমোদিত কোনোও ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত হয়নি। দুটি ভ্যাকসিনই ‘মেসেঞ্জার আরএনএ’ বা এমআরএনএ নামে একটি কৌশল যাতে ভাইরাসের কোনও অংশের চেয়ে জেনেটিক কোড ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মডার্না এবং ফাইজার’র এই কৌশল যেমন ফলদায়ক হয়েছে তেমনি ভ্যাকসিন উৎপাদন করাকে আরও সহজ এবং ত্বরান্বিত করতে পারে। ভবিষ্যতে যেকোনও সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য (এবং বিদ্যমান রোগজীবাণুর বিরুদ্ধেও) এটি সহায়ক হতে পারে। অন্যান্য সংস্থাগুলি ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ভ্যাকসিন তৈরি করছে; যেমন – অক্সফোর্ড / অ্যাস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিনটি একটি নিরীহ পরিবর্তিত শিম্পাঞ্জি ভাইরাস থেকে তৈরি করা হয়েছে।

কখন এটি ব্যাপকভাবে পাওয়া যেতে পারে?
যদিও ফাউসি বলেছিলেন যে তিনি আশা করছেন যে প্রথম কোভিড -১৯ টিকা ডিসেম্বরের শেষের দিকে শুরু হবে, প্রাথমিকভাবে সেখানে সবার জন্য পর্যাপ্ত টিকা থাকবে না। সর্বাধিক অগ্রাধিকারের গোষ্ঠীগুলির মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, প্রবীণ এবং অন্তর্নিহিত চিকিৎসা শর্তাবলীযুক্ত ব্যক্তিরা প্রথমে ভ্যাকসিনটি পাবেন। তবে এখন ধারণা করা হচ্ছে- এপ্রিলের শেষের দিকে অন্যরা এ টিকা দেওয়া শুরু করতে পারবে। অবশ্য অবস্থার ফেড়ে পড়ে এটি মে, জুন, জুলাইয়েও গড়াতে পারে। হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্রের কথাই এখানে বলা হচ্ছে।

বৃদ্ধ, গর্ভবতী বা চিকিৎসাগতভাবে দুর্বলদের কী হবে?
মডার্নার ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ৩০,০০০ স্বেচ্ছাসেবীর মধ্যে ৭ হাজারেরও এর বেশি আমেরিকান ৬৫ বছরের বেশি বয়সের ছিল। ৫ হাজারেরও বেশি আমেরিকান ছিল ৬৫ বছরের কম বয়সী কিন্তু যাদের উচ্চ ঝুঁকির দীর্ঘস্থায়ী রোগ, গুরুতর কোভিড -১৯, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং হৃদরোগ ছিল। গবেষণায় বর্ণ ও সম্প্রদায়ের ১১,০০০ এরও বেশি অংশগ্রহণকারীও অন্তর্ভুক্ত ছিল; যার মধ্যে ৬ হাজারেও বেশি হিস্পানিক বা ল্যাটিন সিাবে চিহ্নিত করেন এবং ৩,০০০ এর বেশি অংশগ্রহণকারী ছিল ব্ল্যাক বা আফ্রিকান আমেরিকান। মডার্না বলছে, তারা ফলাফলের মধ্যে কোনও পার্থক্য পায়নি।
যেহেতু গর্ভবতী মহিলাদের বিষয়ে কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের সুরক্ষা সম্পর্কিত এখনও পর্যাপ্ত তথ্য নেই, তাই তাদের জন্য এই ভ্যাকসিনটি এখনও অনুমোদিত নয। এফডিএ’র জীববিজ্ঞান বিষয়ক মূল্যায়ন ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ডা. পিটার মার্কস বলছিলেন,“গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে কোভিড -১৯ রি-অ্যাকশন পরীক্ষিত নয় বিধায় এটি এই মুহূর্তে আমরা তাদেও জন্য সুপারিশ করছি না,”। ফাইজার ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলি সক্রিয়ভাবে কোনোও গর্ভবতী মহিলাকে তালিকাভুক্ত করেনি, তবে ২৩ জন স্বেচ্ছাসেবক পরীক্ষাকালীন সময়ে গর্ভবতী হয়েছিলেন। কিন্তু তাদেও ক্ষেত্রে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার দেখা মেলেনি। ফাইজার-বায়াএনটেক এ মহিলদের পর্যবেক্ষণে রেখেছিল। পর্যবেক্ষণের তথ্য অনুসারে, এ গর্ভবতী মহিলাদের ঝুঁকি কম বলে বিবেচিত হয়েছে। যেহেতু এমআরএনএ ভ্যাকসিনগুলিতে কোনও লাইভ ভাইরাস নেই, তাই এগুলি শরীরে জিনগত পরিবর্তন করতে পারে না। তাই আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টস (এসিওজি) সুপারিশ করেছিল যে ভ্যাকসিনগুলি থেকে গর্ভবত দের বিরত রাখা উচিত নয়, বিশেষ করে যারা টিকা দেওয়ার মানদ- পূরণ করে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালটিতে দুধ পান করানো মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তবে এমআরএনএ ভ্যাকসিনগুলি বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুদের পক্ষে ঝুঁকি বলে মনে করা হচ্ছে না; তাই এসিওজি ওই মহিলাদেরও ভ্যাকসিন পাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে। অন্তর্নিহিত চিকিৎসা শর্তযুক্ত ব্যক্তিরা কোভিড -১৯ টি ভ্যাকসিন পেতে পারেন। ফাইজার ভ্যাকসিনের শেষ পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলি সুস্থ মানুষদের মতোই অন্তর্নিহিত শর্তযুক্ত লোকদের ক্ষেত্রেও একই রকম ফলাফল দেখিয়েছিল। সংস্থাটির মতে, বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্করাও ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে টিকা দেওয়ার পরে কম এবং হালকা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

ভ্যাকসিনগুলি কি বাধ্যতামূলক হবে? আমি যদি টিকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই তবে কী হবে?
কিছু লোক ভ্যাকসিন নেয়াকে তাদের দেশপ্রেমিক দায়িত্ব হিসাবেই হয়তো দেখবে, তবে অন্যরা তা নাও করতে পারে। যুক্তরাজ্য বলেছে যে, সেদেশে ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক হবে না। ফাউসিও বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রেও ভ্যাকসিন নেয়া বাধ্যতামূলক হবে না।
যদি আপনি কোনও টিকা দেওয়ার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেন, তবে সেটা হে একান্তই আপনার নিজের ব্যাপার। তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে এটা কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে আপনাকে সুরক্ষা দেবার পাশাপাশি আপনার থেকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে রয়েছে অমন ব্যক্তিদেরও সুরক্ষা দেয়। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের মতে একটা সম্প্রদায়ের আক্রান্তের ঝুঁকি এড়াতে কমপক্ষে ৫৫% জনগণের কোভিড -১৯ টিকা গ্রহণের প্রয়োজন হবে। কিছু বিজ্ঞানীর ধারণা এটা আরও উচ্চতর সংখ্যাই হবে।

কোভিড -১৯ ভ্যাকসিন নেয়ার পরে শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কত দিন স্থায়ী হবে?
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বলছে, এখনি এটা বলা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। কোভিড -১৯ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সনাক্ত হওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনগুলি যেহেতু নতুন, তাই এটি পরিষ্কার নয় যে ভ্যাকসিনগুলি থেকে শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কত দিনের জন্যে পাওয়া যাবে।

যদি ভ্যাকসিনগুলি করোনভাইরাস দ্বারা অসুস্থ হওয়া থেকে মানুষকে রক্ষা করে, তবে তারা কি একইসাথে ভাইরাস বহন কিংবা অন্যকে সংক্রামিত করতেও বাধা দিতে সক্ষম?
সিএনএন চিফ মেডিকেল করেসপন্ডেন্ট ডা. সঞ্জয় গুপ্ত বলছেন- ‘এখনও অবধি এটা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না।’ তবে মডার্না বলছে যে, এর ভ্যাকসিন সংক্রমণ এবং সংক্রমণ রোধ করতে সক্ষম হতে পারে। এর সমর্থনে সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করোনভাইরাস পরামর্শক সদস্য ড. রিক ব্রাইট বলেছেন, “উভয় ভ্যাকসিনই আজ অবধি পরিচালিত ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে কার্যকর এবং খুব নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ (৪ সপ্তাহের ব্যবধানে) আপনাকে সংক্রমণের হাত থেকে সুরক্ষা দেবে বটে; তবে ব্রাইট এবং এফডিএ উভয়ই বলেছেন যে এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন মানুষকে ভাইরাস বহনে কিংবা অন্যকে সংক্রামিত করতে বাধা দেয় কিনা।

কেউ ইতিমধ্যে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে থাকলেও কি তাদের ভ্যাকসিন নেয়া উচিত?
মহামারী বিশেষজ্ঞ ডা. ল্যারি ব্রিলিয়ান্ট জানিয়েছেন, হ্যাঁ. কিছু ক্ষেত্রে নেয়া উচিত। কেননা সংক্রামিত হওয়ার পরে শরীরে উৎপাদিত অ্যান্টিবডিগুলির চেয়েও শক্তিশালী সুরক্ষা দিতে পারে একটি ভ্যাকসিন। প্রকৃতপক্ষে ছয়টি করোনাভাইরাস রয়েছে- মারস, সারস এবং অন্য চারটি ভাইরাস যেগুলো সাধারণ সর্দি তৈরি করে। কিন্তু দেখা গেছে এরা দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ ক্ষমতা তেরি করেনা। এ পর্যন্ত তৈরি ভ্যাকসিনগুলো বরং তার থেকে বেশি প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে থাকে। এটি কতটা দীর্ঘ হতে পারে তা স্পষ্ট নয়। ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্না ভ্যাকসিন উভয়ই দুটি মাত্রায় আসে: প্রথম ডোজ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কার্যত: উজ্জীবিত করে এবং দ্বিতীয় ডোজ বুস্টারের মতো কাজ করে।

কোভিড -১৯ ভ্যাকসিনের দাম কত হবে?
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলেছে যে কোনও করোনভাইরাস ভ্যাকসিন আমেরিকান জনগণকে বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। ফাইজার, মডর্না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং নোভাভ্যাক্স- চারটি সংস্থাকে তাদের ভ্যাকসিনের জন্য ফেডারেল সরকার $ ৭.৭৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রদান করেছে।

ভ্যাকসিনগুলির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি কী কী?
কিছু ভ্যাকসিন ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবীরা শটগুলি পাওয়ার পরে ফ্লুর মতো প্রভাব অনুভবের কথা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আপনার ক্ষেত্রে যদি এটি ঘটে থাকে তবে বাইরে বেরোবেন না। এছাড়া আপনার হাতের ব্যথা বা কিছু ক্লান্তি বা কিছু শরীরের ব্যথা বা কিছুটা জ্বর হওয়াও স্বাভাবিক। কিছু লোককে একদিনের জন্য বিশ্রামে থাকতে হতে পারে।ফাইজার-বায়োএনটেক ভ্যাকসিন তাদের ট্রায়ালে সুরক্ষাবিষয়ক গুরুতর কিছু দেখা দেয়নি বলে জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন হালকা থেকে মাঝারি জ্বর, অবসন্নতা এবং সর্দি ছিল যা সর্বোচ্চ এক থেকে দুই দিন স্থায়ী হয়েছে। মডার্না বলেছে যে, এর ভ্যাকসিনের কোনও গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের একটি অল্প শতাংশেই শরীরের ব্যথা এবং মাথা ব্যথার মতো লক্ষণ ছিল।

কোভিড -১৯ টিকা থেকে কি কোভিড -১৯-এ আক্রান্ত হতে পারে?
না। মার্কিন বাজারের জন্য পরীক্ষা করা ভ্যাকসিনগুলির মধ্যে একটিও প্রকৃত করোনভাইরাসকে প্রশ্রয় দেয়নি। সুতরাং বলা যায়, এই ভ্যাকসিনগুলির কোনওটির পক্ষেও আপনাকে করোন ভাইরাসে সংক্রমিত করা অসম্ভব।

লোকেরা নিজ ইচ্ছামতো টিকা পছন্দ করতে পারবে কী?
প্রাথমিকভাবে, পছন্দ মতো টিকা নেবার খুব বেশি সুযোগ মিলবেনা। ফাইজারের ভ্যাকসিনের জন্য বিশেষ, অতি-ঠান্ডা স্টোরেজ দরকার– অর্থাৎ এটি সাধারণ ফ্রিজারের থেকে অনেক বেশি শীতল কোথাও সংরক্ষণের প্রয়োজন পঢ়ে। সুতরাং এটি কেবল তখনই আপনি পেতে পারেন যদি আপনি এমন কোনও অঞ্চলে থাকেন যেখানে এই ধরণের সুবিধা রয়েছে।
মডার্নার ভ্যাকসিন সাধারণ রেফ্রিজারেশন তাপমাত্রায় পরিবহন এবং সংরক্ষণ করা যেতে পারে। এটি গ্রামীণ অঞ্চল বা অতি-হিমাগার স্টোরেজের ব্যবস্থা নেই এমন জায়গাগুলির জন্য এটি বেশ উপযোগী হতে পারে। তবে সময়ের সাথে সাথে বাজারে আরো টিকা চলে আসবে; সেই সাথে টিকা বাছাইয়ের সুযোগও বেড়ে যাবে। আশা করা হচ্ছে জানুয়ারির মধ্যেই জনসন এবং জনসন ভ্যাকসিন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হবে। যদি এগুলোর বাৎসরিক ডোজ হয়ে থাবে তবে লোকেদের সামনে ‘বিকল্প’ বেড়ে যাবে।

যেহেতু একাধিক সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরি করেছে, এখন যদি ইতিমধ্যেই কেউ একটি ভ্যাকসিন নিয়ে থাকেন এবং পরে আরও কার্যকর একটি যদি বাজারে আসে সেক্ষেত্রে কী ঘটবে? একাধিক কোভিড -১৯ টিকা কী নেয়া যাবে?

নিশ্চিত হয়ে বলার সময় এখনো আসেনি।মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট’র ডিরেক্টর ডা. ফ্রান্সিস কলিন্স বলেছিলেন, ‘তবে এটি অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক। দেখুন এখনই আমরা যা পেয়েছি তাই আমাদের জন্য এখন যথেষ্ট। পরে আরো ভালো একটি এলে তা নেয়া থেকে কাউকে কে বাধা দেবে!

আমরা জেনেছি করোনাভাইরাস ঘন ঘন রূপান্তরিত হয়। রূপান্তরিত সব ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কার্যকর হবে কি?
গবেষণায় দেখা গেছে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যেসব রূপান্তর হয়েছে সেসবগুলোতে ভাইরাসের মূল বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ রয়েছে। বর্তমানে সবগুলো রূপান্তরিত ধরনের ওপর উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনগুলো শতভাগ কার্যকর বলে প্রমাণিত। তবে ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের কোনো রূপান্তরিত রূপ বা ভ্যারিয়েন্ট এখনকার সব ভ্যাকসিন প্রতিরোধী হয়ে উঠবে কি না সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

ভ্যাকসিন যেভাবে তৈরি হয়েছে তাতে এটি গ্রহণ করলে মানুষের শরীরে কভিড-১৯ অথবা কভিড-১৯-এর উপসর্গ তৈরি হবে কি?
এর উত্তর হচ্ছে প্রথাগত পদ্ধতিতে তৈরি ভ্যাকসিনে এমনটা হবে না। কারণ এ পদ্ধতিটি দীর্ঘ পরীক্ষিত। দ্বিতীয়ত দুটো পদ্ধতিতে তৈরি ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের কোনো পর্যায়ে এরকম কোনো লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়নি। তাই এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ভ্যাকসিন নিলে কারও করোনা রোগ বা রোগের লক্ষণ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

করোনা আক্রান্ত কেউ কি ভ্যাকসিন নিতে পারবে?
করোনা আক্রান্ত বা করোনাভাইরাসবাহী ব্যক্তি ভ্যাকসিন নিতে পারবে। ভাইরাস প্রবেশ করলে বা করোনা আক্রান্ত হলে ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ভাইরাসটিকে বডি বললে এটিকে প্রতিরোধ করতে শরীরের ভেতর যে বস্তুটি তৈরি হয় তাকে বলা হয় অ্যান্টিবডি। প্রবেশের পর শরীরের ভেতর ভাইরাসের সঙ্গে অ্যান্টিবডির যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে অ্যান্টিবডি জিতে গেলে ব্যক্তিটি করোনা থেকে মুক্ত হয়। ভ্যাকসিনের কাজ হলো শরীরের ভেতর অ্যান্টিবডি তৈরি করা। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভ্যাকসিন দিলে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এ ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি আগের অ্যান্টিবডির (করোনাভাইরাসের কারণে যেটি তৈরি হয়ে আছে) সঙ্গে মিলে করোনাকে দ্রুত পরাস্ত করে ফেলবে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি তাড়াতাড়ি করোনামুক্ত বা সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে এ বিশ্লেষণটি পুরোপুরি তত্ত্বভিত্তিক। প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্তের জন্য করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভেক্টরভিত্তিক এবং ‘এমআরএনএ’ উভয় ধরনের ভ্যাকসিনের গ্রহণযোগ্য আকৃতির ট্রায়াল হতে হবে। প্রাপ্ত উপাত্তের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এরকম কোনো ট্রায়াল পরিচালিত হয়নি।

করোনাজয়ী ব্যক্তির শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে তাকে কি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে? হলে কেন?
করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার নাম ‘মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি’। এটি করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ অ্যান্টিবডিটি শরীরে সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকে। ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে তৈরি হয় ‘স্পাইক’ অ্যান্টিবডি। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি শরীরে কমপক্ষে ১২ মাস থাকে। ভ্যাকসিন নিলে দুই ধরনের অ্যান্টিবডি দ্বারা শরীর সুরক্ষিত থাকবে। মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি কমে গেলেও স্পাইক অ্যান্টিবডি শরীরকে সুরক্ষা দেবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বিস্তর গবেষণা করতে হবে। কেননা এখন পর্যন্ত করোনাজয়ীদের ওপর ভ্যাকসিনের কোনো ট্রায়াল হয়নি।

এমআরএনএ ভ্যাকসিন নিলে শরীরের ডিএনএ’র পরিবর্তন হবে কি?
ডিএনএ জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপের জিনগত বা জিনেটিক নির্দেশ ধারণ করে। জেনেটিক প্রযুক্তিতে তৈরি হলেও এমআরএনএ-ভ্যাকসিন শরীরের ডিএনএ’র ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। বর্তমান বা আগের কোনো গবেষণায় এরকম কোনো প্রমাণ বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। করোনা ভ্যাকসিন তৈরির অনেক আগে থেকেই এমআরএনএ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলে আসছে।

শিশু ও গর্ভবতী নারীরা ভ্যাকসিন নিতে পারবে কি?
এখনো পর্যন্ত উদ্ভাবিত কোনো করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বা পরীক্ষা শিশু ও গর্ভবতী নারীর ওপর করা হয়নি। ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন উদ্ভাবকদের কেউ কেউ এ ধরনের ট্রায়ালের ঘোষণা দিয়েছে। এসব ট্রায়ালের ফলাফল আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে গর্ভবতী নারী ও শিশুকে ভ্যাকসিন দেওয়া নিরাপদ হবে কি না।

বৃদ্ধদের ওপর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কেমন হবে?
সাধারণভাবে যেকোনো ভ্যাকসিন বয়স্ক মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে কম কার্যকর হয়। করোনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অনুরূপ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষদের নিয়ে আরও বিস্তৃত ট্রায়াল সম্পন্ন করার পরই শুধু বলা যাবে করোনা ভ্যাকসিন বয়স্কদের ওপর কতটা কার্যকর হবে। তবে কোনো কোনো উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান বলেছে তাদের ভ্যাকসিন বয়স্কদের শরীরেও সমান কার্যকর। এর ওপর ভিত্তি করে কোনো কোনো দেশে বয়স্কদের ভ্যাকসিন প্রদানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয় ডোজ নেওয়ার পরও কেউ কি করোনা ছড়াতে পারে?
করোনা ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয় ডোজ নেওয়ার পর ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে। এতে তার শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করলেও সে উপসর্গবিহীন থাকবে। ক্ষেত্রবিশেষে অতিমৃদু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। কিন্তু উভয় অবস্থাতেই তার দ্বারা ভাইরাস চারপাশে ছড়াবে। তাই বলা যায় ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও একজন ব্যক্তি ভাইরাস ছড়াতে পারে।

আর কতদিন মাস্ক পরতে হবে? স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে?
আমরা জানি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও একজন ব্যক্তি ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই ভ্যাকসিন পেয়েছে এবং পায়নি এমন সবাইকে মাস্ক পরতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবে দেশের ৭০-৮০% মানুষের ভ্যাকসিন নেওয়া সম্পন্ন হলে তখন আর স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজন থাকবে না। কোনো জনগোষ্ঠীর ৭০%-এর বেশি মানুষ বিশেষ একটি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন হলে তখন পুরো জনগোষ্ঠীটি ওই রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠে। একে বলা হয় ‘গোষ্ঠী প্রতিরোধ’ বা ‘হার্ড ইমিউনিটি’।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না সেটা কি টেস্ট করে বোঝা যাবে?
করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। সেটা শনাক্ত করার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়। এই জাতীয় টেস্ট দ্বারা নিউক্লিওক্যাপসিড অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যায়। কিন্তু ভ্যাকসিন শরীরের ভেতর স্পাইক অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সাধারণ অ্যান্টিবডি টেস্ট দিয়ে স্পাইক অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা যায় না। তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সাধারণ অ্যান্টিবডি টেস্ট করলে তার ফল নেগেটিভ বা নেতিবাচক হবে।

এখন ভ্যাকসিন কাদের দেয়া হচ্ছে?
প্রাথমিক ভাবে করোনা যোদ্ধা ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড টিকা পাবেন। তারপর ৫০ ঊর্ধ্ব যারা তাদের দেওয়া হবে। এছাড়াও গুরুতর রোগ আছে তেমন রোগীরাও পাবেন, যাদের বয়স ৫০-এর কম। ৫০ ঊর্ধ্ব গোষ্ঠীতে প্রথমে ৬০ বছরের বেশি যারা তাদের টিকাকরণ হবে। তারপর হবে ৫০-৬০ বছর বয়সীদের।

ভ্যাকসিন নেবার কতদিন পর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়?
দুটি ডোজ নিতে হবে ২৮ দিনের ব্যবধানে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ১৪ দিন পর থেকে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে। কিন্তু তখনও মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব রাখা বন্ধ করা চলবে না।

করোনা ভ্যাকসিনগুলোর গুণগতমানে কোনোও হেরফের থাবতে পারে?
করোনা টিকা সম্পূর্ণ রকম নিরাপদ হবে কারণ সমস্ত মাপকাঠিতে পাশ করলে তবেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি ছাড়পত্র দেবে। বিশ্বের অন্য স্থানে যে করোনা টিকা দেওয়া হচ্ছে, গুণমানে সেগুলি তেমন হেরফের হবার কথা নয়।

একটি ডোজ এক সংস্থার নেবার পর, ২য় ডোজটি অন্য সংস্থার নেয়া যাবে কী?
একটি বিশেষ সংস্থার টিকা যদি দেন, তাহলে পুরো ডোজ সেটারই শেষ করুন। বিভিন্ন টিকার ডোজ মিলিয়ে নিলে কার্যকর না হবার সম্ভাবনাই বেশি।

কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও কি আমাদের সন্তানদের নিয়মিত টিকা দেওয়া যাবে?
কোভিড-১৯ আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন ব্যাহত করলেও, এই প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হলো — হ্যাঁ। যেখানে সেবাটি মিলছে সেখান থেকে আপনার সন্তানকে টিকা দেওয়ার চেষ্টা করুন। শিশু ও নবজাতককে সঠিক সময়ে তাদের টিকাগুলো দিয়ে ফেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, ওইসব টিকা তাদের জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে। এর অর্থ হলো, আপনার সন্তান যখন অন্য শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে যাবে, তখন কিছু রোগের সংক্রমণ থেকে তারা সুরক্ষিত থাকবে। কোথা থেকে টিকা নেবেন আপনি যদি তা না জানেন অথবা টিকাদান কার্যক্রম যদি চালু না থাকে, তবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর স্মরণাপন্ন হোন। কারণ, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে এবং আপনি দেখবেন, আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সেবা প্রদান পদ্ধতিও বদলে ফেলছেন। আপনার শিশুর নির্ধারিত পরবর্তী টিকা নিতে আপনি যদি ক্লিনিকে যেতে না পারেন; তবে এই সেবা চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার চেষ্টা করার জন্য কোথাও একটি নোট লিখে রাখুন।

করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি? অন্যান্য রোগ ও টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে এটি আমাদের কী শিক্ষা দিতে পারে?
টিকা কতটা মূল্যবান তা এই করোনাভাইরাসের মহামারি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মহামারির এই মহামারি পরিস্থিতি আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে, যখন কোনো রোগের টিকা থাকে তখন অবশ্যই শিশু ও আমাদের নিজেদের যথা সময়ে সেই টিকা নেওয়া উচিত। আর টিকা নেওয়া না থাকলেই মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এর পরিণতি হয় ভয়াবহ। যেমন, হাম ও অন্য কিছু রোগ এখনো মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, এসব রোগের টিকা রয়েছে।

টিকা কিভাবে কাজ করে?
টিকা আমাদের শরীরে একটি জীবাণুকে (ব্যাকটেরিয়া অথবা ভাইরাস) নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে তার সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করতে সহায়তা করে। যতক্ষণ ওই জীবাণু নিষ্ক্রিয় থাকে ততক্ষণ সেটি আমাদের অসুস্থ করতে পারে না। মোট কথা, টিকা আমাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। এরপর কোন জীবাণু যদি আবার আপনাকে সংক্রমণ করে, তবে তাতে ভয়ের কিছু নেই, কেননা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জানে কীভাবে তার সাথে যুদ্ধ করতে হবে।

ভ্যাকসিন কি তাহলে নিরাপদ?
যদি হাজারো অংশগ্রহণকারীর তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালটি সফলতা লাভ করে, তবে উত্তর হ্যাঁ হবে। যদি বড় কোনো ধরনের সন্দেহ থাকত, তবে ভ্যাকসিনটি এতদূর আসতে পারত না। ঐতিহাসিকভাবে ওষুধ কোম্পানিগুলো নেতিবাচক ফল গোপন করতে সক্ষম। কিন্তু এখন এটা আইনগতভাবে জরুরি যে সব ট্রায়ালের ফল প্রকাশ করতে হবে এবং অন্য বিজ্ঞানীরা তা পর্যালোচনা করে দেখবেন। এর ফলাফলস্বরূপ এ খাতটি যতটা বিশ্বাসযোগ্য ছিল, তারচেয়ে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু তার পরও আমাদের এখনো অন্তর্বর্তীকালীন ফলের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। নজিরবিহীন গতিতে উৎপাদিত হওয়ার কারণে কিছু মানুষ কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন নিয়ে উদ্বিগ্ন। যদিও বেশির ভাগ ভ্যাকসিনেরই ভিত্তি হচ্ছে দারুণ সুরক্ষা প্রোফাইলসহ টেকনোলজি প্লাটফর্ম। এখানে অল্প নতুন প্রযুক্তি ব্যবহূত হচ্ছে, কিন্তু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং রেগুলেটরি প্রক্রিয়া বেশ কঠোর। তবে এটা জানা এখনো কঠিন যে এর দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কী হবে। যদিও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে এটা বেশ দুর্লভ।

এসব পরিসংখ্যান কি ট্রায়ালগুলোর উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করে?
ট্রায়াল সাধারণত অনেক কিছুই পরিমাপ করে। তবে সাধারণত একটি প্রাথমিক কেন্দ্রীয় প্রশ্ন বা বিষয় থাকে, যার উত্তরের জন্য ট্রায়ালটি ডিজাইন করা হয়েছে। ট্রায়ালের কিছু গৌণ প্রশ্ন থাকে কিন্তু এগুলোর উত্তর দেয়াই সফলতার নিশ্চয়তা দেয় না। যদি আপনি উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন ধরনের টেস্ট চালান, তবে তা কিছু গৌণ প্রশ্নের উত্তর দেবে। ট্রায়াল ডাটাকে এ উপায়ে ভুল বোঝাকে বলা হয় পি-হ্যাকিং বলে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রেজিস্ট্রি পরীক্ষা করে আপনি যেকোনো ধরনের প্রাথমিক এবং গৌণ বিষয়গুলো অনুসন্ধান করতে পারবেন। আবারো এগুলো অন্তর্র্বতীকালীন ফলাফল কিনা তা বিবেচনা করা জরুরি। যদিও এমন ফল প্রতিশ্রুতিশীল হতে পারে, যেমনটা ফাইজার ও মডার্না দেখিয়েছে। ফাইজার অবশ্য চূড়ান্ত ফলেই উচ্চ কার্যকারিতার কথা বলেছে।

ট্রায়াল কি সঠিক পরিমাপ করতে পারে?
ওষুধের ‘কাজ করা’ কোন বিবেচনায় গণ্য হবে তা অনেক রোগের জন্য নির্ধারণ করা কঠিন। কিন্তু ভ্যাকসিনের জন্য, এ প্রশ্নটির উত্তর বেশ সরল। যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে, তারা অসুস্থ হচ্ছেন কিনা? যেকোনো জটিল ব্যবস্থা অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

কাদের ওপর ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হয়েছিল?ট্রায়ালের যে ফল তা কি বাস্তব পৃথিবীতে একই থাকবে?

এখানে জনসংখ্যার মাঝে পার্থক্যটি বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ (এই ক্ষেত্রে সবাই যারা কভিড-১৯ দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে) এবং সেই জনসংখ্যার নমুনায় যারা অংশ নিয়েছিল। অনেক কেসে ট্রায়ালগুলো নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সতর্কতার সঙ্গে মিলে যায় (এবং তুলনা করা যায়) এমন নমুনা ব্যবহার করেন। এখানে একটিতে ভ্যাকসিন এবং অন্যটিতে প্লসেবো দেয়া হয় (যেমন স্যালাইন ইনজেকশন কিংবা এরই মধ্যে অন্য রোগের জন্য বিকশিত ভ্যাকসিন)। এটা করা হয়, কারণ অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ভ্যাকসিনেটেড হওয়ার যে চিন্তা তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, যার এক ধরনের প্রভাব রয়েছে। প্রথম ধাপের ট্রায়ালে সুরক্ষা উদ্বেগের অর্থ হচ্ছে নমুনাগুলো কিছু স্বাস্থ্যসংক্রান্ত দুশ্চিন্তাসহ কিছু তরুণ এবং সবল মানুষের সমন্বয়ে তৈরি হয়, যা কিনা সামগ্রিক জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে না। তবে ট্রায়াল সামনের দিকে এবং পরের ধাপে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে গবেষকরা জনগণের আরো অন্যান্য প্রতিনিধিকেও এখানে যুক্ত করে।
এ কারণে শেষ পর্যায়ের (তৃতীয় ধাপ) ট্রায়াল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে ভ্যাকসিন যাদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার তাদের প্রতিনিধি হিসেবে এখানে যুক্ত করা হয়। ট্রায়ালের ফলাফলের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ সাধারণত কাদের নমুনা নেয়া হয়েছে তা বর্ণনা করে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাঝে কার্যকারিতার হার (এ ভাগটি করা হয় লিঙ্গ, বয়সসহ আরো নানা বিবেচনায়)। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতার যে শিরোনাম, সেটি শেষ পর্যন্ত জনসংখ্যার সবার মাঝে একইরকম থাকবে না।
কভিড-১৯-এর জন্য যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, আমরা জানি যে বয়স্করা সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। তাই বয়স্কদের মাঝে কার্যকারিতা দেখানোর আগে কোনো ভ্যাকসিনকে চূড়ান্ত ধরে নেয়া ভুল। তবে এখানে সুখবর হচ্ছে, ফাইজারের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালের চূড়ান্ত ফল বলছে, তাদের ভ্যাকসিন ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ওপর ৯৪ শতাংশ কার্যকর, যা করোনা নির্মূলে বড় একটি পদক্ষেপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভ্যাকসিন কি সহজলভ্য?
এখনো না। দারুণভাবে রোমাঞ্চিত হওয়ার আগে আমাদের কিছু বাস্তবিক প্রশ্ন উত্থাপন করতে হবে। এ ভ্যাকসিনে কত খরচ পড়বে? এটা কি বৃহৎ আকারে উৎপাদন করা হবে? এটার পরিবহন ও সংরক্ষণ কি সহজ? এবং কটি বুস্টারের প্রয়োজন হবে? এসব লজিস্টিক সমস্যা ভ্যাকসিনকে ক্লিনিক পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

যা বলা হচ্ছে তাকে কি বিশ্বাস করা যায়?
নির্ভারযোগ্য এবং অনির্ভরযোগ্য উৎসগুলো চিহ্নিত করতে পারা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবসময় অগভীর এবং ভুল তথ্য সরবরাহ করে থাকে। অন্যদিকে জার্নালের আর্টিকেলগুলো এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রেজিস্ট্রি বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে ব্যাখ্যা করা কঠিন। বিশ্বাসযোগ্য সাংবাদিকতাও একটি সমাধান। এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে সাংবাদিকরা কোন উৎস ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশন করছেন। তবে পিআর পর্যালোচনা সম্পন্ন জার্নাল ব্যবহার করে সংবাদ তৈরি করাটা এক্ষেত্রে অধিক নির্ভরযোগ্য। পাশাপাশি একের অধিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সচেতনতাও এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

একবার ভ্যাকসিন দিলে আবারো হতে পারে কোভিড-১৯?
একবার ভ্যাকসিন দিলে আবারো কোভিড-১৯ হবে কিনা ব্যাপারটি এখনও অজানা। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, শুধু গুটি বসন্তের ক্ষেত্রে একবার টিকা দেয়ার পর রোগটি আর হয় না। এছাড়াও, কোভিড-১৯ এর সম্ভাবনাময় কোনো টিকার কার্যকারিতাও ১০০ ভাগ নয়। সুতরাং একবার টিকা নিলেও রোগটিতে আক্রান্তের আশঙ্কা থেকে যায়। অন্যদিকে, আমরা ফ্লু টিকার কথা ভাবতে পারি। যেখানে টিকা দেয়ার পরও কেউ সংক্রামিত হলে রোগের তীব্রতা মারাত্মক হয় না। এখন থেকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং শারীরিক দূরুত্ব বজায় রাখা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রতি বছরই কী এই ভ্যাকসিন নিতে হবে?
কোভিড-১৯ টিকা আমাদের কতদিন পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে তা এখনও অজানা। এমন হতে পারে, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো প্রতি বছর টিকা নেয়ার দরকার হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এটা নির্ভর করবে টিকার সুরক্ষার স্থায়িত্বকাল কতদিন তার ওপর। এছাড়াও, এটি হার্ড ইমিউনিটি/প্রটেকশনের ওপর নির্ভর করে। যা সাধারণ সংক্রমণ ও টিকার মাধ্যমে গড়ে ওঠে।

কোভিড-১৯ টিকার মাধ্যমে সৃষ্ট অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা কতদিন স্থায়ী হতে পারে?
কোভিড-১৯ টিকার মাধ্যমে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (টি সেল, সেলুলার রেসপন্স) কতদিন কার্যকর থাকবে সে বিষয়ে গবেষণা চলমান। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ৬ মাস পরও রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি ও সেলুলার রেসপন্সের স্থায়িত্ব দেখা গেছে। অন্যদিকে টিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে দেখা গেছে, মডার্নার কোভিড-১৯ টিকার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার ১১৯ দিন পরও যথেষ্ট শক্তিশালী। ফেজ-৩ পরীক্ষার আওতায় থাকা অন্য টিকাগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়িত্বও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।

ভ্যাকসিন কেন দুই ডোজ দিতে হবে?
আমাদের শরীরে যখন নতুন কোনো বস্তু (জীবাণু) প্রবেশ করে, তখন শরীর সেই বস্তুর প্রতি এক ধরনের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া (প্রাইমারি রেসপন্স) দেখায়। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি শুরু করে। আর দ্বিতীয়বার যখন সেই একই বস্তু প্রবেশ করে তখন তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এর ফলে আইজিজি অ্যান্টিবডি আরও পরিপক্ক হয় এবং তার স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয়। একাধিক ডোজের টিকা প্রয়োগ একটি প্রচলিত পদ্ধতি। গবেষকরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সঙ্গে সমন্বয় করে টিকার বিভিন্ন ডোজের মধ্যে সময়ের পার্থক্য নির্ধারণ করে থাকেন। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন টিকার ক্ষেত্রে ১৪ দিন, ২৮ দিন বা ১ বছর পর দ্বিতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেয়ার প্রচলন রয়েছে।

দুই ডোজে কী আলাদা অ্যান্টিবডি তৈরি হবে?
দুই ডোজ টিকা আলাদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে ব্যাপারটি এমন নয়। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে শরীরে প্রথমে আইজিএম অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তারপর আইজিজি অ্যান্টিবডি, বি-সেল, টি সেল ও মেমোরি সেল তৈরি হয়। বিষয়টি খুব জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এখনও সার্স কোভ-২ ভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগটির বিষয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক কিছুই অজানা। তাই সাধারণভাবে বলা যায়, টিকার দ্বিতীয় ডোজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত এবং দীর্ঘস্থায়ী করে।

টিকা নিলেও কি মাস্ক পরতে হবে?
প্রশ্নটা প্রাসঙ্গিক। কারণ, টিকা নেওয়ার পর একজন ব্যক্তির দেহে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটার কথা নয়, কারণ, করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তাঁকে সুরক্ষা দেবে। এ অবস্থায় তাঁর মাস্ক পরার প্রয়োজনীয়তা না থাকারই কথা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নিলে একজন নিশ্চয়ই কোভিড-১৯ রোধের সক্ষমতা অর্জন করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো তাঁরা অন্যের জন্য কতটা নিরাপদ। তাঁরা অন্যদের দেহে কোভিডের সংক্রমণ ছড়াতে পারেন কি না? এটা এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ, টিকা দেওয়া হয় হাতের পেশিতে। এর ফলে দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু নাকের গভীরে কোভিড ভাইরাস দমনে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এখন পর্যন্ত যেসব পরীক্ষা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে টিকা সুরক্ষা দেয়। কিন্তু সবার অজান্তে ভাইরাস ছড়ায় কি না, সে পরীক্ষার ফল এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। এমনও হতে পারে, টিকা নিলে নিজে সুরক্ষা পাবেন ঠিকই কিন্তু তারপরও হয়তো অন্যদের দেহে ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারেন। টিকা নেওয়ার ফলে নিশ্চয়ই সংক্রমণ ছড়ানোর হার কমে আসবে। কিন্তু তারপরও দেখতে হবে, তাঁরা নিজেরা সংক্রমণমুক্ত অবস্থায়ও অন্যদের সংক্রমিত করেন কি না। সে জন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী নিয়মিত মাস্ক পরা দরকার। তবে সেটা সাময়িক সময়ের জন্য। এর মধ্যে পরীক্ষায় নিশ্চিতভাবে জানা যাবে টিকার ফলে সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ হয় কি না। ইয়েল ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্ট আকিকো আইওয়াসাকি অবশ্য বলেছেন, টিকা নিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এর ফলে নাকের গভীরেও তা সক্রিয় ভূমিকা রাখে এবং সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ন্ত্রিত হয়।

সবার কি টিকা নিতে হবে?
তরুণ ও যুবাদের কোভিডে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম। কম ঝুঁকিতে থাকেন বলে হয়তো বলতে পারেন, এত টানাটানির মধ্যে তাঁদের টিকা না নিলেও তো চলে। কারণ, তাঁদের তো ঝুঁকি কম, আর আক্রান্ত হলেও খুব বেশি তীব্র হয় না। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। সবারই টিকা নিতে হবে। পর্যায়ক্রমে। না হলে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাবে। দেশের জনসংখ্যার অন্তত ৮০ শতাংশ টিকা নিলে কোভিডের অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না। তাই পাঁচ ভাগের চার ভাগ মানুষের টিকা নেওয়া অবশ্যই দরকার।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট