চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

হৃদয়ে ক্ষত নিয়ে ঈদ করবেন রোহিঙ্গারা

আরফাতুল মজিদ, কক্সবাজার প্রতিনিধি

৪ জুন, ২০১৯ | ১২:২১ পূর্বাহ্ণ

বিগত বছর দেড়েক আগেও মিয়ানমারের রাখাইনের হাসসুরাতা গ্রামে কাঠের তিনতলা বাড়িতে পরিবারকে নিয়ে আনন্দের ঈদ কাটিয়েছিলেন জাহানারা বেগম। এবার ঈদের প্রস্তুতি জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, খাওয়া আর থাকা নিয়ে যেখানে চিন্তার শেষ নেই, সেখানে আবার কিসের ঈদ? যেখানে প্রতিমূহূর্ত অভাব তাড়িয়ে বেড়ায়, সেখানে আবার ঈদের প্রস্তুতি কেমন হবে?

মংডুর সাহেববাজার থেকে বাংলাদেশে আসার আগে চোখের সামনে একমাত্র ছেলে আর দুই নাতিকে খুন হতে দেখেছেন ৭০ বছর বয়সী আমির আলী। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার কোনো পরিবার নেই। আমি কার সঙ্গে ঈদ করব?

বিষাদের দীর্ঘশ্বাস বুকে চেপে মুখে মলিন হাসি ফুটিয়ে ঈদের দিনটি পার করে দিবে কক্সবাজারের ৩০টি শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ঈদের নামাজ ছাড়া দিনটি আর কোনও বিশেষত্বই বহন করবেনা, আনন্দ নয় বরং উদাস চোখের স্মৃতির জলে ডুবেই দিনটি শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তাদের অনেকে। এদিকে ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঈদুল ফিতর দরজায় কড়া নাড়লেও কক্সবাজারের টেকনাফের লেদা, মৌচনি, জাদিমুড়া, তুলা বাগান, বাহাছড়া, নয়াপাড়া, শীলখালী ও হোয়াইক্যংয়ের পটুবনিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসবের কোনো প্রস্তুতি নেই।

গত দুই মাস আগে লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে ছেলেসন্তান জন্ম দিয়েছেন মিনারা বেগম। একমাত্র ছেলের প্রথম ঈদে নতুন জামা কিনে দেবেন কীভাবে সেই চিন্তা তার। আরও পাঁচটি মেয়ে রয়েছে তার। তিনি বলেন, মিয়ানমারে স্বামী আবদুল হাকিমের তিনতলা কাঠের বাড়ি ছিল। ছিল তিন একর জমির চিংড়ি ঘের। এখন সব হারিয়ে ঝুপড়ি ঘরে থাকতে হচ্ছে। গত বছর ঈদে প্রত্যক সন্তানকে নতুন জামা দিয়েছিলেন, কিন্তু এখানে নিয়মিত খাবারই জোগাড় করা যাচ্ছে না।

দিল মোহাম্মদ নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, ভাবছি একটি মাত্র ছোট মেয়েকে কিছু ত্রাণ বিক্রি করে নতুন জামা কিনে দেব। এদিকে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে স্থানীয় দরিদ্রদের পাশাপাশি রোহিঙ্গারাও সাহায্যের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের আবদুল মতলব বলেন, ঈদ নয়, কীভাবে প্রাণে বেঁচে থাকবেন সেই চিন্তায় রয়েছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গারা যেভাবে পাহাড় ও বন কেটে ঘর করছেন, তাতে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

সোমবার (৩ জুন) সকালে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে পুরনো জামা পরে হাঁটছিল রোহিঙ্গা শিশু আবদুল খালেক। সে জানায়, এপারে তার কেউ নেই, নেই ওপারেও। গত দু’বছর আগে পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে রোহিঙ্গাদের দলে সঙ্গে এপারে পালিয়ে আসে সে। পরিবারের সদস্যরা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তা জানা নেই। তবে সে পরিবারের খোঁজে মিয়ানমারে যেতে চায়। কিন্তু সেখানে সেনাবাহিনীর ভয়ে সে ভীত বলে জানিয়েছে। ঈদ আসলে সে যন্ত্রণা বুকে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের হাতড়ে বেড়ায় বলে জানিয়েছেন শিশু আবদুল খালেক।

টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের আজিম উল্লাহ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে হারানোর সেই যন্ত্রণা এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়। বাংলাদেশে আসার পর গত দু’বছরের কোন ঈদে এক চামচ সেমাইও খেতে পারিনি। এবারের ঈদেও তাদের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াবো।

শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারি বরাদ্দ এখন পর্যন্ত আসেনি। তবে বিভিন্ন এনজিওর পক্ষ থেকে তাদের জন্য ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বরাদ্দ রয়েছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট