চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাচারতো দূরের কথা জনশক্তি রপ্তানিও করি না: এমপি শহিদ

অনলাইন ডেস্ক

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১১:৪৯ অপরাহ্ণ

কুয়েতে মানব পাচার, মুদ্রা পাচার ও ‘ভিসা বাণিজ্যে’ জড়িত থাকার যে অভিযোগ উঠেছে তা ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম।
তিনি বলেছেন, মানব পাচারতো নয়ই, জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গেও কোনোভাবে তিনি জড়িত নন। কুয়েতে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার সঙ্গেও কোনো সম্পর্ক তার নেই।
সম্প্রতি কুয়েত সিআইডির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানব পাচার নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কুয়েতি পত্রিকা আল কাবাস ও আরব টাইমস।
আল কাবাসের খবরে বলা হয়, কুয়েতে মানবপাচার ও ‘ভিসা বাণিজ্যে’ জড়িত থাকার অভিযোগে তিন বাংলাদেশির একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার পর একজনকে গ্রেপ্তার করেছে সেখানকার সিআইডি। বাকি দুজন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন; তাদের মধ্যে একজন আবার সংসদ সদস্য।
ওই চক্রের তিন সদস্য কুয়েতে তিনটি বড় কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এবং তারা অন্তত ২০ হাজার শ্রমিককে পাচার করে ৫০ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে ওই দুই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
কুয়েতি গণমাধ্যম ওই সাংসদের নাম উল্লেখ না করলেও যেসব তথ্য তারা দিয়েছে, তা লক্ষীপুরের এমপি শহিদের সঙ্গে মিলে যায়।
আর রোববার প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, মানব পাচারে যুক্ত ওই তিনজনের একজন হলেন সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম। সেখানে গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর আগেই তিনি দেশে চলে আসেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ওই এমপি একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন এবং কুয়েতে তার নিয়মিত আসা-যাওয়া রয়েছে। তবে কুয়েতে তিনি ৪৮ ঘণ্টার বেশি কখনও থাকেন না। সিআইডির তদন্তের বিষয়টি আঁচ করে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি সপ্তাহখানেক আগে দেশে ফিরে যান।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান শহীদ এনআরবি সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কোম্পানিরও চেয়ারম্যান। ক্রিস্টাল এনার্জি লিমিটেডে আরেকটি কোম্পানির পরিচালক তিনি।
কুয়েতে তার স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি শহিদের। নিজের নির্বাচনী এলাকায় তিনি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল নামেই বেশি পরিচিত।
কুয়েত, ওমান ও জর্ডানে কাজ করা মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে আছেন শহিদ। ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, প্রকৌশল, ঠিকাদারি, লজিসটিকসসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করে করে এই কোম্পানি।
সূত্রের বরাত দিয়ে আরব টাইমস লিখেছে, সেখানে ওই সাংসদের কোম্পানির কর্মীরা পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। সিআইডির তদন্তে দেখা গেছে, যাদের ওই কোম্পানি শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে নিয়ে গেছে তারা আসলে ‘ভিসা বাণিজ্যের’ শিকার। চুক্তিতে তাদের যে বেতন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে দেওয়া হয় তার চেয়ে কম।
আল কাবাস থেকে উদ্ধৃত করে আরব টাইমস ১৩ ফেব্রুয়ারি আরেক প্রতিবেদনে লিখেছে, কুয়েত সরকারের কাজ পেতে কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন বাংলাদেশের ওই এমপি। আর সেসব প্রকল্পের নামে তিনি বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মীকে কুয়েতে নিয়ে গেছেন। চাকরি পাওয়ার জন্য ওই কর্মীদের বিপুল অংকের টাকা দিতে হয়েছে।
আরব টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ওই সাংসদ তার সম্পদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিয়ে এক মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা শুরু করেছেন বলে আলোচনা রয়েছে। তার স্ত্রী নিজেও একজন সংসদ সদস্য।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শহিদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং নির্বাচিত হন। আর তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম এমপি হন সংরক্ষিত নারী আসন থেকে।
কুয়েতের পত্রিকায় আসা অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাংসদ শহিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশে ম্যানপাওয়ার কোম্পানির কোনো লাইসেন্স আমার নাই, কোনো অফিস নাই, কিছু নাই। কুয়েতের পত্রিকায় আমার নাম লেখেনি, কেউ আমার নাম বলেনি। এগুলো মিথ্যা, বানোয়াট। কারা কেন করতেছে, আমি জানি না।”
কুয়েতের ব্যবসার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি আছে। ট্রেডিং, ফ্যাসিলিটিজ ম্যানেজমেন্ট, ইলেকট্রনিক কনস্ট্রাকশন, হেভি ইকুইপমেন্টস- প্রভৃতির কাজ করি। তাতে ২৯টি দেশের লোক চাকরি করে।”
কুয়েত সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, “যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার কোম্পানির কেউ আটক বা গ্রেপ্তার হয়নি। আমি গ্রেপ্তার হওয়া কাউকে চিনিও না।”
শহিদের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি কুয়েতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, কুয়েতের বঙ্গবন্ধু স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ ব্যবসায়িক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তথ্যসূত্রঃ বিডিনিউজ

 

পূর্বকোণ/ এস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট