চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি প্রকৌশলীর সাফল্য

সৌরশক্তির নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন

সাইফুল আলম

২২ মে, ২০১৯ | ২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সৌরশক্তির নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বাড়বে বিদ্যুৎ সুবিধা-এমন গবেষণায় বলা যায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। সেই স্বীকৃতিও মিলেছে। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে সম্প্রতি পেয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রি। তাও অস্ট্রেলিয়ার নামী বিশ্ববদ্যিালয় আরএমআইটি ইউনিভার্সিটি থেকে। তিনি চট্টগ্রামেরই সন্তান প্রকৌশলী ইফতেখার উদ্দিন খান।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতক শেষ করার পর বৃত্তি নিয়ে যন্ত্রকৌশলে স্নাতকোত্তর করতে ২০১১ সালের দিকে ভর্তি হন অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে ইফতেখার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেলবোর্ন সিটি ক্যাম্পাসে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। স্নাতকোত্তরে অর্জন করেন ‘অস্ট্রেলিয়ান পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এওয়ার্ড’। এরপর ‘প্রফেসর রবার্ট এন্ড জোসেফিন শ্যাংক’ বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি শুরু করেন। এ বৃত্তি প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে একজনকেই দেওয়া হয়। ইফতেখার শিক্ষকতার পাশাপাশি কাজ করছেন খ্যাতনামা গবেষক অধ্যাপক গ্যারি রোজেনগার্টেনের গবেষণা দলে। সৌরশক্তি দিয়ে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশের মানুষকে বিদ্যুৎসুবিধা দিতে কাজ করছেন তাঁরা। ইফতেখারের পিএইচডি গবেষণার শিরোনাম ‘সৌর শক্তির প্রক্ষেপণ ও একীভূতকরণ যন্ত্র’। তাঁর পিএইচডি থিসিসও বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
ইফতেখারের সাফল্যের ঝুড়িতে আরও অনেক কিছু আছে। পড়ার ফাঁকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের মন জয় করেন তিনি। হয়ে ওঠেন তাঁদের প্রিয় শিক্ষক।
শিক্ষার্থীদের ভালোবাসার সেই স্বীকৃতিও পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সেরা শিক্ষকদের মধ্যে তিনি একজন। পর পর দুই বছর পেয়েছেন আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বেস্ট টিচিং এওয়ার্ড’।
সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণার আগে তিনি আরও তিনটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন ইফতেখার। এই তিনটি গবেষণার নিবন্ধ ছাপা হয় আন্তর্জাতিক জার্নালে। এর মধ্যে ২০১২ সালে এশিয়ার জার্নাল অব ওয়াটার এনভায়রনমেন্ট এন্ড পলিউশন জার্নালে প্রকাশিত হয় সীতাকু-ের জাহাজভাঙা শিল্প নিয়ে তাঁর গবেষণা নিবন্ধ। এতে তিনি জাহাজভাঙা শিল্পকে পরিবেশবান্ধব এবং দুর্ঘটনামুক্ত করার পথ বাতলে দেন। এজন্য একটি নকশাও তৈরি করেন তিনি।
একই বছর জার্নাল অব সাসটেইনবল এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্ট-এ প্রকাশিত হয় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে স্বল্পমেয়াদে কী প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে নিবন্ধ। এছাড়া ২০১৩ সালে এ স্টার জার্নাল এনার্জি পলিসিতে ছাপা হয় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আগামী একশ’ বছরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে এবং এর উত্তরণের পথ নিয়ে নিবন্ধ। এছাড়া এ পর্যন্ত আটটি গবেষণা নিবন্ধ ছাপা হয়েছে বিভিন্ন জার্নালে।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের এম এ শাকুর ও বেগম ফিরোজা শাকুরের সন্তান ইফতেখার ২০০৬ সালে স্নাতকোত্তর করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই গবেষণা কাজ চালিয়ে নেওয়া ও বিদেশে এসে পড়াশোনার জন্য তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষভাবে স্মরণ করেন তাঁর প্রয়াত মা বেগম ফিরোজা শাকুরের কথা। তিনি বলেন, আমার মায়ের দোয়া আমাকে এতোদূর নিয়ে এসেছে। আমি অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়ার পর মা যতদিন জীবিত ছিলেন সবসময় পড়ার খোঁজ নিতেন। এটা আমার অনেক বড় অনুপ্রেরণা।
ইফতেখার ভাই-বোনদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইবোনেরা আগলে রেখেছেন সবসময়। বিদেশে পড়াশোনাসহ সব সময় তারাই সাহস জুগিয়েছেন।
বাংলাদেশের তরুণদের নিয়েও আশার কথা শোনান এই প্রকৌশলী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণেরা অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। এরাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট