চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

বাংলাদেশিদের ফেরাতে চীনে বিশেষ ফ্লাইট পাঠাবে সরকার

করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালগুলোতে আলাদা ইউনিট খোলার নির্দেশ নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

২৮ জানুয়ারি, ২০২০ | ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

 

চীনে ছড়িয়ে পড়া নোবেল করোনাভাইরাস কোনোভাবেই যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। করোনা ভাইরাসে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। খবর পাওয়া গেছে, চীনে এই ভাইরাসে গত কয়েকদিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮০তে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া, এতে আরও ২৭৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। চীনা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গতকাল এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।

গতকালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনা ভাইরাস নিয়ে কোনো আলোচনা কিংবা প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আরও সতর্ক থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে। চীন হয়ে যারা আসছেন, তাদেরও বিশেষভাবে দেখাশোনা করতে হবে।’ মন্ত্রিপরিষদ আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, সবাইকে কেয়ারফুল থাকতে হবে। বিশেষ করে এয়ারপোর্ট এবং পোর্টে (বন্দর) স্পেশাল কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে আমাদের মধ্যে বিস্তার না করতে পারে। চীন বা হংকং থেকে যেসব প্লেন আসবে সেগুলোতে বিশেষ নজর রাখতে হবে। চীনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ হয় এমন পোর্টে বিশেষ নজর রাখতে হবে।’

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকা চীনের উহানে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের ফেরাতে প্রয়োজনে বিমানের বিশেষ ফ্লাইট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য এরই মধ্যে চীন সরকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তবে এরই মধ্যে ফিরিয়ে আনা-সংক্রান্ত সব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে ঢাকা।
শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, চীন থেকে যাদের ফিরিয়ে আনা হবে তাদের দেশে আনার পর বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় সতর্কতা জারির ব্যবস্থা নেবে সরকার। এদিকে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলের উহানে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। এরপর এ ভাইরাস চীনের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি ইতোমধ্যে বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন- এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনা কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ফ্লুর মতোই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগের ভাইরাস।

এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আপাতত দেশের আটটি বিভাগের সব জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ইউনিট খোলা হবে। পাশাপাশি দেশের ২৪টি স্থল ও নৌবন্দরে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে এ নির্দেশনার কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। দেশের সকল বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে এ নির্দেশনা দেন তিনি। একইসঙ্গে দেশের সকল স্থল ও নৌবন্দরে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষাসহ সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট