চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গণপরিবহনে এক বছরে যৌন নির্যাতনের শিকার ৫৯ নারী

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

২০১৯ সালে গণপরিবহনে ৫২ ঘটনায় ৫৯ নারী ধর্ষণ ও যৌননির্যাতনের শিকার হয়েছে। দেশের সড়ক, রেল এবং নৌপথে এসব ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।-বাংলানিউজ
যাত্রী কল্যাণ সমিতির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে দেশের সড়ক পথে মোট ৪৪টি, রেল পথে চারটি ও নৌ পথে চারটি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে ১৬টি ধর্ষণ, ১২টি গণধর্ষণ, ৯টি ধর্ষণের চেষ্টা, ১৫টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪৪টি মামলা হয়েছে এবং ৯৩জন গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এছাড়া গণপরিবহনে যাতায়াতকালে নারীরা অসম্মানজনক আচরণেরও শিকার হচ্ছে। শুধুমাত্র পরিবহন শ্রমিক, চালক, হেলপার নয় কখনও কখনও সহগামী পুরুষযাত্রী দ্বারাও এ ধরনের যৌন সহিংসতার শিকার হতে হয় নারীদের।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এর আগে ২০১৭ সালে গণপরিবহনে চাঞ্চল্যকর রূপা গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দেশবাসী ফুঁসে উঠলে জনগণের তীব্র প্রতিবাদের কারণে স্বল্পতম সময়ে এ ঘটনার বিচার সম্পন্ন হয়। চার পরিবহন শ্রমিককে ফাঁসি ও একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড  দেওয়া হলে তৎসময়ে এ ধরনের ঘটনা কিছুটা কমে আসে। তবে বর্তমানে নিপীড়নকারী, ধর্ষক, হত্যাকারীদের মামলা, গ্রেফতার ও বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, গত এক বছরে এ পরিমাণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনা শুধুমাত্র প্রতীকি চিত্র বহন করে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনার ভয়াবহতা অনেক বেশি। রক্ষণশীল সমাজ হিসেবে বাংলাদেশের নারীরা লোকলজ্জা ও সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে মামলা করে না। তাই হয়রানি এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় অসংখ্য ঘটনা চাপা পড়ে যায়।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ২ আগস্ট রাতে যশোর থেকে কমিউটার ট্রেনে খুলনায় ফেরার পথে ফুলতলা রেলস্টেশনে নামলে কর্তব্যরত খুলনার জিআরপি পুলিশ মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে এক নারী যাত্রীকে আটক করে। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), দারোগাসহ পাঁচজন পুলিশ মিলে রাতভর গণধর্ষণ শেষে পাঁচ বোতল ফেনসিডিল দিয়ে কোর্টে চালান করে দেয়। আদালতে ভয়াবহ এ গণধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা দিলে ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এতে গণধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হলেও পরবর্তীতে মামলাটি পিবিআইয়ের তদন্তে অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশকে খালাস দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ঘটনার জুডিশিয়ালি তদন্তের মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা ও তাকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির।

বিজ্ঞপ্তিতে গণপরিবহনে নারী নির্যাতন বন্ধে বেশ কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।
সুপারিশগুলো হলো
গণপরিবহনে নারী নির্যাতন বন্ধে যাত্রীকল্যাণ সমিতির সুপারিশমালা
১. গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।
২. চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের আলাদা আলাদা নেইম প্লেইটসহ পোষাক বাধ্যতামূলক করা।
৩. চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের নিয়োগপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে ডাটাবেইজ তৈরি করা।
৪. গাড়ির ভিতরে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের হটলাইন নাম্বার, ফোন নম্বর ও গাড়ির নম্বর লাগানোর ব্যবস্থা করা।
৫. গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো।
৬. বাস মিনিবাসে নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন দরজার পাশে রাখা।
৭. গণপরিবহনে অস্বচ্ছ ও বিজ্ঞাপনে মোড়ানো কাচেঁর ব্যবহার বন্ধ করা।
৮. গণপরিবহনে যৌন সহিংসতার মামলা, গ্রেফতার ও বিচার দ্রুত শেষ করা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট