চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চমেক ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় পুলিশসহ ৮৭ জন করোনা শনাক্ত

করোনা প্রতিরোধ : আগামী ১০ দিন সর্বোচ্চ সতর্কতার শেষ সুযোগ

পূর্বকোণ ডেস্ক

৩১ মার্চ, ২০২০ | ৮:১৫ অপরাহ্ণ

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ভাইরোলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ জামাল ঊদ্দিন বলেছেন, এবার আমরা করোনার তৃতীয় ধাপে প্রায় পৌঁছে গিয়েছি। ভাইরাসটি আগামী ৬ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত স্থায়ীত্ব করবে। তাই এ মূহুর্তে দরকার সর্বাধিক সতর্কতা ও কোয়ারেন্টাইন। এরপর আর সাবধান হয়েও কোনো লাভ বা প্রয়োজন হবে না।

আগামী কিছুদিন মোট সংক্রমিতদের ৪০-৫০ শতাংশ কোনো লক্ষণ ছাড়াই ভাইরাসটি বহন করবে ও অন্যদের নীরবেই সংক্রমিত করবে। রোগটি আক্রান্ত হওয়া সবার মাঝেই সাধারণ সর্দিকাশি, গলাব্যাথা আর জ্বরসহ উপস্থাপিত হবে। ভাইরাসজনিত রোগটির অস্বাভাবিক বিস্তার বা আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে সবার জন্যই সর্বাধিক সাবধানতা অবলম্বনের এটিই চূড়ান্ত আর শেষ সময়।

অপর লেখায় স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ ‘আগামী ১৪ দিন আপনার জীবন বাঁচাতে পারে’ এই শিরোনামে খুব দরকারী মতামত রেখেছেন। সেই লেখার গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশ হল জনস্বার্থে।

তিনি লিখেছেন, কর্তৃপক্ষ তাদের ১৪ দিন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এর অর্থ হলো তাদের অবশ্যই নিজ বাড়িতে থাকতে হবে এবং ওই ১৪ দিনের মধ্যে তারা বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না।

এই ১৪ দিনের গুরুত্ব কী?

করোনাভাইরাসের বংশবিস্তারে সময় লাগে সাড়ে পাঁচ দিন। আক্রান্ত হওয়ার ১২ দিনের মধ্যে মানুষের শরীরে এর লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। লক্ষণ দেখা যাক বা না যাক আক্রান্ত মানুষ ভাইরাসটির বিস্তার ঘটাতে সক্ষম। এর অর্থ হলো আক্রান্ত হওয়া থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত কোনও ব্যক্তি সংক্রমণের বিস্তার ঘটাতে পারে। এই কারণে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের শরীরে ১৪ দিনের মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাদের মধ্যে যদি লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগে তাদের অবশ্যই সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।

জ্বর ও কাশির মতো অন্য লক্ষণগুলো সেরে যাওয়ার পর এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুইবার করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেই কেবল তারা বিচ্ছিন্নতা থেকে ছাড়া পেতে পারেন। স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন থাকা কোনও ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।

১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা মানা না হলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ইতোমধ্যে তো আক্রান্ত কেউ যতটা পথ তিনি বিমানে, বিমানবন্দরে, গাড়িতে বা বাড়িতে পাড়ি দিয়েছেন, তার মধ্যেই তিনি অনেককেই আক্রান্ত করে ফেলেছেন।

আরেকটু খতিয়ে দেখা যাক। কোনও মহামারীতে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সরাসরি কতজন আক্রান্ত হতে পারে তা বেসিক রিপ্রোডাকশন নাম্বার বা আর.ও. (RO) নামে পরিচিত। কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে এই আর.ও. বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এই নতুন ধারার সংক্রামক রোগ সবাইকে সন্দেহভাজনের তালিকায় ফেলেছে।

আর.ও. একের চেয়ে বেশি হলে এর বিস্তার ঘটতে শুরু করে এবং মহামারির কারণ হতে পারে। আর আর.ও. একের চেয়ে কম হলে রোগের বিস্তার কমতে থাকে এবং একপর্যায়ে শেষ হয়ে যায়। জার্নাল অব ক্লিনিকাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী কোভিড-১৯-এর আর.ও. ২.৪৯ থেকে ২.৬৩ পর্যন্ত হতে পারে। এর অর্থ হলো একজন আক্রান্ত ব্যক্তি গড়ে ২.৫ জনেরও বেশি মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে।

কখনও কখনও এমনও হতে পারে, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি দশজন বা একশ’জনের মধ্যেও রোগটি ছড়িয়ে দিতে পারে। তাদের চরম সংক্রামক বলা হয়ে থাকে। চীন, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে এরকম চরম সংক্রামক থাকার প্রমাণ মিলেছে। তবে আরও পরিবেশগত পরিস্থিতি; আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর আচরণ এবং চূড়ান্তভাবে জনগোষ্ঠীর কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তার ওপরও নির্ভর করে।

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট