চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের আজ ৭২তম জন্মবার্ষিকী

পূর্বকোণ ডেস্ক

১৩ নভেম্বর, ২০২০ | ১:২৬ অপরাহ্ণ

হিমু ও মিসির আলীর স্রষ্টা হুমায়ূন আহমেদের আজ ৭২তম জন্মবার্ষিকী। জীবদ্দশায় তুমুল জনপ্রিয়তা দেখে যাবার সৌভাগ্য হয়েছিলো তার। বাংলাদেশে তার মতো জনপ্রিয় লেখক কমই এসেছেন। সৌভাগ্যের সোনার কাঠি নিয়ে জন্ম নেয়া একজন লেখক তিনি।

নিউইয়র্কে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তিনি ‘দেয়াল’ উপন্যাস লিখেছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল গোটা জাতি। সেই শোক আজো কাটেনি ভক্ত-পাঠকদের হূদয় থেকে।

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আজ সারাদিন ধরেই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। টিভিতে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটে হুমায়ূন আহমেদের বাসা দখিন হাওয়ায় কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করেন পরিবারের সদস্যরা।
আজ শুক্রবার সকালে নুহাশ পল্লীতে রয়েছে নানা আয়োজন। লেখালেখি ছাড়া নাটক ও সিনেমা, যেখানেই হাত দিয়েছেন, সাফল্য তাকে ছুঁয়ে গেছে।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ুন আহমেদ। তার ডাক নাম ছিল কাজল। বাবার রাখা প্রথম নাম শামসুর রহমান হলেও পরে তার বাবা ছেলের নাম বদলে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। স্বাধীনতার পর পর লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’ উপন্যাস দু’টি দিয়ে তার যাত্রা শুরু সাহিত্য জগতে। উপন্যাস দু’টি পাঠকপ্রিয়তা পেয়ে যায় দ্রুত। বাংলাদেশের সাহিত্যজগতে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো আগমন ঘটে তার। নগর কেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত ঘরে তিনি লেখক হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ নামে মুক্তিযুদ্ধের বড় ক্যানভাসের উপন্যাস রয়েছে হুমায়ূনের। এটি দিয়েছে ব্যাপক খ্যাতি।

জীবদ্দশায় দু’শতাধিক উপন্যাস লিখে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ। তার নতুন উপন্যাস প্রকাশিত হবার সাথে সাথে বিক্রির তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করে। হিমুবিষয়ক বই মানে পাঠকের হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো অবস্থা। মিসির আলী ছিলো তার সৃষ্ট আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র। ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কবি’, ‘বাদশা নামদার’ ইত্যাদি উপন্যাস, যা পাঠকদের মনকে ছুঁয়ে গেছে।
তাকে বলা হতো কথার জাদুকর। তরুণদের মনের অলি-গলি তার চেনা। তিনি সহজে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন তরুণের আবেগ আপ্লুত গতি-প্রকৃতি। গল্প-উপন্যাস ছাড়াও হুমায়ূন আহমেদ নাট্যকার হিসেবেও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়।

এক সময়ে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করেন। সেখানেও সফলতা আসে। প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ দিয়ে জয় করে নেন সিনেমাপ্রেমীদের মন। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিনেমাটিও এদেশের সফল সিনেমার একটি। সর্বশেষ পরিচালনা করেন ‘ঘেটুপুত্র কমলা’।
তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো সর্বসাধারণ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। ১৯৯৪ সালে তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি মুক্তি লাভ করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। তার নির্মিত অন্যান্য সমাদৃত চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারী (২০০০), শ্যামল ছায়া (২০০৪), ও ঘেটু পুত্র কমলা (২০১২)। শ্যামল ছায়া ও ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র দু’টি বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য দাখিল করা হয়েছিল। এছাড়া ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাংলাদেশের পাঠক তাকে আজীবন মনে রাখবে। ৭২ তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশের পাঠকসমাজ আজ তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট