চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

ঢাকায় মুনিরীয়া যুব তবলীগের এশায়াত সম্মেলনে ঢল

সিরাতুল মোস্তাকিমের ঐশী আহ্বান এশায়াত সম্মেলন : অধ্যক্ষ ছৈয়্যদ মুনির উল্লাহ্

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

কাগতিয়া আলিয়া গাউসুল আজম দরবারের মোর্শেদে আজম বলেছেন, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সৃষ্টির হেদায়তের জন্য যে পথ রেখেছেন সেই পথই সিরাতুল মোস্তাকীম। যে পথের কর্ণদ্বার নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ এবং সালেহীন বান্দারা। আল্লাহর উপর ঈমান, নবীর উপর পূর্ণ ঈমান ও অনুসরণের মাধ্যমে যাঁরা পূর্ণতার স্তরে পৌঁছান তারাই সালেহীন। কালের পরিক্রমায় আমরা পেয়েছি এমন একজন রাহবার যিনি সলফে সালেহীনের ইতিহাসে একজন কালজয়ী নক্ষত্র। শরীয়তের পূর্ণ বাস্তবায়ন, নবীর সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে নিজেকে এমনভাবে রাঙিয়েছেন যে নবী (দঃ) উনাকে আপন হাতে বায়াত করিয়ে খলিফায়ে রাসুলের মর্যাদা দিয়েছেন। নবীর বাতেনী নূর বিতরণের মাধ্যমে ইমাম হুসাইন (রাঃ) যেমন নবীর প্রেমে সর্বস্ব উজাড় করেছেন তেমনি প্রিয় রাসুলের প্রেমে হযরত গাউছুল আজমও সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। সিরাতুল মোস্তাকীমের পথে লুকানো নিয়ামতগুলোর ভা-ার উনার সংস্পর্শে। যে পথে নিয়ামত আছে সে পথে বাধা আছে, শয়তানি প্ররোচনা আছে, নফসের প্রলোভন আছে। এখানে এখলাসের মাধ্যমে গাউছুল আজম যে পথ দেখিয়েছেন সে পথ ধরে গেলে ইনশাআল্লাহ দুজাহানে বিজয় সুনিশ্চিত। কারণ উনার তরিক্বত প্রতিষ্ঠিত নবীর প্রেমের উপর, এখলাসের দৃঢ় ভিত্তির উপর সর্বোপরি শতশত রজনীতে নিরবে বিসর্জনকৃত অশ্রুর উপর। এই তরিক্বতের মূল বিষয় হচ্ছে অভ্যন্তরীন পরিশুদ্ধি। আত্মশুদ্ধির শপথে আধ্যাত্মিকতার সোপানসমূহ অতিক্রমের মধ্য দিয়ে মঞ্জিলে মকছুদ হাসিলই একমাত্র উদ্দেশ্য। তাই বাধার পাহাড়, দ্বিধার দেয়ালে মোখলেছরা ভেঙ্গে পড়ে না, হতাশায় মছকে যায় না। এশায়াতের ঐশী মিশনের ভিশন হলো নবীকে রাজি করানো, তাই নবীর ফুয়ুজাত এবং বরকত সবসময় এই তরিক্বতে জারি। এই তরিক্বতের অগ্রযাত্রার লক্ষ্যমাত্রা হলো লা মকানের রবের সাথে সাক্ষাত। হযরত গাউছুল আজমের হিকমত ও হিম্মতের অনন্য নজির এশায়াত সম্মেলন।
তিনি গতকাল ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাজধানী ঢাকার গুলিস্থানের কাজী বশির মিলনায়তন সম্মুখস্থ ময়দানে ঐতিহাসিক এশায়াত সম্মেলনে উপস্থিত লাখো মুসলমানের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, নেয়ামতের পথ ফুলের চাদর বিছানো কোন পথ নয়। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে তা বুঝা যায়। সৃষ্টির মধ্যমণি হয়েও প্রিয় রাসুলকে অনাহারে কাটাতে হয়েছে, গৃহবন্দির মত থাকতে হয়েছে, হিজরত করতে হয়েছে, রক্ত মোবারক দিতে হয়েছে, সর্বদা কাঁদতে হয়েছে, সীমাহীন বাধাকে অতিক্রম করতে হয়েছে, কাফেরদের কটু কথা শুনতে হয়েছে এমনকি প্রিয় রাসুল (দঃ) কে হত্যার ষড়যন্ত্র পর্যন্ত করা হয়েছিল, প্রিয় রাসুলের সাহাবীদেরকে ইসলাম গ্রহণের দায়ে নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে, শারীরিক ও মানসিক ভয়াবহতার শিকার হতে হয়েছিল, তবুও নবীজির পথ কেউ ছাড়েননি এবং নবীজির ইসলামই দিন শেষে বিজয়ী হয়েছিল। এই বিজয়ের মূল কারণ কারো কোন যোগ্যতা নয় বরং আমার নবীর তাকওয়া, তাওয়াক্কুল ও তাওয়াজ্জুহ। সেদিনের স্মৃতিগুলো, সুন্নতগুলো গাউছুল আজমের তরিক্বতের দিকে দৃষ্টি দিলে বর্তমানের বাস্তবতায় দৃশ্যমান। কাগতিয়ার নিভৃত পল্লি থেকে যে তরিক্বতের সূচনা হয়েছিল তা আজ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। এই যাত্রাপথের বাঁকে বাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছে হিংসুকের হিংসা, পথভ্রষ্টদের বাধা, জ্ঞানপাপীদের ছুড়ে দেওয়া কাদা, জালিমের জুলুম, মুনাফিকদের শত্রুতা। তবুও এই তরিক্বতের অভিযাত্রা যেন ঈমানের ত্যাজে বহুগুনে তেজোদীপ্ত। এই তরিক্বতের যাত্রা কোনকালে থামেনি, থামবে না, থামানো যাবে না ইনশাআল্লাহ। এটা একমাত্র গাউছুল আজমের এখলাসের বরকত, নবীর সাথে উনার পরম ভালবাসার প্রতিদান, খোদার সাথে সখ্যতার বিরল নিদর্শন।

এই তরিক্বত সিরাতুল মোস্তাকীমের নির্দেশিকা, এখানে যেমন নিয়ামত আছে তেমনি বাধা বিপত্তি থাকবে। এখলাসের সাথে যারা নিজেদেরকে এই তরিক্বতের সাথে সম্পৃক্ত রাখতে পারবে তারাই কামিয়াব হবে। এই তরিক্বতে আসার পর বড় প্রাপ্তি হলো কিছু হোক বা না হোক খাতেমা বিল খায়ের তথা মৃত্যুর সময় কলেমা নসীব হবে। আশেকের চোখ মাশুককেই দেখে, আশেকের হৃদয় মাশুককেই ভাবে। তাই কোন প্ররোচনায় প্ররোচিত না হয়ে, কোন প্রলোভনে প্রলোভিত না হয়ে, কোন প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে মোখলেছরা সমবেত হয় এশায়াত সম্মেলনে। যে সম্মেলনের চতুর্দিকে এখলাসের বেষ্টনী, শরীয়তের হুকুম আহকাম প্রতিষ্ঠার আহবান, সুন্নতে রাসুল বাস্তবায়নের বার্তা। সর্বোপরি গাউছিয়্যতের ফুয়ুজাতে ভরপুর। তাই এই সম্মেলনকে হযরত গাউছুল আজম (রাঃ) বলেছেন ইজতেমাউল মোখলেছিন অর্থাৎ সঠিক বান্দাদের সমাবেশ।

পবিত্র জশ্নে জলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) উদ্যাপন ও কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্লাহ আওলাদে মোস্তফা খলিফায়ে রাসূল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম (রাঃ) স্মরণে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ তরিক্বতের এ সম্মেলনের আয়োজন করে মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর এর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দিন, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন মহাসচিব ও ইসলামী আরবী বিশ^বিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য হযরতুলহাজ অধ্যক্ষ আল্লামা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, চট্টগ্রাম নানুপুর মাজহারুল উলুম গাউছিয়া ফাযিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হযরতুলহাজ আল্লামা মুছলেহ উদ্দিন আহমদ মাদানী, ব্যারিস্টার এস এম কফিল উদ্দীন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জনাব শহিদুল ইসলাম বাবু, পরশুরাম উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন মজুমদার প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর বলেন, কাগতিয়া দরবারের তরিক্বত অনুশীলনে আভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে যুব সমাজ আজ নিজেদের সঠিক পথে পরিচালিত করছে। বর্তমান সময়ের নানান অশ্লীলতা ও বেহায়াপরায় নিমজ্জিত যুব সমাজকে এ তরিক্বতে এসে নিজেদের সঠিক পথে পরিচালিত করার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, কাগতিয়া দরবারের হুজুর ক্বেবলা সকল বিরোধিতাকে পেছনে ফেলে অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে মানবতার আতœশুদ্ধি এবং দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। আমরা তাঁর কাজের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। বর্তমানে কিছু নামধারী মুসলমান ওলি আল্লাহগণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে চলেছেন। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সজাগ দৃষ্টি কামনা করছি।
শাব্বির আহমদ মোমতাজী বলেন, সুখে দুঃখে যারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন আল্লাহ তাদের ভালবাসেন। তরিক্বতের প্রথম শর্ত মানবতার সেবা, কাগতিয়ার হুজুর ক্বেবলা অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তার কর্মজীবন মানবজাতীর জন্য অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয়।
ব্যারিস্টার এস এম কফিল উদ্দীন বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, বর্তমান যুব সমাজ প্রাশ্চ্যাত্য অপ-সংস্কৃতির কবলে পড়ে ইসলামের অমিয়ধারা ভুলে গিয়ে পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। সৎ কর্ম এবং সৎ মানসিকতায় জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে এর থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। আর তার জন্য প্রয়োজন ওলি আল্লাহগণের ছুহবত। বর্তমানে কাগতিয়া দরবারই এমন একটি দরবার, যেখানে হাজারো পথহারা মানব গ্রহণ করছেন হেদায়তের অমৃত শরাব।

গত সপ্তাহজুড়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুধাবী, শারজাহ ছাড়াও ওমান, বাহরাইন, কাতারসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অষ্ট্রেলিয়া থেকে কাগতিয়া দরবারের শত শত অনুসারী বাংলাদেশে আসতে থাকে। সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আল্লামা ড. ছৈয়দ এমদাদ উদ্দীন, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর, মাওলানা মুহাম্মদ রাকিব উদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন নূরী, মাওলানা মুহাম্মদ এরশাদুল হক ও মুহাম্মদ সালাউদ্দীন।
মিলাদ-কিয়াম শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম (রাঃ)’র ফুয়ুজাত কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট