চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

সংঘর্ষের ঘটনা প্রত্যাশিত নয় : ব্রিটিশ হাইকমিশনার

ঢাকায় ইশরাকের প্রচারণায় আ. লীগ কর্মীদের হামলা

পাল্টা অভিযোগ নৌকা সমর্থকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক হ ঢাকা অফিস

২৭ জানুয়ারি, ২০২০ | ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার সময় রাজাধানীর টিকাটুলি এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। ফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা বলছেন, ইশরাকের মিছিল থেকে উসকানিমূলক শ্লোগান দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির সমর্থকেরা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে হামলা চালানো হয়। ইশরাকের কর্মী রকী, বিল্লাহ হোসেন, নাহিদ ইকবাল ফয়সাল, আরমান, মিজানুর রহমানসহ ১৪/১৫ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। সময় টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম এ ঘটনায় আহত হয়েছেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের কর্মীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পরে দুই পক্ষ একে অপরের দিকে ইটের

টুকরা নিক্ষেপ ও লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা করে। হামলার মধ্যে গুলি ছোড়ার শব্দ শোনা গেছে। সংঘর্ষের পর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে পরস্পরকে দোষারোপ করেছেন। এদিকে সংঘর্ষের পর ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন ইশরাকের গোপীবাগের বাসায় যান। এ সময় তিনি ইশরাকের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের জানান, ইশরাকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ডিকসন বলেন, নির্বাচনে কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা প্রত্যাশিত নয়। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
জানা যায়, গতকাল রবিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর টিকাটুলি মোড় থেকে ইশরাক হোসেন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের গুলিতে প্রবেশের সময় কলেজের মূল ফটকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন রাজধানীর মতিঝিল ও টিকাটুলীতে নির্বাচনী প্রচার শেষে গোপীবাগের বাসায় ফিরছিলেন। ইশরাকের মিছিল যখন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যাডমিন্টন মার্কার রোকন উদ্দিন আহমেদ এবং সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থী লাভলী চৌধুরীর কর্মীরা উপস্থিত হন ওই মোড়ে। দুই পক্ষই শ্লোগান-পাল্টা শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময়ে হ্যান্ড মাইকেও ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের শ্লোগান দিতে থাকেন কর্মীরা। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। দুই পক্ষের কর্মীরা এ সময় রাস্তার পাশে থাকা চেয়ারও ছুড়ে মারেন। এর মধ্যে অন্তত ১০টি গুলির শব্দও শোনা গেছে। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে শুরু হয়ে ১টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ঢিল ছোড়াছুড়ি চলে। কয়েকটি গাড়ি এ সময় ভাঙচুরের শিকার হয়। গোপীবাগে ইশরাকের বাসার মোড়ে পুলিশ দ্রুত অবস্থান নেওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে টিটাটুলির এ ঘটনার পর বিকেলে আওয়ামী লীগের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, বিএনপির প্রচারণার কোনো শিডিউল প্রোগ্রাম ছিল না। এ ধরনের প্রোগ্রামের কথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আগে জানানো হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্যে স্পষ্ট যে, এই হামলার ঘটনা তাদের সুপরিকল্পিত। এটি নির্বাচন বানচালের একটি ইঙ্গিত।

রাজধানীর টিকাটুলি এলাকার অভয়দাস লেনে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পে হামলার ঘটনা তুলে ধরে আমির হোসেন আমু বলেন, ‘তারা (বিএনপি) গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসছে, এই ধারা সুষ্ঠুভাবে চলবে- এটাই আমাদের আকাংক্ষা ছিল। কিন্তু নির্বাচনি প্রচারণায় তারা বলা শুরু করল, নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না, অবাধ হবে না, নিরপেক্ষ হবে না, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হতে পারে; নিজেরা চ্যালেঞ্জ দেওয়ার ঘোষণা দিল, তারা শেষ পর্যন্ত দেখে নেবে। এই সমস্ত কথাবার্তার মধ্য দিয়েই আমরা আঁচ করতে পারছিলাম, তারা আসলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচন বানচাল করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদিও দুয়েকদিন আগে দুয়েক জায়গায় মারপিট হয়েছে মাত্র। কিন্তু আজকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়েছে। এবং আমাদের প্রায় ৫০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। অনেকেই অল্প আহত। তাদের কয়েকজন আপনাদের সামনে উপস্থিত আছে এবং কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’
হামলার ঘটনায় যারা সতিক্যারের দোষী তাদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান আমু। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থতি যাতে স্বাভাবিক থাকে, মানুষ যাতে সঠিকভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক ও সজাগ থেকে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
হামলার ঘটনার দলীয়ভাবে কোনো মামলা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আমু বলেন, ‘আমাদের যারা আহত হয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে মামলা থানায় করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিবাদ জানানো হবে। তারপর কমিশন যেটা ভালো মনে করে সেটা করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক :

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের গণসংযোগে হামলার পর রোববার দুপুরে নিজ বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইশরাক। এতে তিনি নেতাকর্মীদের বিন্দুমাত্র বিচলিত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। ইশরাক বলেন, এ ধরনের হামলার ঘটনা ন্যক্কারজনক। ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এটি দেখে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য এ হামলা করেছে সরকার। তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা শান্ত থাকবেন, বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। শুধু নির্বাচনকে বানচাল করার, ভয়-ভীতি দেখানোর, ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানোর একটা অপচেষ্টা। এতে জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। ভোটারদের আহ্বান জানাবো, ১ ফেব্রুয়ারি আপনারা নির্ভয়ে কেন্দ্রে যাবেন, এসব ঘটনায় আপনারা বিন্দুমাত্র বিচলিত হবেন না। হামলার ঘটনা সম্পর্কে ইশরাক বলেন, এতো কর্মী আহত হয়েছেন, সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন- অবশ্যই এ ঘটনায় মামলা করা হবে।

ইশরাকের বাসায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার :
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের বাসায় যান ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। ইশরাকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ডিকসন বলেন, নির্বাচনে কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা প্রত্যাশিত নয়। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এ সময় ইশরাকের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।
রবার্ট চ্যাটার্টন জানান, তিনি সব মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করছেন। তারই অংশ হিসেবে বিএনপির প্রার্থী ইশরাকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া সবারই কাম্য। আশা করবো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করি। রবার্ট আরও বলেন, নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট