চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পুরুষ নির্যাতনের শিকার হলেও কেন মুখ খোলে না !

অনলাইন ডেস্ক

১৯ নভেম্বর, ২০২০ | ৪:১০ অপরাহ্ণ

পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্দিষ্ট করে দেয়া ‘রোল প্লে’ করতে গিয়ে নিজের জালেই আটকা পড়েছে পুরুষ! সামাজিক বাস্তবতায় ‘নির্যাতন’, ‘নির্যাতিত’ এই শব্দগুলো নারীর জন্যই মূলত বরাদ্দ করে দেয়ায় পুরুষ নির্যাতনের বিচারের দাবি নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না বলে মনে করছে মানবাধিকারকর্মীরা। যে পুরুষ তার নির্যাতনের কথা বলছেন, তিনি সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার কাছেই হাসির পাত্র হয়ে উঠছেন। কখনও কখনও সংবেদনশীল পুরুষ যথেষ্ট ‘পৌরুষ’ না থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন। তারা আরও বলছেন, পুরুষ নির্যাতনের অনেক ইস্যু আসে। কিন্তু সেসবকে গুরুত্ব দিয়ে আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয় থাকে না। কেননা যেসব নির্যাতনের অভিযোগ আসে সেগুলোর প্রায় শতভাগই মানসিক।

বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন-এর তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ বিবাহিত পুরুষ ‘মানসিক নির্যাতনের শিকার’। সামাজিক লজ্জার ভয়ে অনেকেই এসব বিষয় প্রকাশ করতে চান না। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এ ধরনের মানসিক নির্যাতনের অভিযোগও খুব একটা শোনা যায় না।

নির্যাতনের শিকার পুরুষ লজ্জায় তাদের কথা বলতে পারছেন না উল্লেখ করে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শেখ খাইরুল আলম সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোনও নারী নির্যাতিত হলে তিনি তো বিচার চাইতে পারেন। অনেক সংগঠন তার পাশে দাঁড়ায়। পুরুষ এখনও সেই সহযোগিতা পায় না।

নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা না বলে এই যে লজ্জা পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে এখানেই ফোকাস ঠিক করা উচিত উল্লেখ করে পারিবারিক নির্যাতনবিরোধী জোট ‘উই ক্যান’-এর নির্বাহী সমন্বয়ক জিনাত আরা হক  বলেন, “সমাজ যে রোল ঠিক করে দিয়েছে, পুরুষ নির্যাতনের শিকার হলেও সেই রোলের বাইরে নিজেকে ভাবতে পারছেন না। নারীর অধিকার নিয়ে কথা উঠলে পাল্টা অবস্থান হিসেবে ‘পুরুষরাও নির্যাতনের শিকার হয়’ ধরনের স্টেটমেন্ট হাজির না করে সব নির্যাতনকেই একভাবে দেখার মানসিকতা তৈরি করা জরুরি। আর এটা করতে পারেন না বলেই পুরুষ তার নিজের নির্যাতন নিয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।”

তিনি আরও বলেন, ‘নির্যাতন ও দ্বন্দ্ব ভিন্ন বিষয়। যারা বিবাহিত পুরুষের মানসিক নির্যাতনের কথা বলছেন তাদের বিষয়টা স্পষ্ট করতে হবে। পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের যে রোলে দেখতে অভ্যস্ত তার বাইরে গেলে মানসিক পীড়ন শুরু হয়। সমাজে পুরুষ নারীকে কেয়ারগিভার হিসেবে দেখতে চায়। নারী বাইরে কাজ করে অর্থনৈতিক সহায়ক হবে সেটিও চায়। দুই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুরুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে তখন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।’

‘পুরুষ আর নারীকে প্রতিযোগিতার বিষয় করে যারা পুরুষ দিবসকে টয়লেট দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে ট্রল করেন তারা আসলে কারোরই ভালো করছেন না’ উল্লেখ করে নারীবাদী লেখক সাদিয়া নাসরিন বলেন, ‘নারীবাদ আজকের বাংলাদেশে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে প্রচুর পুরুষ নারীর হাতে হাত ধরে কণ্টক পথ পার করেছে। পুরুষ নারীকে নিয়ে ভেবেছে, নারীর সঙ্গে লড়াই করেছে। নারীকে পাবলিক ডোমেইনে নির্বিঘ্ন করতে প্রচুর পুরুষ প্রাইভেট ডোমেইনে ঢুকেছে। পুরুষও পুরুষতন্ত্রের বলি হয়, পুরুষও নিপীড়িত হয়, পুরুষের সঙ্গে ডোমেস্টিক অ্যাবিউজের ঘটনা ঘটে, পুরুষও কাঁদে। কিন্তু সমাজ তাকে যে রোল প্লে করতে শিখাতে চেয়েছে সেই জায়গা থেকে সে বের হতে না পেরে এসব অস্বীকার করতে চায়।‘

পুরুষের প্রতি বৈষম্য বিলোপ ও স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রতিবছরের মতো আজ ১৯ নভেম্বর পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা পালনে পুরুষকে যোগ্যতর হতে উৎসাহিত করা হয় এ দিবসে।

১৯৯২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালনের প্রথম সিদ্ধান্ত হয়। কিছুদিন এটা নিয়ে কোনও হইচই ছিল না। পরে ১৯৯৯ সালে ত্রিনিদাদে জেরোম তিলক সিং দিবসটি আবার পালনের উদ্যোগী হন। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট