চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

করোনা : আইভারমেকটিন’র কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ জুন, ২০২০ | ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় এন্টি-প্যারাসাইটিক বা পরজীবীনাশক ওষুধ আইভারমেকটিন-এর সঙ্গে এন্টিবায়েটিক ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে একটি দৈবচয়নভিত্তিক, ডাবল-ব্লাইন্ড প্লাসিবো-নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষামূলক গবেষণা শুরু করেছে। ঢাকায় করোনার চিকিৎসায় নির্ধারিত চারটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের নিয়ে আগামী দুই মাসের মধ্যে গবেষণাটি শেষ করা হবে।

আইসিডিডিআরবি জানায়, আইভারমেকটিনের সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিন-এর সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান করলে ভাইরাসের সংক্রমণ কমার হার এবং জ্বর ও কাশি কমতে কয়দিন লাগে, সেসম্পর্কে ধারণা লাভ করাই এই গবেষণার লক্ষ্য। এছাড়া এই গবেষণা অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তন, অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও রোগী কেন ৮৮ শতাংশের বেশি অক্সিজেন স্যাচুরেশন (এসপিও২) ধরে রাখতে পারে না, রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ ও হাসপাতালে ভর্তি থাকার দিনের সংখ্যায় পরিবর্তন এবং এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করা।

আইসিডিডিআরবি আরও জানায়, এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সঙ্গে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেল যুক্ত আছেন। এই গবেষণায় করোনায় পরীক্ষায় নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত ৪০-৬৫ বছর বয়সী আগ্রহী ও যারা মৃদু অসুস্থ এবং সাত দিনের কম সময়ব্যাপী অসুস্থতায় ভুগছেন এমন রোগীদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। হৃদরোগ, কিডনি এবং লিভারের সমস্যা আছে এবং অন্তঃসত্ত্বা বা বুকের দুধ খাওয়ান-এমন নারীদের এই গবেষণার আওতায় রাখা হবে না। কারণ গবেষণায় ব্যবহৃত ওষুধ দুটির প্রতি এলার্জি আছে।

গবেষণার আওতাভুক্ত একটি দলের রোগীরা এক ডোজ আইভারমেকটিন-এর সঙ্গে পাঁচ দিনব্যাপী ডক্সিসাইক্লিন পাবেন, অপর একটি দল পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিদিন শুধু একটি করে আইভারমেকটিন পাবেন ও তৃতীয় দল পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিদিন একটি করে প্লাসিবো পাবেন। পরীক্ষার ওষুধ ও প্লাসিবোগুলো একইভাবে প্যাকেজ করা হবে এবং গবেষণাধীন ব্যক্তি ও চিকিৎসকরা কেউ জানবেন না কোন রোগী কোন চিকিৎসা পাচ্ছেন।

আইসিডিডিআরবি জানায়, দেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এই গবেষণায় আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই গবেষণা শেষ হবে। এই গবেষণায় করোনার চিকিৎসায় নির্ধারিত ঢাকার চারটি হাসপাতালের ৭২ জন রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাথে গবেষণাটি শুরু হয়েছে। এছাড়া বাকি হাসপাতালগুলোর সাথে আলোচনা চলছে।

আইসিডিডিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক জন ডি ক্লেমেন্স বলেন, নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন কতটা নিরাপদ ও কার্যকর তা জানার লক্ষ্যে আমাদের এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য আমি বেক্সিমকো ফার্মাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে আইভারমেকটিন-এর প্রথম র‌্যান্ডমাইজড, সুপরিকল্পিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই গবেষণাসহ অন্য দেশে চলমান গবেষণার ফলাফল ইতিবাচক হলে কোভিড-১৯ মহামারির জন্য আইভারমেকটিন একটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজপ্রাপ্য সমাধান হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।

আইসিডিডিআরবি জানায়, আইভারমেকটিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি ওষুধ। এটি ১৯৮০ সাল থেকে পরজীবীজনিত সংক্রমণ প্রশমনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অতীতে ফল অনুযায়ী গবেষণাগারে অনেক ধরনের ভাইরাসনাশক হিসেবেও এটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

আইসিডিডিআরবি আরও জানায়, বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণের হার, এর সঙ্গে সম্পর্কিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার নজিরবিহীন। বিশ্বের প্রায় ৮২ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত। গত পাঁচ মাসে মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ৪ লাখ ৪৫ হাজার মানুষ।

জানা গেছে, সম্প্রতি নতুন করোনার সম্ভাবনাময় চিকিৎসায় আইভারমেকটিনের ব্যবহার মানুষের ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে ও করোনার চিকিৎসায় এটি কেমন কার্যকর তা দেখার জন্য অনেক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। আইভারমেকটিন একটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের এবং বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত ওষুধ। তবে ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা, বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, মুখ বা কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফোলা, স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া (মাথা ঘোরা, খিঁচুনি, বিভ্রান্তি), রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া ইত্যাদি মানুষের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারে কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এ জন্যে শারীরিক, ক্লিনিক্যাল এবং গবেষণাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে রোগীদের। হাসাপাতাল থেকে ছাড়ার ছয় সপ্তাহ পর তাদের পুনরায় পর্যবেক্ষণ করা হবে। গবেষণার আওতাভুক্ত সকল রোগী তাঁদের অবস্থা অনুযায়ী প্রচলিত কোভিড-১৯ চিকিৎসা সেবা পাবেন।

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট