চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

মক্কা বিজয় দিবস আজ

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৬ মে, ২০১৯ | ৬:২৮ অপরাহ্ণ

পবিত্র রমজান মাসের ২০ তারিখ আজ। এ দিনটি ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ একটি ঘটনার সাক্ষী। শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে অনন্য মর্যাদার অধিকারী এ ঘটনাটি হলো মক্কা বিজয়। এ দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হিজরতের অষ্টম বছরে ১০ হাজার মুসলিম সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে মক্কা নগরী জয় করেছিলেন। আজ থেকে ১৪৩২ বছর আগে রাসুলে কারিম (সা.) তৎকালীন আরব ভূমির সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জনপদে বিজয় পতাকা উড়িয়েছিলেন। এ ঘটনা ছিল মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের, সাফল্যের ও সন্তুষ্টির।

৪০ বছর বয়সে ওহি লাভের পর যখন হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষকে রাব্বুল আলামীনের দিকে আহ্বান জানালেন ও সব ধরনের অন্যায় থেকে সরে আসতে বললেন, তখন দীর্ঘদিনের চেনা মানুষরাই চলে গেল তার বিপক্ষে। মানুষের ইহ ও পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও সাফল্যের পথে তিনি আহ্বান জানাতে লাগলেন। অথচ মক্কার লোকেরা তার বিরোধিতায় নেমে পড়ল। শুধু নবী কারিম (সা.) নন, যারা ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের জীবনধারায় আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন, তাদের ওপরও নেমে এসেছিল অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচার। একপর্যায়ে মুসলমানদের পক্ষে অসহনীয় হয়ে পড়ে অমুসলমানদের আচরণ। জীবন রক্ষা করাই তাদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়ে। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমতি আসে হিজরতের। সুদূরের পল্লী ইয়াছরিব থেকে আহ্বান আসে ইসলামের নবী ও অনুসারীদের। শেষ নবীকে আশ্রয় দেয়ার ও বরণ করে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে সেখানকার আওস ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরা।

নবুওয়াতের ১৩তম বছরে মহানবী (সা.) মক্কা ছেড়ে ইয়াছরিবে হিজরত করেন। ইয়াছরিবের নাম হয়ে যায় মদীনাতুন নবী বা সংক্ষেপে মদীনা। এখান থেকে অভাবনীয় গতিতে ইসলামের প্রসার ঘটে। মক্কায় কোরাইশ গোত্র আরবে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও মর্যাদাপূর্ণ হওয়ায় তাদের বিরোধিতা ছিল ইসলামের প্রসারে একটি বড় অন্তরায়। তাছাড়া তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র তৎপরতাও চালায়। বদর, উহুদ, খন্দক ইত্যাদি যুদ্ধে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে মুসলমানদের। তবে এর মধ্যে খোদায়ী মদদের কারিশমাও প্রত্যক্ষ করেছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আসে মক্কা বিজয়ের পালা।

মক্কা জয়ের জন্য মহানবী (সা.) এর অভিযান পরিচালনার পেছনে কাজ করেছে হুদায়বিয়ার সন্ধি। মক্কার কুরাইশরা হিজরি ৬ষ্ঠ বছরে সম্পাদিত এ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছিল। মহানবী (সা.) প্রতিকার চেয়েছিলেন; নাহলে সন্ধির সমাপ্তি হয়েছে মনে করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কুরাইশরা কোনো সাড়া না দেয়ায় তিনি অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।

অষ্টম হিজরির রমজান মাসে এ অভিযান পরিচালিত হয়। ২০ রমজান মহানবী (সা.) মক্কায় প্রবেশ করেন। প্রায় রক্তপাতহীন সে অভিযানে ইসলামের পতাকা সেখানে সমুন্নত হয়। আর সত্য ধর্মের গৌরব প্রতিষ্ঠিত হয় আরবের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরীতে। হযরত ইবরাহিম খলিল (আ.) একক প্রভুর ইবাদতের জন্য যে বায়তুল্লাহ নির্মাণ করেছিলেন, তা ভরে ফেলা হয়েছিল মূর্তি ও বিগ্রহে। মহানবী (সা.) আল্লাহর ঘর থেকে ৩৬০টি মূর্তি অপসারণ করেন। এতদিন যারা ইসলামের শত্রুতায় সদা তৎপর ছিল, তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। শান্তি ও মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করলেন ইসলামের নবী (সা.)। তাই মক্কা বিজয়ের ঘটনা বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে এক অনন্য ও অসাধারণ ঘটনা। আর এ কারণেই ২০ রমজান মুসলমানদের জন্য বিপুল গৌরবের স্মৃতিস্মারক।

পূর্বকোণ/ রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট