চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

চিকিৎসার্থে লন্ডন যাবেন খালেদা

হাইকোর্টে জামিন আবেদন জামিন আবেদনের বিরোধিতায় সোচ্চার থাকবে দুদক খালেদার প্যারোল আবেদন পরিবারের ব্যাপার : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:৫৩ পূর্বাহ্ণ

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল বিকেলে হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এই জামিন আবেদন দাখিল করেন। জামিন আবেদনে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জামিন পেলে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যেতে চান। বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছে কারাবন্দী খালেদা জিয়া কি প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা তাকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। এ ক্ষেত্রে প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার মুক্তি চান তারা। খালেদা জিয়ারও প্যারোলের বিষয়ে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তারা। তবে প্যারোল নিয়ে বিএনপি নেতারা দ্বিধাবিভক্ত হলেও নেত্রীকে মুক্ত করতে সব রকম চেষ্টা করছে তার দল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথমে প্যারোলের আবেদনের বিষয়ে বিএনপি কিছু জানে না এবং এটি পারিবারিক বিষয় বলে মন্তব্য করলেও পরে জানান– মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার মুক্তি চান তারা। অবশ্য, সরকারের বিশেষ করে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় ভালোই আছে। এরইমধ্যে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন খালেদার মুক্তি নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। ফোনে মির্জা ফখরুল খালেদার মুক্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে বলেছেন বলে জানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। যদিও মির্জা ফখরুল বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের ফখরুলকে প্রশ্ন রেখে বলেন, অসত্য কথা কেন বলবেন? তিনি কি প্রমাণ করতে চান যে ফোন করেননি? চাইলে আমি প্রমাণ দিতে পারব। আমি এতটা নিচের রাজনীতি করতে চাই না। আমি তাকে নিচে নামাতে চাই না।

দুই বছর ধরে কারাবন্দী বিএনপি প্রধানের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছে দাবি করে তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা চেয়েছে তার পরিবার ও বিএনপি। বিএসএমএমইউর ভিসির কাছে আবেদন করে তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুপারিশ চেয়েছে পরিবার। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় তার জামিন নেই। বাকী ৩৫টি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী খালেদা জিয়া। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জামিন আবেদনের বিরোধিতায় সোচ্চার থাকবে দুদক : জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিতে বিরোধিতা করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে দুদক। গতকাল বিকেলে সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিনের আবেদন দাখিল করার পর তা গতকালই রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের কপি সংশ্লিষ্ট পক্ষকে দিতে হয়। এ কারণে জামিন আবেদনের কপি সরবরাহ করা হয়।
জামিন আবেদনের কপি পাওয়ার পর দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে জামিনের আবেদনের কপি হাতে পেয়েছি। আবেদনটি পড়েছি। সেখানে তেমন নতুন কিছু নেই। শুধুমাত্র নতুন বিষয় হলো, আবেদনে বলা হয়েছে গত ১২ ডিসেম্বরের পর থেকে দিনদিন খালেদা জিয়ার শারীরীক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাই তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে তথা ইউকে’তে (যুক্তরাজ্য) নিতে চান। তিনি বলেন, আদালতে জামিনের আবেদন আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে। সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আইনগতভাবে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

খালেদার প্যারোল আবেদন পরিবারের ব্যাপার : ফখরুল
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোল আবেদন সম্পূর্ণ তার পরিবারের বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। দলের চেয়ারপারসনের প্যারোলের ব্যাপারে বিএনপি কী করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বেআইনীভাবে একটা মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী তিনি জামিন যোগ্য। তিনি জামিন পেতে পারেন এবং পাওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু এ সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে জামিন না দিয়ে আটক রেখেছে। আমরা এর জন্য আন্দোলন করছি। গত দুই বছর ধরে আমরা আন্দোলনের মধ্য আছি।’

খালেদাকে ছাড় দেওয়ার চেষ্টা হবে ভুল সিদ্ধান্ত : ইনু
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে যারা হৈ চৈ করছে এবং ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা রাজনীতির মাঠে ভুল করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। গতকাল ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ভাষা আন্দোলন ও কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। ইনু বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে সহাবস্থান, গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে মীমাংসিত বিষয় অমীমাংসিত করার চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক চক্র জামায়াত-বিএনপিকে ছাড় দেওয়ার রাজনীতি যারা করছেন এবং তাদের শক্তিশালী করার যারা চেষ্টা করছেন, তারা ভুল করছেন। বিরোধী দলকে টিকিয়ে রাখার নামে রাজাকারকে ছাড় দেওয়া, জঙ্গিদের রাজনীতিতে ছাড় দেওয়ার কোনো মানে হয়না। কিছু বিষয়ে আপস হয় না।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট