চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

খালেদার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে এবার সরকারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৬:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন তার স্বজনেরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি মাসে বিদেশ যাচ্ছেন- এমন গুঞ্জনও গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির অন্দরমহলে চাওর রয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে বেগম জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে সরকারের সঙ্গে তলে তলে বিএনপির কথাবার্তা চলছিল। সরকারও রাজি ছিল। কিন্তু বাধ সাধে বিএনপির ঢাকা আর লন্ডনের দ্বিমুখী সিদ্ধান্ত। এখানে বিএনপির রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির হিসাব আছে, বিষয়টি খালেদা জিয়া নিজেও জানেন। তার বাইরে, কিছুদিন আগে চিকিৎসকদের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার সুপারিশ করার আবেদনের খবর ফাঁস হয়ে গেলে রাজনৈতিক মান মর্যাদা রক্ষায় সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতাদেও নানা ধরনের মন্তব্য করে চলেছেন। এতে বেশ বিভ্রান্তিও দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর’ আবেদন করা হয়। যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের’ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে কি-না, সেটা আমার জানা নেই। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার দাবি করেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমার সঙ্গে ফখরুল ইসলামের টেলিফোনে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন, আমি যেন প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার প্যারোলের বিষয়ে বলি।’ গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘বিএনপি বারবার সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তি কিংবা প্যারোলে মুক্তি চাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি রাজনৈতিক মামলা নয়। বিষয়টি সরকার তখনই বিবেচনা করতে পারতো, যদি সেটা রাজনৈতিক হতো।’

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর লিখিত আবেদনে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার শামীম ইস্কান্দার লিখেছেন, খালেদা জিয়ার দ্রুত অবনতিশীল স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যয় বহন করে এবং তাদের দায়িত্বে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

এ সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন করতে হবে কারাগারের জেলার বরাবর। পরে জেলার সেই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। সেখান থেকে আবেদনটি যাবে আদালতে। আর এই আবেদনে অবশ্যই বেগম খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর থাকতে হবে। এবিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এ ব্যাপারে তারা লিখিত কোনো আবেদন পাননি। তারা (বিএনপি) শুধু মুখে মুখেই বলছেন। কিন্তু লিখিত কোনো আবেদন করেননি। এটা দুর্নীতির মামলা। রাজনৈতিক মামলা হলে সরকার বিবেচনা করতে পারতো।

জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার, ম্যাডামের মুক্তির দাবিটা নিয়ে আমরা আজকে নয়, গত ২ বছর ধরেই আমরা কোর্টে যাচ্ছি, কথা বলছি, রাস্তায় নামছি, চিৎকার করছি। সারা দেশবাসী এই মুহূর্তে ম্যাডামের মুক্তির দাবি করছে। একই সঙ্গে তার (খালেদা জিয়া) পরিবারও করছে। আর কয়েকদিন আগেই তারা (পরিবার) লিখিতভাবে বিএসএমএমইউ‘র ভাইস চ্যান্সেলরকে তার এডভান্স টিট্রমেন্টের জন্য তারা চিঠি দিয়েছেন। আর বাকী প্রশ্নগুলো সব অবান্তর থাকে, এগুলো আর প্রশ্ন থাকে না।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জেল খাটার দুই বছর পুরো হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ মাস ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট