চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আমার পর কে, দলই ঠিক করবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক , ঢাকা অফিস

২৭ এপ্রিল, ২০১৯ | ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির কোনো বিষয়ে সরকারের কোনো চাপ নেই। বিএনপির যে সাংসদ শপথ নিয়েছেন, তিনি স্থানীয় জনগণের চাপের কথা বলেছেন। বিএনপির রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়েও সরকারের কোনো চাপ বা চেষ্টা নেই। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে সরকারের চাপ থাকার কারণ নেই। কেননা প্যারোলে মুক্ত হবেন কি না, সেটা নির্ভর করে দ-প্রাপ্ত ব্যক্তির আবেদনের ওপর। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো আবেদন আসেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুঝতে হবে বিএনপির জন্ম কোথায়। বিএনপি স্বর্ণলতার মতো। দেখতে সুন্দর কিন্তু শেকড় নেই। নিজের দল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ পোড় খাওয়া দল। এই দলে সুবিধাভোগী বা অনুপ্রবেশকারী আছে বলে মনে করি না। তিনি বলেন, কিছু লোক আসবে যাবে, এটা রাজনীতিতে স্বাভাবিক।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। সম্প্রতি ব্রুনেই সফর শেষে সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ব্রুনেই সফরে বিভিন্ন চুক্তি, সমঝোতা ও সফরের বিভিন্ন দিক নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ঘণ্টাব্যাপী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপিকে রাজনীতিতে পুনরুজ্জীবিত করাটা কী, আমি বুঝি না। বিএনপির কোনো ব্যাপারেই সরকার চাপ দিচ্ছে না। তাদের দলের একজন সদস্য শপথ নিয়েছেন। এ জন্য কেন সরকার তাঁকে চাপ দিতে যাবে। ওই সাংসদ নিজেই তো বলেছেন জনগণের চাপের কারণে তিনি শপথ নিয়েছেন।’ বিএনপির চেয়ারপারসনকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে সরকার আগ্রহ বা চাপ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখানে সরকারের কিছু করার নেই। প্যারোলের জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন আসেনি। এখানে আমাদের প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তারা তাদের সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা করে। এখানে সিদ্ধান্ত বিএনপির। সরকারের চাপ থাকবে কেন?
আওয়ামী লীগে সুবিধাভোগী ঢুকছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে দলের সভানেত্রী ওই সাংবাদিকের কাছে এমন নেতাদের সম্পর্কে তালিকা চান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সারা জীবন আন্দোলন করেছেন, কষ্ট করেছেন। এখন যদি একটু ভালো থাকে, সেটা কি দোষের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলে নয়, দেশের মানুষ ভালো আছে। আওয়ামী লীগ এলে দেশের মানুষের উন্নতি হয়।
জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বেগ-শঙ্কা আছে: সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সব সময়ই উদ্বেগ হওয়ার কারণ আছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তবে সবার আগে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। সেখানে খ্রিষ্টানরা করেছে। শ্রীলঙ্কায় মুসলিমরা। এ জন্য আমি বলি, জঙ্গিবাদের কোনো ধর্ম নেই। দেশ নেই। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। কিন্তু তারপরও শঙ্কা আছে। এটা এখন আন্তর্জাতিক একটা বিষয় হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘এই সন্ত্রাসী হামলা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার মাধ্যমে এদেশে শুরু হয়েছে। এরপর বিএনপি-জামায়াত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। নির্বাচন ঠেকাতে তারা ২০১৩ সালের শেষ থেকে শুরু করে ২০১৪, ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস করে বহু মানুষ হত্যা করেছে। সর্বশেষ এই অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ নিয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে আমাদের অবস্থানের কারণেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু, শুধু নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এজন্যই বক্তব্যের শুরুতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছি।’
বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের সমস্যার দায় বিদেশি সংস্থাকেও নিতে হবে : ভারত, রাশিয়া, জাপান ও চীন চায় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হোক কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের জোরালো ভূমিকা নেই, স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা যেতে চায় না। জোরও করতে পারি না। এর সঙ্গে বিদেশি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও চায় না কক্সবাজার ছাড়তে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি নিজেদের থাকা, খাওয়ার সুব্যবস্থা চায়। সহজ যাতায়াত চায়। এ কারণে তারা কক্সবাজার ছাড়তে চায় না। অথচ ভাসানচরে নেওয়া গেলে রোহিঙ্গারা ভালো থাকতে পারত। তাদের জীবন এতটা অমানবিক হতো না।’ তিনি বলেন, রোহিঙ্গা যুবকেরা বেকার। বেকার থাকাটা ভালো নয়। তখন নানা চিন্তা মাথায় আসে। এদের সহজে জঙ্গিবাদে জড়ানো যায়। ব্যবহার করা যায়।
এখন সময় অনলাইনের : গণমাধ্যমের বিশেষ করে কাগুজে পত্রিকার খারাপ সময় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যুগের চাহিদা বা প্রযুক্তির চাহিদা হলো অনলাইন সংবাদপত্রের। বিশ্বের অনেক দেশে বড় বড় পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো এখন কেবল অনলাইনে আছে। কাগুজে পত্রিকা বের করে না। সম্প্রচার মাধ্যম সম্পর্কে বলেন, ‘অনেকেই টেলিভিশনের জন্য আবেদন করছেন। আমি বলেছি দিয়ে দাও। এতে চাকরির বাজার বড় হবে।’ সরকার প্রধান আরও বলেন, আমরা সবকিছু ডিজিটালাইজড করে দিয়েছি, স্যাটেলাইটও হয়েছে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও টিভি চালানো যায়। তিন মাসের জন্য বিনা পয়সায় (টিভি চ্যানেল) চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চ্যানেলগুলো সেভাবে নিচ্ছে না। অথচ বিদেশি জায়গায় অনেক টাকা দিচ্ছে। কিভাবে আমাদের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অল্প খরচে টেলিভিশন চালাতে পারে সে জন্য কথা চলছে।
সরকারের ১০০ দিন নিয়ে আনন্দের কী আছে: প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ বলছেন সরকারের ১০০ দিন নিরানন্দের। এখানে আনন্দের কী আছে। আর সরকার তো ১০০ দিন ধরে তো কোনো কাজ করছে না। তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণের জন্য আওয়ামী লীগ একাই এক’শ। তিনি বলেন, ‘যারা নিরানন্দে ভোগেন তাঁরাই নিরানন্দ খোঁজেন। এদের সবাইকে আমি চিনি। আমার অচেনা কেউ নেই।’
আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্ব ঠিক করবে দল: আওয়ামী লীগের পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবে, তা দলই ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি একসময় অবসরে চলে যাবো। তখন দলে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তবে কে নেতৃত্বে আসবেন তা ঠিক করবে দল। আওয়ামী লীগ ঠিক করবে যে, দলের নেতৃত্ব দেবেন কে। সেটা আমি ঠিক করবো না।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনীতিক দল, জনমানুষের দল। দলের একটি গঠনতন্ত্র রয়েছে, সে অনুযায়ী-ই দল পরিচালিত হয়। আগে প্রতিবছরই সম্মেলন হতো। কিন্তু এখন তা সম্ভব হয় না কারণ খরচাপাতিসহ বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে দেশজুড়ে তৃণমূলে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সম্মেলন হবে। এরই মধ্যে আটটি টিম করে দিয়েছি- তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকেও ডিজিটালাইজড করতে কাজ করছি। এরই মধ্যে টিমও তৈরি করে দিয়েছি। দলের সবই ডিজিটাইলজড করে দেয়া হচ্ছে। এই কাজটি হলে সবই একজায়গায় বসে এক ক্লিকেই জানা সম্ভব হবে।
রাজনীতি থেকে অবসর নেয়া প্রসঙ্গে চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অবসর তো নিতেই হবে। এরপরে দলের নেতৃত্বে কে আসবে কিংবা নেতা কে হবেন-সেটা বেছে নেবে দেশের জনগণ এবং আওয়ামী লীগ। দেশের উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ক্ষমতায় এলে যে দেশের উন্নয়ন করা যায় সেটি আওয়ামী লীগ করে দেখিয়েছে। বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছি। এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে নেয়।
নুসরাত হত্যায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপরাধী যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজেই এ বিষেয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ আমি উদ্যোগ না নিলে তো মেয়েটিকে চরিত্রহীন বানিয়ে দেওয়া হতো। এছাড়া তাকে নিয়ে নানা ধরনের কথা বলা হতো। এজন্য আমি নিজেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। এ হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট