চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

লেজার রশ্মির কারণে বাড়ছে বিমান দুর্ঘটনার আশঙ্কা

১১ জুন, ২০১৯ | ৮:৫১ অপরাহ্ণ

রাতে বিমান নিয়ে ওঠা-নামার সময় লেজার রশ্মিতে বিপত্তিতে পড়ছেন পাইলটরা। লেজারের তীব্র রশ্মিতে মুহূর্তের জন্য চোখে ঝাপসা দেখেন তারা। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামে শাহ আমানত বিমানবন্দরে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পড়ছেন পাইলটরা। এই লেজার রশ্মি ফেলা হচ্ছে বিমানবন্দর দুটির আশপাশের এলাকা থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। পাইলটরা এ ব্যাপারে অভিযোগ জানালেও লেজার রশ্মির ‍উৎপাত বন্ধ করতে পারেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

পাইলটরা জানান, গত কয়েক মাস ধরে সন্ধ্যার পর বিমানবন্দরের রানওয়ের এপ্রোচ এলাকায় লেজার রশ্মির উৎপাতের শিকার হচ্ছেন তারা। আশপাশের এলাকা থেকে এই লেজার রশ্মি ফেলা হচ্ছে। বিমান নিয়ে ওঠা-নামার সময় পাইলটদের রানওয়েসহ এপ্রোচ এলাকায় নজর রাখতে হয়। লেজারের তীব্র রশ্মি ককপিটের কাচে প্রতিফলিত হওয়ায় দেখতে সমস্যা হয়। একই সঙ্গে এই তীব্র রশ্মি পাইলটদের চোখে প্রদাহসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। তারা এ সমস্যার কথা প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারকে অবহিত করেছেন।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের পাইলট আল মেহেদী ইসলাম জানান, প্রায় প্রতিদিনই রাতে বিমান নিয়ে ওঠা-নামার সময় ককপিটে লেজার রশ্মির উৎপাতের শিকার হচ্ছি। শুধু ঢাকায় নয়, চট্টগ্রামেও একই ঘটনা ঘটছে। বিমান অবতরণের ঠিক আগমুহূর্তে অতি তীব্র রশ্মি চোখের সমস্যা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, সরাসরি তীব্র আলোক রশ্মি চোখে লাগার পর হঠাৎ করে কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ না হলে যেকোনও মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আল মেহেদী ইসলাম।

জানা গেছে, লেজার রশ্মিতে পাইলটের চোখে যন্ত্রণা হওয়ায় বিমান জরুরি অবতণের ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ভার্জিন আটলান্টিকের একটি বিমানে জরুরি অবতরণ করে ওড়ার সময় লেজার রশ্মিতে পাইলটের চোখে যন্ত্রণা শুরু হওয়ায়। যুক্তরাজ্যে লেজারকে ‘আক্রমণাত্মক অস্ত্র’ভুক্ত করে তা নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে এয়ারলাইন পাইলট অ্যাসোসিয়েশন।

বাংলাদেশ এয়ারলাইনস পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, বিমান নিয়ে ওঠা-নামার সময় পাইলটদের রানওয়েসহ এপ্রোচ এলাকায় নজর রাখতে হয়। কিন্তু ক্রমাগত লেজার রশ্মি পাইলটদের কাজে বিঘ্ন ঘটায়। ককপিটের দিকে লক্ষ্য করেই বিমানবন্দর এলাকায় লেজার রশ্মির উৎক্ষেপণ হচ্ছে। এটি বিমান চলাচলে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এটি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি এন্ড রেগুলেশনস) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী মোহাম্মদ জিয়াউল কবীর জানান, লেজার রশ্মির তথ্য আমরা পেয়েছি। কোন স্থান থেকে এটি করা হচ্ছে তা শনাক্ত করতে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্যও কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।

চৌধুরী মোহাম্মদ জিয়াউল কবীর জানান, বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৭ অনুযায়ী বিমান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি দণ্ডযোগ্য অপরাধ। কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা বেপরোয়াভাবে বিমান পরিচালনায় অসুবিধা সৃষ্টি করলে (যাতে মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে) মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অনধিক পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা হবে।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট