চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ

এলো খুশির ঈদ

মিহ্রাজ রায়হান

৪ জুন, ২০১৯ | ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ

এসেছে বিভেদ-বৈষম্য-অহমিকা ভুলে নবাব-নফর বাদশা-ফকিরের কাঁধে কাঁধ মিলানোর দিন। ফিরে এলো মহাখুশির ঈদ।
আজ ভুলি কি করে সাম্য ও মানবতার, দ্রোহ ও প্রেমের কবি নজরুলের সেই গান ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’! এ শুধু গান নয়, জাতিকে প্রাণিত ও চেতনাকে শাণিত করার অমর অক্ষয় আহ্বান। তাঁর সাথে আজ আমরাও কণ্ঠ মিলাই- ‘আজ ভুলে গিয়ে দোস্ত-দুশমন হাত মিলাও হাতে/ তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্বনিখিল ইসলামে মুরীদ/ তোরে মারল ছুড়ে জীবনজুড়ে ইট-পাথর যারা/ সেই পাথর দিয়ে তোলরে গড়ে প্রেমেরই মসজিদ।’
আজ আকাশে শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলেই কাল ঈদ। অন্যথা হলে পরদিন। তবে আগে থেকেই ঘরে ঘরে পড়েছে সাজ সাজ রব। ধর্মের সাথে নিজস্ব সংস্কৃতির মিশেলে বাঙালির ঈদ অপূর্ব অসাধারণ। বাহারি পোশাক, রকমারি সাজ, বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, হল্লা করে ঘোরাফেরা সবই ঈদকে করে বৈশিষ্ট্যময়। মুসলমানের সবচেয়ে খুশির ও সর্বপ্রধান উৎসব এই ঈদুল ফিতর। তবে সমাজের অন্য ধর্ম ও গোত্রের মানুষও উপভোগ করে এই ঈদ। উৎসবপ্রিয় জাতি হিসেবে বিশ্বসমাজে খ্যাত বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাও মুসলমানদের এ উৎসবে সামিল হয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে। এ উৎসবপ্রিয়তা আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, সমৃদ্ধ করেছে ধর্মীয় জীবনকেও। সব মিলিয়ে ঈদকে নান্দনিক উৎসবে পরিণত করেছে বাঙালি জাতি।
আল্লাহ্র নির্দেশমতো মাসজুড়ে অতি তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত রোজা পালন করেছে বাংলাদেশের মুসলমানেরা। রোজার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমান শিখেছে ভোগস্পৃহা নিয়ন্ত্রণ, শিখেছে ত্যাগের মন্ত্র আর সহমর্মিতা। মুসলমান সংযমী হয়েছে, ক্ষুধার কষ্ট সয়ে তাদের হৃদয় হয়েছে খোদামুখি। অনাহারি অভুক্তের কষ্ট বুঝতে পেরে তারা হয়েছে দরাজ-দিল। পরম কাক্সিক্ষত ঈদের চাঁদ ছড়িয়ে দিচ্ছে অনাবিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। ঈদ মানেই বাঁধভাঙ্গা জোয়ার। ঈদের আনন্দ সাগরে অবগাহন করবে আবালবৃদ্ধবণিতা। স্বপ্নডানায় ভর করে স্বপ্নরঙিন মন ছুটে চলবে দূর অজানায়। ঈদের আনন্দে বাড়তি সংযোগ রঙ-বেরঙ ঈদকার্ড। সোশাল মিডিয়ার চরম দাপটেও ঈদকার্ড বিনিময় বন্ধ হয়ে যায়নি। দেশের আনাচে কানাচে সুধীজন আর গুণীজনেরা আজও ঈদকার্ড দিয়ে নিজেদের শুভ কামনাটুকু জানিয়ে দিতে কার্পণ্য করছেন না। এখানে ধর্ম গৌণ, বাঙালি সংস্কৃতিই মুখ্য বিষয়। ঈদকার্ড বা মুঠোফোন বার্তা বা ই-মেল বার্তা সমানে চলছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। রোজা কে রাখেনি সেটা মুখ্য নয়, একসাথে বসে ইফতার করার কি যে আনন্দ! ঈদ উপহার পাবার আনন্দও এখানে নতুন মাত্রা যোগ করে। পাবার আনন্দের শেষ আছে কিন্তু দেবার আনন্দের শেষ নেই। ধনীর সম্পদে, জ্ঞানীর জ্ঞানভা-ারে সকলের অধিকার আছে। ইসলামের শিক্ষা হলো এসবের সুষম বণ্টন। ‘আমার ক্ষুধার অন্নে তোমার অধিকার না থাকতে পারে কিন্তু আমার উদ্বৃত্ত অর্থে তোমার নিশ্চয়ই দাবি আছে’- এ শিক্ষাই ইসলামের। পৃথিবীর আর কোনো ধর্ম এত বড় শিক্ষা মানুষের জন্যে নিয়ে আসেনি। ঈদ এ মহাসাম্যের বাণী নিয়েই এসেছে। জাতীয় কবি নজরুল বলেছেন, ‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসেনি নিদ/ মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?/ এক বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার/ উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু-পাঁজরের হাঁড়?/ আসমান-জোড়া কাল কাফনের আবরণ যেন টুটে? এক ফালি চাঁদ ফুটে আছে, মৃত শিশুর অধর-পুটে।’ রোজা যদি সে দরিদ্রকে ভালোবাসতে না শেখালো, সে দরিদ্রে সাহায্য করতে না শেখালো তবে ঈদের এ আনন্দ অর্থহীন। দীন-কাঙ্গালেরে অভুক্ত রেখে ভরপেটে যে ঘুমায় সে আর যা-ই হোক, মুমিন নয়। এ শিক্ষা মহামানবের, মানবতার প্রশিক্ষক মহানবী (সা.)-এর।
এতো আনন্দের মাঝেও ঈদ খুশির বার্তা বইয়ে দেবে না তাদের ঘরে যারা নিকট অতীতে স্বজনদের হারিয়েছেন। পবিত্র ঈদের দিনেও সেই হাসিমুখের ওপর বিষাদের কালোছায়া ফেলবে প্রিয়হারানোর গভীর কষ্ট। আজকের দিনে শুভ কামনা থাকবে মহান আল্লাহ্র করুণাধারায় অন্তত কিছুক্ষণের জন্যে মুছে যাবে প্রিয়হারানোর সেই বেদনা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট