চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর উন্নয়নসহ পাঁচ প্রকল্প

২৫০ কোটি ডলারের সহায়তা চুক্তি সই

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর উন্নত দেশের স্বপ্ন পূরণে ‘পাশে থাকবে’ জাপান

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

৩০ মে, ২০১৯ | ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ

বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের সঙ্গে আড়াইশ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। গতকাল বুধবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এই চুক্তি হয়। বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি ও ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ চুক্তিতে সই করেন। এই ঋণের অর্থে মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১), বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক প্রকল্প (২), জ্বালানি দক্ষতা ও সুরক্ষা সহায়ক প্রকল্প (পর্যায়-২) ও মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে (৫) অর্থায়ন করা হবে। চুক্তির পর দুই নেতা যৌথ বিবৃতি দেন। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ‘পরীক্ষিত বন্ধু’ জাপানে চারদিনের সফরে গত মঙ্গলবার টোকিও পৌঁছান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর জাপান যাওয়ার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত এবং শিল্পায়নের জন্য জাপান এ সহায়তা দিচ্ছে। ৪০তম এই প্যাকেজ আগের বারের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি। চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতার আগে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা ও শিনজো আবে।
গতকাল বিকাল পৌনে ছয়টার দিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান শিনজো আবে। এসময় সুসজ্জিত একটি দল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠক শুরু হয়। দুই দেশের নীতিনির্ধারক ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক প্রমুখ।
জাপান এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। ১৯৭২ সাল থেকে দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশ মোট এক হাজার ১৩০ কোটি ডলারের সহায়তা পেয়েছে। চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ হাসিনার এটাই হচ্ছে প্রথম জাপান সফর। আজ বৃহস্পতিবার ‘দ্য ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এ সম্মেলনে তিনি এশিয়ার সম্ভাবনা ও উত্থান নিয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরবেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও তাত্ত্বিকদের সামনে।
‘রপ্তানিমুখী খাতে বিনিয়োগ করুন’
বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য জাপানি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈচিত্র্য দেখতে চাই। এক্ষেত্রে, জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে রপ্তানিকেন্দ্রিক খাতগুলোতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানের আহ্বান জানাই।
বুধবার (২৯ মে) সকালে টোকিওতে জাপান-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যকার চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, বিদেশি বিনিয়োগে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ অন্যতম উদার একটি দেশ। বাংলাদেশে আইনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা, উদার ট্যাক্স পলিসি, যন্ত্রপাতি আমদানিতে কর রেয়াত সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। শতভাগ বিদেশি মালিকানা, লভ্যাংশ এবং মূলধনের পূর্ণ প্রত্যাবর্তন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ইইউ, কানাডা এবং জাপানসহ বিশ্বের বেশিরভাগ শীর্ষ বাজারে অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রবেশাধিকারের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
উন্নত দেশের স্বপ্ন পূরণে ‘পাশে থাকবে’ জাপান
বাংলাদেশের উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণে জাপানের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে।
বুধবার টোকিওতে জাপান ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।
বৈঠকের পর শিনজো আবে ও শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের সঙ্গে আড়াইশ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
চুক্তির পর যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি আমরা। এ লক্ষ্য পূরণে জাপান আমাদের পাশে থাকবে ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে যাবে বলে প্রধানমন্ত্রী আবে আমাকে নিশ্চিত করেছেন।”
জাপান এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। ১৯৭২ সাল থেকে দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশ এক হাজার ১৩০ কোটি ডলারের সহায়তা পেয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর দুটি ৩৬ হাজার কোটি টাকার মাতাবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বন্দর এবং ২২ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থই দিচ্ছে জাপান।
বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জাপানের জন্য ‘বিশেষ জায়গা’ রয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পর থেকেই জাপানের সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। জাপানের ঐতিহাসিক উন্নয়ন থেকে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন।
“স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলতে পারি যে, সেই কাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এখন আমরা সঠিক পথ ধরেই এগিয়ে চলেছি।”

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট