চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অক্টোবরেও বন্ধ থাকতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’

‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অক্টোবরেও বন্ধ থাকতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৬:৩৯ অপরাহ্ণ

আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত করোনা মহামারি বিস্তার রোধ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরের অর্ধেকের বেশি পার হয়ে গেলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র অক্টোবরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনও ইতিবাচক নির্দেশনা নেই। এদিকে, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (ন্যাপ) অক্টোবর বাদ দিয়ে আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩৯ দিনের জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী সম্ভবত অক্টোবরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। আর সে কারণেই নভেম্বর থেকে পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করতে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে।

আগামী ১ নভেম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর টার্গেট করে ৩৯ দিনের সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনায় দেখা গেছে বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হলে ১ নভেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৯ দিন চলবে পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবরের শেষ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে প্রস্তুতি লাগবে ১৫ দিন। সেই হিসেবে অক্টোবরে প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলবে শুধুই প্রস্তুতির জন্য। নভেম্বরে খোলা সম্ভব হলে শুধু পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রম চলবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন জানান, গত ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দফায় দফায় বাড়িয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এই ছুটি পুরো অক্টোবর পর্যন্ত বাড়তে পারে সম্ভাবনা মাথায় রেখে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। সংক্ষিপ্ত এই পাঠ-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা না গেলে শ্রেণি মূল্যায়নেরও সুযোগ থাকবে না। ফলে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দিতে হবে অটো পাস। একইসঙ্গে অটো প্রমোশন দেয়া হবে অন্যান্য শ্রেণিতেও।

আকরাম-আল-হোসেন আরও জানান, অক্টোবর ও নভেম্বরকে দুটো টার্গেট করে দুটি লেসন প্ল্যান তৈরি করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনা করে নভেম্বর থেকে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এখন পর্যন্ত অক্টোবরে খোলার বিষয়ে কোনও নির্দেশনা নেই। পরিস্থিতি উন্নতি হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যদি নভেম্বরে স্কুল খোলা না যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর কথামত অটো পাস ছাড়া আর উপায় নেই।

সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে ছুটি বাড়ানো বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়টি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’ অক্টোবরে খোলার বিষয়ে কোনও নির্দেশনা দিতে পারেনি। করোনা আক্রান্তের হার কমলেও এখনও সিঙ্গেল ডিজিটে যায়নি। নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে থেকে খোলা যাবে তা বোঝা যাবে আক্রান্তের হার সিঙ্গেল ডিজিটে যাওয়ার উপর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনায় আক্রান্তের হার যেভাবে কমছে তাতে নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যেতেও পারে। অক্টোবরের মাঝামাঝি যদি করোনায় আক্রান্তের হার সিঙ্গেল ডিজিটে চলে আসে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে ১৫ দিনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর নভেম্বরের শুরুতে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিসেম্বরে খোলার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ে নিতে হবে। সেক্ষেত্রেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫ দিন সময় লাগবে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। সেই হিসেবে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রমের জন্য সময় থাকে মাত্র চার দিন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট সব বিষয় মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর গত ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে ফাইল পৌঁছে। ওই দিনই মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, পিইসি ও সমমান পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে না। স্ব-স্ব বিদ্যালয় নিজেরা নিজেদের মত করে পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করবে।

এদিকে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনায় বলা হয়, গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক স্তরের ব্যাহত হয়েছে প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটির আগে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ শিখন সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে সংক্ষিপ্ত পাঠ-পরিকল্পনা করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন জানান, নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা গেলে ১ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু পঞ্চমের শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। নভেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না গেলে মূল্যায়নও সম্ভব হবে না।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট